নিগ্রহ: স্থানীয় বাসিন্দাদের হাতে আক্রান্ত চিকিৎসক অমিতাভ মণ্ডল। মঙ্গলবার গার্ডেনরিচে। ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী
হাসপাতালে ভুল চিকিৎসার অভিযোগ তুলে ডাক্তারদের নিগ্রহ করার প্রবণতা এ রাজ্যে বারবার দেখা গিয়েছে। এ বার চিকিৎসককে বাড়িতে ডেকে এনে মারধর ও আটক করে রাখার অভিযোগও উঠল খাস কলকাতায়।
মঙ্গলবার সকালে গার্ডেনরিচ থানা এলাকার ফতেপুর ভিলেজ রোডের ঘটনা। প্রায় তিন ঘণ্টা আটক থাকার পর চিকিৎসক অমিতাভ মণ্ডলকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায় পুলিশ।
লালবাজার জানিয়েছে, ঘটনার সূত্রপাত সোমবার বিকেলে। ওই দিন খেলার সময় বছর আটের শুভম তিওয়ারি বাঁ কুঁচকিতে চোট পায়। সন্ধ্যায় শুভমকে স্থানীয় চিকিৎসক অমিতাভবাবুর চেম্বারে নিয়ে যান বাবা অজয় তিওয়ারি।
আরও পড়ুন: চিকিৎসক নিগ্রহের শাস্তি হবে কবে
অমিতাভর চেম্বার রবীন্দ্রনগরের নিউ মধ্য রামদাসহাটিতে নিজের বাড়িতেই। অজয়বাবুর দাবি, চিকিৎসক চারটি ওষুধ দেন শুভমকে খাওয়ানোর জন্য। বাড়িতে এসে সেই ওষুধ খাওয়ানোও হয় প্রথম শ্রেণির ওই ছাত্রকে। পরিবারের অভিযোগ, গভীর রাতে শুভম ঘুম ভেঙে কাঁদতে শুরু করে। জানায়, শরীরের ভিতর জ্বালা করছে। শিশুর মা সঙ্গীতা জানান, যেখানে জ্বালা করছিল, সেখানে বরফ দেওয়া হয়। তাতেও উপশম না হওয়াতে মঙ্গলবার ভোরে শুভমকে নিয়ে যাওয়া হয় শরৎ বসু রোডের বেসরকারি হাসপাতালে। শুভমের পিসি শেফালি ঘোষের দাবি, হাসপাতালে যাওয়ার পথেই গাড়িতে নেতিয়ে পড়ে শিশুটি। হাসপাতালের চিকিৎসকরা তাঁকে মৃত বলে জানান।
পুলিশ সূত্রের খবর, শিশুটিকে বাড়িতে নিয়ে আসেন তার পরিবারের সদস্যরা। মৃত্যুর শংসাপত্রের জন্য প্রথমে তাঁদের তরফে ফোনে যোগাযোগ করা হয় চিকিৎসক অমিতাভবাবুর সঙ্গে। কিন্তু তিনি ফোন না ধরায় অজয়বাবু তাঁর আত্মীয়দের সঙ্গে নিয়ে যান চিকিৎসকের বাড়িতে। সেখানে চিকিৎসককে ওই শিশুর মৃত্যুর শংসাপত্রের জন্য বাড়িতে যেতে বলেন তাঁরা। প্রথমে রাজি না হলেও পরে অমিতাভবাবু শুভমদের বাড়িতে আসেন। এর মধ্যেই পরিবারের লোকজন অভিযোগ করতে থাকেন, অমিতাভবাবুর ভুল চিকিৎসাতেই মৃত্যু হয়েছে শুভমের। শিশুটির খুড়তুতো দাদা অভিষেক তিওয়ারি জানান, শংসাপত্রে মৃত্যুর কারণ হিসেবে সেপটিক আরথ্রাইটিস
লেখেন অমিতাভ মণ্ডল। এর পরেই উত্তেজনা চরমে ওঠে। অমিতাভবাবুর অভিযোগ, তাঁকে আটকে রেখে নিগ্রহ করা হয়। মারধরও করা হয়েছে বলে তাঁর দাবি। তবে মারধরের কথা অস্বীকার করেছে পরিবার। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে
শিশুটির দেহ পাঠায় এসএসকেএম হাসপাতালে। এদিনই শিশুটির ময়নাতদন্ত হয়েছে।
এ দিন ঘটনাস্থলে পৌঁছে দেখা যায়, ঘরের ভিতরে বিছানায় শুয়ে ডুকরে ডুকরে কাঁদছেন শুভমের মা। তাঁকে সান্ত্বনা দিচ্ছেন প্রতিবেশী এবং আত্মীয়রা। ঘরের ভিতরেই এক দিকে দাঁড়িয়ে রয়েছেন অভিযুক্ত চিকিৎসক। তাঁকে ঘিরে রেখেছেন পুলিশের তিন কর্মী। বাইরে প্রবল উত্তেজনা। চিকিৎসককে বাইরে এনে তাঁদের হাতে তুলে দেওয়ার জন্য চিৎকার করছেন পরিবারের উত্তেজিত সদস্য থেকে প্রতিবেশীরা। চিকিৎসক জানান, তিনি আলিপুরের একটি বেসরকারি হাসপাতালের আরএমও এবং বাড়িতে গত ১৬ বছর ধরে প্র্যাকটিস করছেন। শুভমকে তিনি ব্যথা, অম্বল এবং অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ দিয়েছিলেন। শুভমের জেঠু এবং খুড়তুতো দাদাদের সঙ্গে কথা বলে পুলিশ তাঁদের মধ্যস্থতায় চিকিৎসককে নিয়ে যায় গার্ডেনরিচ থানাতে। কিন্তু বাড়ি থেকে পুলিশের গাড়িতে তোলা পর্যন্ত কিন্তু উত্তেজিত জনতার হাতে মার খেতে হয় অমিতাভবাবুকে। পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে পুলিশ। পরে অমিতাভবাবুকে আটক করেছে পুলিশ।