বিজেপির সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি দিলীপ ঘোষ ফাইল চিত্র।
এত দিন তাঁর সঙ্গে কথা হচ্ছিল ফোনে এবং ভার্চুয়াল বৈঠকে। রবিবার কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী শান্তনু ঠাকুরের গাইঘাটার বাড়িতে গিয়ে বৈঠক করলেন রাজ্য বিজেপির প্রাক্তন সাধারণ সম্পাদক সায়ন্তন বসু, প্রাক্তন সহ সভাপতি জয়প্রকাশ মজুমদার ও রীতেশ তিওয়ারি, আর এক নেতা সমীরণ সাহা প্রমুখ। বিজেপি সূত্রের খবর, দলের রাজ্য পদাধিকারীমণ্ডলী এবং জেলা সভাপতিদের তালিকায় পরিবর্তন চান ওই নেতারা। আর তাৎপর্যপূর্ণ হল, বিজেপির সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি দিলীপ ঘোষ ইতিমধ্যেই মন্তব্য করেছেন, ‘‘নতুন-পুরনো মিলিয়েই দল চলে। এখন একটু বেশি নতুন নেওয়া হয়েছে। পুরনোদের কোনও দায়িত্ব ঘোষণা হয়নি। সেটাই সমস্যা।’’
শান্তনুর বাড়িতে এ দিন বৈঠকের পরে বিজেপি নেতারা কেউ মুখ খুলতে চাননি। শুধু শান্তনু বিষয়টিকে রাজ্য নেতাদের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ বলে দাবি করেছেন। তাঁর কথায়, ‘‘দলের রাজ্য নেতৃত্ব আমার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে এসেছিলেন। কারণ আমি মন্ত্রী হওয়ার পরে তাঁদের সঙ্গে দেখা হয়নি।’’ তবে বিজেপি সূত্রের খবর, দলের রাজ্য পদাধিকারীমণ্ডলী এবং জেলা সভাপতিদের তালিকায় পরিবর্তনের দাবি কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের কাছে পৌঁছে দেওয়ার বিষয়ে ওই বৈঠকে আলোচনা হয়েছে।
আগে ঠিক ছিল, বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জগৎপ্রকাশ নড্ডার সঙ্গে দেখা করতে সোমবার দিল্লি যাবেন শান্তনু। কিন্তু এ দিন তিনি জানান, করোনা পরিস্থিতির জন্য সোমবার তাঁর দিল্লি যাওয়া অনিশ্চিত।
শান্তনুদের এ দিনের বৈঠক নিয়ে রাজ্য বিজেপির মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্যের মন্তব্য, ‘‘ওঁরা বৈঠক করেছেন কি না, আমার জানা নেই। তবে করে থাকলে সব ভুল বোঝাবুঝি মেটানোর জন্যই করেছেন।’’
শান্তনু-সহ বিজেপি নেতাদের একাংশের নিজেদের মধ্যেকার এই সব বৈঠকে কোনও অন্যায় আছে বলে মনে করেন না দিলীপ। তিনি বলেন, ‘‘আমি জানি না, কে কার সঙ্গে আছেন। যাঁরা কমিটি থেকে বাদ পড়েছেন, তাঁরা নিজেরা বসছেন। তাঁরা কী করবেন, তাঁদের ভবিষ্যৎ কী হবে, তা নিয়ে আলোচনা করছেন। করতেই পারেন। এর মধ্যে কোনও দোষ আছে বলে আমি মনে করি না।’’ দিলীপের আরও মন্তব্য, ‘‘তাঁরা এত বছর কাজ করেছেন। দল বাড়িয়েছেন। চিন্তা তো আছেই।’’
