CPM

বিধানসভার ভাগে অনড় কংগ্রেস, ক্ষোভ সিপিএমে

রাজস্থান, তেলঙ্গানার মতো রাজ্যে সিপিএমের কিছু সাংগঠনিক শক্তি আছে। এলাকা বেছে নিয়েই অল্প কিছু আসনে সার্বিক বিজেপি-বিরোধী লড়াইয়ে শামিল হতে চায় তারা।

Advertisement

সন্দীপন চক্রবর্তী

কলকাতা শেষ আপডেট: ৩০ অক্টোবর ২০২৩ ০৬:৪৮
Share:

গাজ়ায় ‘গণহত্যা’ বন্ধের দাবিতে সিপিএমের অবস্থান-বিক্ষোভ। দিল্লিতে এ কে গোপালন ভবনের সামনে। —নিজস্ব চিত্র।

সর্বভারতীয় স্তরে ‘ইন্ডিয়া’ জোট থাকলেও লোকসভা ভোটে রাজ্যের নির্দিষ্ট পরিস্থিতির নিরিখেই নির্বাচনী সমঝোতা হবে বলে আগেই অবস্থান নিয়েছে সিপিএম। লোকসভা ভোটের আগে পাঁচ রাজ্যের গুরুত্বপূর্ণ বিধানসভা নির্বাচনেও ‘ইন্ডিয়া’ জোটের মধ্যে সমস্যা দানা বাঁধছে। সমাজবাদী পার্টির পরে ভোটমুখী রাজ্যগুলিতে কংগ্রেসের ভূমিকায় ক্ষুব্ধ সিপিএমও। দলের কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকে উঠে এল সিপিএমের রাজ্য নেতৃত্বের অসম্তোষের কথা। কংগ্রেসের তরফে ‘নমনীয়তা’র জন্য শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত অপেক্ষা করে সাড়া না পেলে একাই লড়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে রেখেছে সিপিএম।

Advertisement

রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশ, ছত্তীসগঢ়, তেলঙ্গানা ও মিজোরামে বিধানসভার ভোট নভেম্বরেই। পাঁচ রাজ্যের আসন্ন এই নির্বাচন নিয়ে দিল্লিতে সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকে আলোচনা হয়েছে। তার আগে এই বিষয়ে কথা হয়েছে পলিটব্যুরোতেও। দলীয় সূত্রের খবর, আসন সমঝোতার ক্ষেত্রে কংগ্রেসের মনোভাব নিয়ে প্রশ্ন তুলে বৈঠকে সরব হয়েছেন সিপিএমের একাধিক নেতা। তাঁদের বক্তব্য, যে রাজ্যে কংগ্রেস শক্তিশালী এবং তারাই বিজেপির প্রধান প্রতিপক্ষ, সেখানে অ-বিজেপি অন্য দলের সঙ্গে সহযোগিতার মনোভাব কংগ্রেসের দিক থেকে দেখা যাচ্ছে না। রাজস্থান, তেলঙ্গানা এবং মধ্যপ্রদেশে কয়েকটি আসন কংগ্রেসের সঙ্গে সমঝোতার ভিত্তিতে লড়তে আগ্রহী সিপিএম। কিন্তু কংগ্রেসের রাজ্য নেতৃত্ব আলোচনা এগোতেই চাইছেন না বলে সিপিএমের বক্তব্য।

রাজস্থান, তেলঙ্গানার মতো রাজ্যে সিপিএমের কিছু সাংগঠনিক শক্তি আছে। এলাকা বেছে নিয়েই অল্প কিছু আসনে সার্বিক বিজেপি-বিরোধী লড়াইয়ে শামিল হতে চায় তারা। সিপিএম নেতৃত্বের বক্তব্য, গত বারও রাজস্থানে শেষ পর্যন্ত সিপিএমকে আসন ছাড়তে রাজি হননি অশোক গহলৌতেরা। আলাদা লড়েই বিধায়ক পেয়েছিল সিপিএম। সূত্রের খবর, এর আগে মহারাষ্ট্র, কর্নাটকেও যে একই অভিজ্ঞতা হয়েছিল, সেই কথাও কেন্দ্রীয় কমিটিতে তুলেছেন দলের কিছু নেতা। এই ভাবে চললে লোকসভা ভোটে কিছু রাজ্যে যে বিজেপি-বিরোধী বৃহত্তর সমঝোতার সুযোগ আছে, তারই বা কী হবে, সেই প্রশ্নও উঠেছে বৈঠকে।

Advertisement

সিপিএমের পলিটব্যুরোর এক সদস্যের কথায়, ‘‘অযৌক্তিক কোনও দাবি আমরা করছি না। কয়েকটি রাজ্যের কিছু আসনে যেখানে আমাদের কিছু শক্তি আছে, সেখানে বিজেপি-বিরোধী ভোটের বিভাজন এড়ানোর জন্যই কংগ্রেসের সঙ্গে সমঝোতার কথা বলা হচ্ছে। কিন্তু তাতে ইতিবাচক কোনও সাড়া মিলছে না। এই পরিস্থিতিই শেষ পর্যন্ত বজায় থাকলে তখন কিছু আসনে আমাদের মতো লড়তে হবে।’’ সূত্রের খবর, এআইসিসি-র শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে কথা বলে এক বার শেষ চেষ্টা করে দেখতে পারেন সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি।

এরই পাশাপাশি ‘ইন্ডিয়া’ জোটের সমন্বয় কমিটিতে প্রতিনিধি না রাখার যে সিদ্ধান্ত সিপিএমের পলিটব্যুরো নিয়েছিল, তাতেই সিলমোহর পড়েছে এ বারের কেন্দ্রীয় কমিটিতে। তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে সমন্বয় কমিটিতে একত্রে থাকা নিয়ে আপত্তি তুলেছিলেন বাংলার সিপিএম নেতারা। কেরল সিপিএম একই আপত্তি তুলেছিল কংগ্রেসের কে সি বেনুগোপালকে নিয়ে। পরে কেরল সিপিএমের রাজ্য কমিটিতে বেশ কিছু ভিন্ন স্বর উঠে এলেও দলের কেন্দ্রীয় কমিটি ‘ইন্ডিয়া’র সমন্বয় কমিটিতে না থাকার পক্ষেই রায় দিয়েছে।

তিন দিনের কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠক শেষে রবিবার দিল্লিতে দলের সদর দফতর এ কে গোপালন ভবনের সামনে প্যালেস্টাইন-প্রশ্নে গণ-অবস্থানে মার্কিন মদতে গাজায় ইজ়রায়েলি বাহিনীর ‘গণহত্যাকারী আগ্রাসন’ বন্ধ করার দাবিতে সরব হয়েছেন সিপিএমের নেতারা। সাধারণ সম্পাদক ইয়েচুরি, কেরলের মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন, পলিটব্যুরো সদস্য বৃন্দা কারাট, বাংলায় দলের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম, ত্রিপুরার প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার প্রমুখ ইজ়রায়েল-প্যালেস্টাইন প্রশ্নে রাষ্ট্রপুঞ্জের প্রস্তাবকে সমর্থন জানিয়ে গাজ়ায় হামলা বন্ধ করার দাবি তুলেছেন। অবস্থানে শামিল হয়েছিলেন দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্যেরা।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement