(বাঁ দিকে) মহুয়া মৈত্র এবং সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তী (ডান দিকে)। —ফাইল চিত্র।
সংসদে ‘ঘুষের বদলে প্রশ্ন’ বিতর্কে তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্রের পাশে দাঁড়িয়ে লোকসভার এথিক্স কমিটির ‘সুপারিশ’-এর সমালোচনা করলেন সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তী। তিনি বলেন, “এক দিকে সাংসদ পদ খারিজ করার কথা বলা হচ্ছে। অন্য দিকে, কেন্দ্রীয় সংস্থাকে দিয়ে তদন্ত করতে বলা হচ্ছে। দুটো একসঙ্গে হয় কী করে? পুরো বিষয়টিই অনৈতিক।”
মহুয়ার বিরুদ্ধে ‘টাকা নিয়ে প্রশ্ন’ তোলার যে অভিযোগ উঠেছে তার তদন্ত করছে এথিক্স কমিটি। বুধবার এনডিটিভির একটি প্রতিবেদনে জানানো হয়, কমিটির খসড়া রিপোর্ট তৈরি হয়ে গিয়েছে। ওই প্রতিবেদন অনুযায়ী, সেখানে বলা হয়েছে, মহুয়া যা করেছেন, তাতে তাঁর গুরুতর শাস্তি হওয়া দরকার। ৫০০ পাতার রিপোর্টে মহুয়ার সাংসদ পদ খারিজ করার সুপারিশও করা হয়েছে। পাশাপাশি, কেন্দ্রীয় সংস্থাকে দিয়ে তদন্তের পরমর্শও দেওয়া হয়েছে। সূত্রকে উদ্ধৃত করে ওই প্রতিবেদন প্রকাশ করে এনডিটিভি।
এ বিষয়ে সুজন বলেন, “মহুয়া মৈত্রের সাংসদ পদ খারিজ করার সুপারিশ জানিয়েছে এথিক্স কমিটি। পাশাপাশি, দর্শন হীরানন্দানির সঙ্গে টাকাপয়সা সংক্রান্ত লেনদেন নিয়ে তদন্ত করবে কেন্দ্রীয় সংস্থা। এক সঙ্গে দুটো জিনিস হয় কী করে?” সুজন বিস্ময় প্রকাশ করে জানিয়েছেন, রিপোর্টের খসড়া অনৈতিক ভাবে বাইরে বেরিয়ে গিয়েছে। কমিটির সুপারিশগুলিও নীতিবোধশূন্য। তাঁর দাবি, এথিক্স কমিটি বিজেপি সাংসদ রমেশ বিদুরীর অভব্য আচরণের বিরুদ্ধে কোনও পদক্ষেপ করেনি। এই কমিটিই তৃণমূলের নেতাদের যখন হাতে হাতে টাকা নিতে দেখা গিয়েছিল তখন কোনও পদক্ষেপ করেনি। তাঁর কথায়, “সেই কমিটিই মহুয়া মৈত্রের সম্পর্কে যে মনোভাব নিয়েছে তা অনৈতিক, কোনও সন্দেহ নেই।”
তিনি আরও বলেন, “সাংসদের দায়িত্বই প্রশ্ন করা। সেই প্রশ্নে শুদ্ধাচার রয়েছে কি না তা দেখা যেতে পারে। কিন্তু প্রশ্ন যে হেতু নরেন্দ্র মোদী এবং আদানির বিরুদ্ধে তাই কমিটি চাইছে যে ভাবেই হোক কোনও একটা ব্যবস্থা নিতে। সেই কারণে তৃণমূলের নেতারাও মহুয়ার পাশে নেই। তাঁরা আদানিকে অখুশি করতে চায় না।”
সুজনের দাবি, এথিক্স কমিটির রিপোর্টে স্পষ্ট হয়ে গেল মোদী এবং আদানির বিরুদ্ধে কিছু বলা যাবে না। তাঁর মতে, “স্বৈরাচারী মনোভাবের প্রতিফলন ঘটছে। তৃণমূলের নেতারা চুপ করে থাকতে পারেন কিন্তু সত্যের মুখোমুখি আমাদের দাঁড়াতে হবেই। সংসদ এবং সাংসদের মুখ বন্ধ করে দেওয়াটা কখনও মেনে নেওয়া যায় না।”
এনডিটিভির প্রতিবেদনে উল্লিখিত খসড়া রিপোর্ট প্রসঙ্গে আনন্দবাজার অনলাইনের তরফে মহুয়ার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেছিলেন, ‘‘এটা তো প্রথম থেকেই জানা ছিল। যা হবে, দেখা যাবে। ওরা যত বেশি এ সব করবে, আমরা তত বেশি ওদের বিরুদ্ধে লড়ব।’’ নিয়ম অনুযায়ী, লোকসভার শীতকালীন অধিবেশনে এথিক্স কমিটির এই খসড়া রিপোর্ট স্পিকার ওম বিড়লার কাছে জমা দেওয়া হবে। তার পর আলোচনার ভিত্তিতে লোকসভা সিদ্ধান্ত নেবে।