অনুপম হাজরা (বাঁ দিকে)। দিলীপ ঘোষ। —ফাইল চিত্র।
বিজেপি রাজ্য নেতৃত্বের সঙ্গে দলেরই সর্বভারতীয় সম্পাদক অনুপম হাজরার দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে চলে এসেছে। এই পরিস্থিতিতে রাজ্য নেতৃত্বের অনুপমের সঙ্গে কথা বলা উচিত বলে জানালেন বিজেপির প্রাক্তন সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি দিলীপ ঘোষ। তবে অনুপমের সাম্প্রতিক ‘দলীয় লাইন বিরোধী’ কাজকর্মে তাঁর যে সায় নেই, তা স্পষ্ট করে দিয়েছেন মেদিনীপুরের বিজেপি সাংসদ। এর পাশাপাশি অনুপম দলবদলের ক্ষেত্রে প্রস্তুত করছেন কি না, এই প্রশ্নের উত্তরে খানিক সাবধানী জবাবই পাওয়া গিয়েছে দিলীপের তরফ থেকে।
বোলপুরের প্রাক্তন সাংসদ অনুপমকে মঙ্গলবারই শান্তিনিকেতনে তৃণমূলের ধর্নামঞ্চের সামনে দেখা গিয়েছে। তাঁর একের পর এক মন্তব্যে অস্তস্তি তৈরি হয় রাজ্য বিজেপির অন্দরে। বুধবার একটি ফেসবুক লাইভ করে রাজ্য নেতৃত্বকে তীব্র আক্রমণ করেন বিজেপির কেন্দ্রীয় সম্পাদক অনুপম। তাঁকে পাল্টা আক্রমণ শানিয়ে বিজেপির রাজ্য সভাপতি জানান, তাড়াতাড়ি এর ফল দেখা যাবে। বিজেপি-অনুপম এই চাপানউতর নিয়েই বৃহস্পতিবার প্রশ্ন করা হয় দিলীপকে।
জবাবে অনুপমকে ‘সর্বভারতীয় নেতা’ বলে সম্বোধন করে দিলীপ বলেন, “উনি হয়তো পার্টির ভিতরের কিছু কথা বাইরে বলছেন। সেটা নিয়েই সমস্যা হচ্ছে।” দিলীপ রাজ্য নেতৃত্বকে খানিক পরামর্শ দেওয়ার ভঙ্গিতেই বলেন, “যদি তাঁর (অনুপম) অবস্থান পার্টির বিরুদ্ধে যায়, তবে কেন্দ্রের সঙ্গে কথা বলা উচিত রাজ্যের।” এর পাশাপাশি রাজ্য বিজেপির তরফে সরাসরি অনুপমের সঙ্গে কথা বলার প্রস্তাব দিয়ে দিলীপ বলেন, “ওঁকে বলা উচিত যে, এগুলি দলীয় লাইনের বিরুদ্ধে যাচ্ছে।”
প্রসঙ্গত, দিলীপ এক সময় রাজ্য বিজেপির সভাপতি ছিলেন। ছিলেন দলের সর্বভারতীয় সহ-সভাপতিও। তবে আপাতত রাজ্য বিজেপি কিংবা কেন্দ্রীয় বিজেপিতে তেমন গুরুত্বপূর্ণ কোনও পদে নেই তিনি। অনুপম-বিতর্কে রাজ্য বিজেপি যখন বোলপুরের প্রাক্তন সাংসদের বিরুদ্ধে ক্রমশ ঝাঁজ বৃদ্ধি করছে, সেই সময় দিলীপের ‘বেসুরো’ নেতার সঙ্গে কথা বলার প্রস্তাব দেওয়াকে তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করা হচ্ছে। আরও এক বার জল্পনা তৈরি হচ্ছে বর্তমান রাজ্য বিজেপি নেতৃত্বের সঙ্গে দিলীপের সম্পর্ক নিয়েও।
রাজ্য বিজেপির তরফে অনুপমের দলত্যাগের সম্ভাবনার দিকটিও ভাসিয়ে দেওয়া হয়েছে। তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দেওয়া অনুপম লোকসভা ভোটের আগে ফের পুরনো দলে ফিরে যেতে পারেন বলে জল্পনা তৈরি হয়েছে। এই বিষয়ে দিলীপকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, “পার্টি লাইনের বাইরে কথা বললে এই বিষয়ে সন্দেহ হওয়া স্বাভাবিক।”
তবে দিলীপের সাম্প্রতিক মন্তব্য রাজ্য এবং কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের দূরত্ব বৃদ্ধির ইঙ্গিত কি না, তা নিয়েও জল্পনা তৈরি হয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ কোনও পদে না-থাকলেও এখনও রাজ্য বিজেপির কোর কমিটিতে রয়েছেন দিলীপ। কিন্তু অনুপম প্রশ্নে রাজ্য নেতৃত্বকে পরামর্শ দিয়ে দিলীপ ইঙ্গিত দিলেন যে, তিনি আর গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে রাজ্য বিজেপির নীতিনির্ধারক নন।