বিজেপির রাজ্য পদাধিকারীমণ্ডলী এবং জেলা সভাপতিদের মধ্যে মতুয়া প্রতিনিধি না থাকায় শান্তনু এবং দলের পাঁচ মতুয়া বিধায়ক সুব্রত ঠাকুর, অম্বিকা রায়, অসীম সরকার, অশোক কীর্তনীয়া এবং মুকুটমণি অধিকারীর ক্ষোভ প্রকাশ্যে এসেছে কয়েক দিন আগেই। ওই পাঁচ বিধায়ক এবং পরে শান্তনু দলের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপগুলি ছেড়ে বেরিয়ে যান। বিজেপির সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন) বি এল সন্তোষের সঙ্গে বৈঠকের পরে বিধায়করা হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে ফিরে এলেও তাঁদের ক্ষোভের কারণ মেটেনি। গত মঙ্গলবার শান্তনু নিজের বাড়িতে মতুয়া বিধায়ক এবং অল ইন্ডিয়া মতুয়া মহাসঙ্ঘের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করেন। তার পরে মুকুটমণি জানিয়েছিলেন, তাঁদের দাবি, বিজেপির বনগাঁ ও নদিয়া দক্ষিণ সাংগঠনিক জেলার সভাপতি এবং নবদ্বীপ জ়োনের পর্যবেক্ষক পরিবর্তন করতে হবে, দলের এসসি মোর্চার পদাধিকারীমণ্ডলী ঠিক করতে হবে শান্তনুর সঙ্গে আলোচনা করে আর রাজ্যের সহ সভাপতি এবং সম্পাদক পদেও মতুয়া সমাজের প্রতিনিধি রাখতে হবে।
ওই দাবিগুলি কি বিজেপির রাজ্য নেতৃত্ব মানবেন? শান্তনু এ দিন বলেন, ‘‘আমাদের বিধায়করা রাজ্য নেতৃত্বকে ওই দাবিগুলি জানিয়েছেন। তবে এখনও কোনও জবাব আসেনি।’’ রাজ্য বিজেপির সদ্য প্রাক্তন সহ সভাপতি রাজকমল পাঠক বলেন, ‘‘আমি শান্তনু ঠাকুরের দাবিকে সমর্থন করি। তবে নিজের পদ পাওয়ার জন্য কোনও আন্দোলনে যাব না।’’
এ দিকে, বিজেপির নতুন রাজ্য পদাধিকারীমণ্ডলীতে অনেক পুরনো নেতা বাদ পড়াতেও দলের একাংশ ক্ষুব্ধ। সে বিষয়ে গত মঙ্গলবারেই সল্টলেকে জয়প্রকাশের বাড়িতে বৈঠক করেন বিজেপির আর এক প্রাক্তন সহ সভাপতি প্রতাপ বন্দ্যোপাধ্যায় এবং সমীরণ। ওই বৈঠকে বিজেপির আরও কয়েক জন নেতা এবং বিধায়ক ভার্চুয়াল পদ্ধতিতে যোগ দিয়েছিলেন। তার পর থেকে শনিবার পর্যন্ত ওই নেতাদের বেশ কয়েকটি বৈঠক হয়েছে। ‘বিক্ষুব্ধ’ শিবিরের দাবি, তাঁদের দিকে সমর্থনের পাল্লা ক্রমশ ভারী হচ্ছে। প্রকাশ্যে না এলেও দলের অনেক নেতাই তাঁদের সঙ্গে আছেন।
বিজেপির ওই নেতাদের অভিযোগ, দলের নতুন রাজ্য পদাধিকারীমণ্ডলীতে অধিকাংশ পুরনো এবং অভিজ্ঞ নেতাদের বাদ দিয়ে রাজনৈতিক এবং সাংগঠনিক ক্ষেত্রে অনভিজ্ঞ ব্যক্তিদের আনা হয়েছে। এই কমিটির নেতৃত্বে বিজেপির পক্ষে তৃণমূলকে ভোটে হারানো সম্ভব নয়। বিজেপির ওই ‘বিক্ষুব্ধ’ নেতাদের নিশানা মূলত দলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন) অমিতাভ চক্রবর্তী এবং কেন্দ্রীয় সহ পর্যবেক্ষক অমিত মালবীয়।