— প্রতীকী চিত্র।
মহারাষ্ট্রে ভরাডুবির পরে মহাবিকাশ আঘাড়ী জোটের মধ্যে পারস্পরিক দোষারোপের পালা শুরু হয়ে গেল। কংগ্রেস শিবির থেকে অভিযোগ উঠল, জোট শরিক শরদ পওয়ারের এনসিপি আর উদ্ধব ঠাকরের শিবসেনার নেতারা কংগ্রেসের হয়ে প্রচার করেননি। উল্টো দিকে পওয়ার, ঠাকরের শিবির থেকেও অভিযোগ উঠেছে, কংগ্রেস বিজেপির সঙ্গে মুখোমুখি লড়াইয়ে খারাপ ফল করেছে বলেই মহাবিকাশ আঘাড়ী জোট খারাপ ফল করেছে।
মহারাষ্ট্রে হারলেও ঝাড়খণ্ডে হেমন্ত সোরেনের ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চা আর কংগ্রেসের নেতৃত্বাধীন জোট জিতে ক্ষমতায় ফিরেছে। সেই জোটেও কংগ্রেস বিশেষ ভাল ফল করতে পারেনি। ফের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেওয়ার আগেই হেমন্ত সোরেন কংগ্রেসকে জানিয়ে দিয়েছেন, তিনি কংগ্রেসকে উপমুখ্যমন্ত্রীর পদ ছাড়তে রাজি নন। ঝাড়খণ্ডে সোরেনের দল একাই ৮১ আসনের বিধানসভায় ৩৪টি আসন জিতেছে। সেই তুলনায় কংগ্রেস মাত্র ১৬টি আসন জিতেছে। জেএমএম ও ‘ইন্ডিয়া’ মঞ্চের অন্য দুই শরিক আরজেডি ও সিপিআই (এম-এল) লিবারেশনের আসন সংখ্যা বাড়লেও কংগ্রেসের আসন বাড়েনি।
কংগ্রেসের অন্দরমহলের একটা বড় অংশ মনে করছে, কংগ্রেস হাইকমান্ড মহারাষ্ট্র ও ঝাড়খণ্ডের বদলে ওয়েনাড়ে প্রিয়ঙ্কা গান্ধী বঢরার উপনির্বাচনে বেশি গুরুত্ব দিয়েছিলেন। সে কারণে খোদ রাহুল গান্ধী প্রচারের আসল সময়ে মহারাষ্ট্র বা ঝাড়খণ্ডে প্রচারে না গিয়ে ওয়েনাড়ে ছিলেন। কংগ্রেসের আর এক অংশের মতে, লোকসভা নির্বাচনে ৯৯টি আসনে জিতে কংগ্রেস হাইকমান্ড ধরে নিয়েছিলেন, সাংগঠনিক দুর্বলতা মিটে গিয়েছে। কংগ্রেস ফের জয়ের পথে ফিরেছে। হরিয়ানা ও মহারাষ্ট্রে হারের পরে বোঝা যাচ্ছে, লোকসভা নির্বাচনে ভাল ফল ব্যতিক্রম ছিল। তার আগে ও পরে কংগ্রেসের খারাপ ফলই সাংগঠনিক অবস্থার আসল ছবি ছিল। তেলঙ্গানা ও কর্নাটকে কংগ্রেসের স্থানীয় নেতারা শক্তিশালী ছিলেন বলে সেখানে কংগ্রেস জিততে পেরেছে।
