কেন সুর বদল? কী বলছেন দিলীপ। ফাইল চিত্র।
সিবিআইকে বিশ্বাস করে ন্যায় পাননি— সপ্তাহের শুরুতে এমন অভিযোগ করেছিলেন বিজেপি নেতা দিলীপ ঘোষ। তবে সপ্তাহান্তে সেই দিলীপই পুরনো বক্তব্য থেকে ঘুরে গেলেন। বললেন, ‘‘সিবিআই-ই তো এক মাত্র ভরসা, তা ছাড়া আর উপায় কী?’’ প্রথম মন্তব্যটি দিলীপ করেছিলেন গত সোমবার। দ্বিতীয়টি শুক্রবার সকালের। কিন্তু সোম থেকে শুক্র কী এমন হল, যে সিবিআই নিয়ে নিজের মতামত এতখানি বদলে ফেললেন বিজেপির সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি? দিলীপ এর একটি জবাব দিয়েছেন। তবে রাজনৈতিক মহল মনে করছে, দলের ‘উপরতলার চাপ’-এই সুর বদল দিলীপের।
গত সপ্তাহে দিলীপ সিবিআই নিয়ে মন্তব্য করার পরই বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব রাজ্যের কাছে বিস্তারিত জানতে চান, দিলীপ কোন প্রেক্ষিতে ঠিক কী বলেছেন? এর পরে দিলীপের সঙ্গে একান্তে বৈঠক করেন রাজ্য বিজেপির সহ-পর্যবেক্ষক অমিত মালবীয়। বিজেপি সূত্রে জানা যায়, সেই বৈঠকে দিলীপের করা মন্তব্যে যে দল ‘অস্বস্তি’তে তা স্পষ্ট করে দেন মালবীয়। এর পরই সুর একটু একটু করে নরম হতে থাকে দিলীপের। সার্বিক ভাবে সিবিআইয়ের উপর অনাস্থার রাস্তা থেকে সরে ভোট পরবর্তী সন্ত্রাসের প্রসঙ্গ টেনে আনেন। এ বার সরাসরি সিবিআইয়ে ভরসা রাখার কথা বললেন বিজেপি নেতা। শুক্রবার প্রাতর্ভ্রমণে বেরিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে দিলীপকে বলতে শোনা যায়, ‘‘কোর্টও সিবিআইয়ের উপর আস্থা রেখেছে, এ ছাড়া দ্বিতীয় কোনও রাস্তা তো নেই। যে ভাবে কাজ এগোচ্ছে, আমার মনে হচ্ছে যে দুর্নীতির জন্য আমরা চিন্তিত ছিলাম তার তো কিছু সমাধান হবেই।’’
তবে ভাঙলেও মচকাননি দিলীপ। তাঁর পুরনো মন্তব্য থেকে পুরোপুরি সরে এসেও জানিয়েছেন, ‘‘ভরসা যখন টেকে না, তখনই প্রশ্ন ওঠে। ভোটের পরে আমাদের দলের নেতা-কর্মীদের উপর যে অত্যাচার এবং হিংসার ঘটনা ঘটেছে, তার কোনও সমাধান হয়নি, সে জন্যই প্রশ্ন করেছিলাম।’’
উল্লেখ্য দিলীপের বলা ‘সিবিআইয়ের সেটিং তত্ত্ব’ নিয়ে জোর আলোচনা শুরু হয়েছিল রাজনৈতিক মহলে। গত রবিবার কেন্দ্রীয় সরকারের একটি অনুষ্ঠানের মঞ্চে দিলীপ বলেছিলেন, ‘‘সিবিআইয়ের একটি অংশের সঙ্গে ‘সেটিং’ হয়ে গিয়েছিল তৃণমূল নেতাদের। সেটা বুঝতে পেরেই এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)-কে পাঠিয়েছে কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রক।’’ দিলীপের সেই বক্তব্য নিয়ে জলঘোলা শুরু হয় বিজেপির অন্দরেই কারণ যে সিবিআইয়ের সমালোচনা করেছেন তিনি, তা স্বয়ং দেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নিয়ন্ত্রণাধীন। আর ইডি অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামনের মন্ত্রকের অধীন। দিলীপকে সে ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে দিলীপ সেই মন্তব্য থেকে পিছিয়ে না এসে আরও বিশদে ব্যাখ্যা করে বলেছিলেন, ‘‘সিবিআই কার, তাতে আমার কিছু এসে-যায় না। সিবিআই দেশের একটা সংস্থা। তাদের বিশ্বাস করেছিলাম। কিন্তু ন্যায় পাইনি। ইডি প্রমাণ করেছে তারাই সবচেয়ে বিশ্বস্ত এজেন্সি।’’ তার চার দিনের মধ্যেই অবশ্য সুর বদলালেন বিজেপির সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি। দিলীপের এই মন্তব্য প্রসঙ্গে তৃণমূল নেতা এবং সাংসদ সৌগত রায়কে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘‘সিবিআই যে মোদীর অধীন, তা উনি জানতেন না। সেটা জানতে পেরেছেন। তা ছাড়া পার্টি থেকে ওঁকে ধমকে দিয়েছে, সেটাই মেকআপ করার চেষ্টা করছেন।’’