দিলীপ ঘোষ। ফাইল চিত্র।
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলনকারী ছাত্রীদের সম্পর্কে কদর্য ভাষায় চরিত্রহননের রাজনীতি শুরু করল বিজেপি। যার হোতা দলের রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ স্বয়ং। প্রতিক্রিয়ায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্য, ‘‘শুধু একটি শব্দ বলব, ছিঃ!’’
বৃহস্পতিবার কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়কে ঘিরে সেখানে বিক্ষোভ চলার সময় ছাত্রীরা অনেকেই রীতিমতো প্রতিবাদী ভূমিকা নিয়েছিলেন। তাঁদের সঙ্গে এক সময় বাবুলের কার্যত ধস্তাধস্তিও হয়।
তারই সূত্র ধরে শুক্রবার দিলীপবাবু বলেন, ‘‘ছাত্রীরা যে ভাবে বাবুলকে জড়িয়ে ধরে আক্রমণ করেছে দেখলাম, তাতে ওই ছাত্রীদের শ্লীলতা নিয়েই প্রশ্ন তুলতে ইচ্ছে করে।’’ এর পরেই তাঁর মন্তব্য, ‘‘বাবুলের চরিত্র আমরা জানি। কিন্তু ওঁরা (ছাত্রীরা) কোনও ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত কি না জানতে চাইছি।’’
কুরুচিকর মন্তব্য করার বহু নজির দিলীপবাবুর আছে। রাজনীতির মঞ্চে মমতা থেকে শুরু করে কোনও বিরোধীই তাঁর কদর্য ভাষার নিশানা থেকে বাদ যান না। যাদবপুরে ‘হোক কলরব’ আন্দোলনের সময়েও তিনি আন্দোলনকারী ছাত্রীদের ‘বেহায়া’ বলেছিলেন। এ বার আরও এক ধাপ এগিয়ে তিনি সেখানকার ছাত্রীদের চরিত্রে কালি ছেটালেন।
এর বিরুদ্ধে মুখ্যমন্ত্রী মমতা তো বটেই সরব হয়েছেন অন্যরাও। শুধু বিজেপির নেত্রীরা দিলীপবাবুকে ‘আড়াল’ করার অজুহাত খোঁজার চেষ্টা করেছেন। তিনি যখন ওই কথা বলছেন, তখন পাশেই বসে ছিলেন অগ্নিমিত্রা পাল। পরে এ বিষয়ে তাঁর প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘‘মনে হয় না দিলীপবাবু এমন কিছু বলেছেন।’’ বিজেপি সাংসদ এবং মহিলা মোর্চার সভানেত্রী লকেট চট্টোপাধ্যায় দিলীপবাবুর বক্তব্যের বিষয়ে শুনে ‘মিটিংয়ে ব্যস্ত আছি’ বলে ফোন ছেড়ে দেন। আর তাঁকে ফোনে পাওয়া যায়নি।
তৃণমূল নেত্রী ও রাজ্যের মন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘এমন অশালীন মন্তব্য কোনও রাজনৈতিক দলের সভাপতি করেছেন, এ কথা শুনেই লজ্জা করছে। এই মন্তব্যেই ওদের মানসিকতা স্পষ্ট।’’
প্রদেশ কংগ্রেসের মহিলা শাখার পর্যবেক্ষক কৃষ্ণা দেবনাথের বক্তব্য, ‘‘দিলীপবাবুর নিজেরই চরিত্রের ঠিক নেই। কথারও কোনও বাঁধন নেই।’’ সিপিএমের গণতান্ত্রিক মহিলা সমিতির রাজ্য সম্পাদক কনীনিকা বসু ঘোষ বলেন, ‘‘যে দল বেটি বাঁচাও, বেটি পড়াও প্রকল্পের কথা বলে, তাদের নেতার এই মন্তব্যে বোঝা যায়, কোনটা মুখ, আর কোনটা মুখোশ।’’
কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয় অবশ্য দিলীপবাবুর শব্দচয়ণের সঙ্গে সহমত পোষণ করেননি। তাঁর দাবি, ‘উত্তেজিত’ হয়েই এ কথা বলেছেন দিলীপবাবু। তাঁর কথায়, ‘‘ব্যবসা শব্দটির সঙ্গে এক মত নই। ওঁর কড়া ভাষায় কথা বলার অভ্যাস আছে। যা অনেক সময় বিতর্কিত বলে মনে হয়। তবে বৃহস্পতিবার যাদবপুরের ছাত্রীদের যে চেহারা দেখেছি এবং ভাষা শুনেছি, তাতে বাঙালি হিসেবে আমি লজ্জিত।’’
দিলীপবাবু এ দিন আরও বলেন, ‘‘রাজ্যপাল সময় মতো না পৌঁছলে বাবুলের প্রাণ সংশয় হতো। যারা এ কাজ করেছে, তাদের ঠিকুজি কুষ্টি বার করে ফেলেছি। কাউকে ছাড়া হবে না। ওরা যে ভাষা বোঝে, সে ভাষাতেই ওদের শিক্ষা দেওয়া হবে। হাত ভেঙে দেওয়া হবে। পাকিস্তানে গিয়ে যে ভাবে সার্জিক্যাল স্ট্রাইক করা হয়েছিল, যাদবপুরে ঢুকে দেশদ্রোহী ছাত্রদের ঘাঁটিও সে ভাবেই ধ্বংস করা হবে।’’