বেতন না পেলেও এখনও রোজ দফতরে যান জগন্নাথ মাহাতো। ছবি: নিজস্ব চিত্র
খোদ মুখ্যমন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছিলেন তাঁকেচাকরিতে নিয়োগের। প্রায় তিন বছরের প্রচেষ্টায় একটা ঠিকে কাজও জুটেছিল ঝাড়গ্রামের জগন্নাথ মাহাতোর। কিন্তু সেই চাকরি নিয়েও বেজায় বিপদে ১০০ শতাংশ প্রতিবন্ধী জগন্নাথ। জেলাশাসকের দফতরে ঠিকে কাজের জন্য বরাদ্দ বেতনও তিনি পাচ্ছেন না,চলতি বছরের মার্চ থেকে।
ঘটনার সূত্রপাত ২০১২ সালের ১২ জানুয়ারি। ঝাড়গ্রামে জঙ্গলমহল উৎসবের উদ্ধোধন করতে গিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সভার শেষে রাস্তার ধারে এক প্রতিবন্ধী যুবক তাঁর দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চেষ্টা করছেন দেখে আচমকাই থেমে যায় মুখ্যমন্ত্রীর গাড়ি। তিনি গাড়ি থেকে নেমে ওই যুবকের সঙ্গে কথা বলে তাঁর চাকরির আর্জি শোনেন। ঘটনাস্থলেই তিনি পাশে থাকা জেলাশাসক, পুলিশ সুপার-সহ আমলাদের নির্দেশ দেন ওই যুবকের চাকরির ব্যবস্থা করার জন্য।
বছর তিরিশের ওই যুবকই ঝাড়গ্রামের গাড়রো গ্রামের বাসিন্দা জগন্নাথ মাহাতো। শারীরিক সমস্ত প্রতিবন্ধকতাকে জয় করে তিনি ২০০৯ সালে গোপীবল্লভপুর সুবর্ণরেখা মহাবিদ্যালয় থেকে ভূগোলে সাম্মানিক নিয়ে স্নাতক হন। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ পেয়ে পরের দিনই জগন্নাথের বাড়িতে হাজির হয়েছিলেন পুলিশ সুপার। তাঁর চাকরির আবেদনপত্র জমা পড়ে।
মালদহ ছেড়ে এ বার করিডর সরছে দিনাজপুরে! জালে ৩, উদ্ধার সাড়ে ৬ লাখের জাল নোট
যদিও চাকরিটা পেতে তাঁকে অপেক্ষা করতে হয় প্রায় সাড়ে তিন বছর। বুধবার জগন্নাথ বলেন,‘‘জেলাশাসক থেকে জেলার সমস্ত প্রশাসনিক কর্তাদের দফতরে দফতরে ঘুরে, শেষে ২০১৫ সালের জুন মাসের ৯ তারিখ মহকুমা শাসকের দফতরের রিসিভিং সেকশনে কাজ পাই। নাহ। রাজ্য সরকারের কর্মী হিসাবে নয়। রাজ্য সরকার নির্ধারিত দিন মজুরির বিনিময়ে। মাস গেলে সাড়ে ৮ হাজার থেকে ৯ হাজার টাকা বেতন।”জগন্নাথের দাবি, সেই সময় তাঁকে আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল যে তাঁকে খুব তাড়াতাড়ি পাকা চাকরি দেওয়া হবে। জগন্নাথ এ দিন ফোনে তিনি বলেন,‘‘আমার কাছে নবান্নে জেলাশাসকের ফরোয়ার্ড করা সমস্ত নথিও রয়েছে যেখানে আমার চারকির জন্য সুপারিশ করেছেন জেলাশাসক।”
জগন্নাথ সেই আশাতেই ২০১৫ সাল থেকে চাকরি করছেন। কিন্তু গোল বাধলো এ বছর মার্চ মাস থেকে। তিনি বলেন,‘‘এর মধ্যে আমাকে মহকুমাশাসকের দফতর থেকে বদলি করা হয় জেলাশাসকের দফতরে। কিন্তু মার্চ মাস থেকে হঠাৎই আমার বেতন বন্ধ হয়ে যায়। অফিসারদের কাছে গেলে তাঁরাও কোনও সুরাহা করতে পারেননি। তাঁরা আমাকে জেলাশাসকের কাছে যেতে বলেন।” অভিযোগ, জেলাশাসকের সঙ্গে তাঁকে দেখা করতেই দিচ্ছেন না আপ্ত সহায়ক শ্যামল দাস। জগন্নাথ বলেন,‘‘শ্যামল দাস প্রচণ্ড দুর্ব্যবহার করেন আমার সঙ্গে, যখনই আমি জেলাশাসকের সঙ্গে দেখা করার চেষ্টা করেছি।” সমস্ত ঘটনা জানিয়ে তিনি চিঠিও দিয়েছেন জেলাশাসককে। কিন্তু এখনও তাঁর কাছ থেকে কোনও উত্তর পাননি।
ঝাড়গ্রামের জেলাশাসক আয়েশা রানির সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি তাঁর প্রতিক্রিয়া জানার জন্য। তবে তাঁর দফতর সূত্রে খবর, মহকুমাশাসকের দফতরে যে পদে তিনি ছিলেন সেই জায়গায় অন্য ব্যক্তিকে নিয়োগ করা হয়েছে। কিন্তু জেলাশাসকের দফতরে যেখানে তিনি এখন কাজ করছেন সেখানে কাজ করার জন্য টাকা বরাদ্দ করেনি সরকার। তাই বেতন দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। জেলা প্রশাসনের এক কর্তা বলেন, ‘‘জগন্নাথ মাহাতো রাজ্য মহিলা, শিশু ও সমাজ কল্যাণ মন্ত্রকের কন্যাশ্রী প্রকল্পের জন্য বরাদ্দকৃত অর্থ থেকে ঠিকা কর্মী হিসাবে বেতন পেতেন। সেই বরাদ্দ বন্ধ হওয়ায় তাঁর বেতন হচ্ছে না।” কিন্তু কেন সেই বরাদ্দ বন্ধ হল তার কোনও স্পষ্ট জবাব মেলেনি জেলাশাসকের দফতর থেকে।
কিন্তু বেতন এবং বকেয়া বেতন পাওয়ার আশায় এখনও প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ে দফতরে পৌঁছন জগন্নাথ। নির্ধারিত সময় কাজ করেন। তাঁর এখনও আশা মুখ্যমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি বিফলে যাবে না। চাকরি তিনি পাবেনই। তবে তিনি এটাও স্বীকার করেন, এভাবে চললে, আর্থিক অনটনে আত্মহত্যা ছাড়া আর কোনও পথ খোলা থাকবে না তাঁর সামনে।