মহারাষ্ট্রে কংগ্রেস ২৮৮ আসনের বিধানসভায় ১০১টি আসনে লড়েছিল। জিতেছে মাত্র ১৬টি আসন। শরদ পওয়ারের এনসিপি ৯৫টি আসনে লড়ে ১০টি আসন জিতেছে। উদ্ধব ঠাকরের শিবসেনা ৮৬টি আসনে লড়ে ২০টি আসনে জিতেছে। কংগ্রেস ভোটের আগেই মুখ্যমন্ত্রী পদের দাবি জানাতে শুরু করেছিল। কংগ্রেসের দুই মুখ্যমন্ত্রী পদের দাবিদার, প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী পৃথ্বীরাজ চহ্বাণ ও বালাসাহেব খোরাট দু’জনেই হেরে গিয়েছেন। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি নানা পাটোলে কোনও মতে শ’দুয়েক ভোটে জিতেছেন। প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী প্রয়াত বিলাসরাও দেশমুখের পুত্র ধীরজ দেশমুখ হেরে গিয়েছেন।
মহারাষ্ট্রে কংগ্রেসের নির্বাচনী পর্যবেক্ষক, কর্নাটকের মন্ত্রী জি পরমেশ্বর বলেছেন, “অনেক জায়গায় আমরা শরিকদের জন্য কাজ করিনি। অনেক এলাকায় শরিকরা আমাদের সাহায্য করেননি।” একই সঙ্গে পরমেশ্বর মেনে নিয়েছেন, যেখানে কংগ্রেসের নিজের শক্তিতে লড়াই করে ভাল ফল করার কথা ছিল, সেখানেও কংগ্রেস ভাল ফল করতে পারেনি। যেমন বিদর্ভে ৬২টি আসনের মধ্যে কংগ্রেস ৫০টি আসন জিতবে ভেবেছিল। তাদের পুরনো গড় হলেও বিদর্ভে মাত্র ৮টি আসনে জিতেছে কংগ্রেস। পরমেশ্বরের বক্তব্য, গোটা রাজ্যে কংগ্রেস অন্তত ৬০-৭০টি আসন জিতবে বলে আশা করেছিল। মাত্র ১৬ আসনে আটকে গিয়েছে দল।
হেরে যাওয়ার পরে পৃথ্বীরাজ চহ্বাণ মেনে নিয়েছেন, বিজেপি জোটের ‘লাড়কি বহিন’ প্রকল্পে মহিলাদের অনুদান বাজিমাত করেছে। কংগ্রেসকে দুষে উদ্ধব ঠাকরের শিবসেনার নেত্রী প্রিয়ঙ্কা চতুর্বেদী অভিযোগ তুলেছেন, মহারাষ্ট্রের কংগ্রেস সাংসদ প্রণতি শিন্দে তাঁর এলাকায় আঘাড়ীর প্রার্থী উদ্ধবের শিবসেনার নেতাকে সমর্থন না করে নির্দল প্রার্থীকে সমর্থন করেছিলেন। সেই নির্দল প্রার্থী নিজে জিততে পারেননি। ভোট কাটাকুটিতে আঘাড়ীর হয়ে উদ্ধবের শিবসেনার প্রার্থীও হেরে গিয়েছেন।
মহারাষ্ট্র ও ঝাড়খণ্ডের বিধানসভার পরে এ বার দিল্লির বিধানসভা নির্বাচন। লোকসভায় সমঝোতা হলেও বিধানসভায় কংগ্রেস ও আম আদমি পার্টি জোট করতে নারাজ। দুই দলই আলাদা ভাবে প্রচার করছে। উত্তরাখণ্ডের নেতা কাজী মহম্মদ নিজামুদ্দিনকে আজ দিল্লি এআইসিসি-র ইন চার্জ হিসেবে নিয়োগ করা হয়েছে। আম আদমি পার্টির মুখপাত্র প্রিয়ঙ্কা কক্কর বলেন, কংগ্রেস এমন এক দল যে নিজের শরিককে নীচের দিকে টেনে নামায়। দিল্লির লোকসভা নির্বাচনে অরবিন্দ কেজরীওয়াল সব আসনে প্রচার করেছিলেন। যেখানে কংগ্রেস প্রার্থী ছিলেন, সেখানেও প্রচার করেছিলেন। কিন্তু কংগ্রেস নেতারা তা করেন না।