বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষকে কটাক্ষ করে তথাগত রায়ের টুইট নিজস্ব চিত্র
বিজেপি নেতা তথাগত রায় বরাবরই নেটমাধ্যমে সরব। ত্রিপুরার রাজ্যপাল থাকার সময়ে বারবার তাঁর টুইট ঘিরে বিতর্ক তৈরি হয়েছে। আর উত্তর-পূর্বের তিন রাজ্যের রাজ্যপালের দায়িত্ব পালন করে আবার রাজনীতিতে যোগ দিয়েও সেই একই ধারা বজায় রেখে চলেছেন তথাগত। সেটা বেশিরভাগ সময়েই বিরোধীদের বিরুদ্ধে। কিন্তু ইদানীং তিনি টুইটে দলের নেতাদেরও আক্রমণ করছেন। প্রায় সময়েই তথাগতর তির থাকছে রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের দিকে। নিয়মিত হামলার মুখে পড়ে এ বার ঘনিষ্ঠমহলে মুখ খুলেছেন দিলীপ এবং তাঁর শিবিরের নেতারা।
বুধবার দিলীপ শিবিরের এক নেতা বলছিলেন, ‘‘উনি (তথাগত) হলেন কমলবনে মত্ত হস্তী। হাতি যেমন মদমত্ত হয়ে পদ্মবনে ঢুকে সবকিছু দলে-পিষে ছারখার করে দেয়, উনিও পদ্মশিবিরে তেমনই শুরু করেছেন। দলের নীতি, রেওয়াজ কোনও কিছুরই তোয়াক্কা করছেন না। অথচ দলের থেকে অনেক কিছু পেতে চাইছেন। সেটা না পেলেই শিষ্টাচার না মেনে দলকে অস্বস্তিতে ফেলছেন।’’ খোদ দিলীপও নাম না করে সম্প্রতি তাঁর ঘনিষ্ঠদের বলেছেন, ‘‘যাঁরা কাজ করেন না, তাঁদেরই ও সব লিখে বাজার গরম করতে হয়! এ হল খবরে থাকার অলস উপায়।’’
পদ্ম-রাজনীতিতে তথাগত দিলীপের পূর্বসুরি। ২০০২ থেকে ২০০৬ সাল তিনি বিজেপি-র রাজ্য সভাপতিও ছিলেন। তবে কোনও নির্বাচনে জয় পাননি। ২০১৬ সালের জুলাই থেকে ২০২০ সালের অগস্ট মাস পর্যন্ত তিনি উত্তর-পূর্বের তিন রাজ্য— অরুণাচল প্রদেশ, ত্রিপুরা এবং মেঘালয়ের রাজ্যপাল ছিলেন। সেই মেয়াদ শেষে কলকাতায় আসনে বিধানসভা নির্বাচনের আগে আগেই। তখন সক্রিয় রাজনীতিতে ফিরতে চাইলেও বয়সের কারণে বিজেপি কোনও পদ দিতে চায়নি ৭৫ বছরের তথাগতকে। তবে তিনি তখন রাজ্যসভার সাংসদ হতে চেয়েছিলেন বলে খবর। দিলীপের কাছেই তথাগত সেই আব্দার জানিয়েছিলেন বলে দাবি রাজ্য বিজেপি নেতাদের একাংশের।
এর পর নীলবাড়ির লড়াইয়ে তথাগত চেয়েছিলেন কলকাতায় ভবানীপুরে প্রার্থী হতে। তবে তাতেও সায় দেননি কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। রাজ্য বিজেপি-তে দিলীপ-ঘনিষ্ঠ এক নেতার বক্তব্য, ‘‘দুই ক্ষেত্রেই তথাগতদার ইচ্ছে মেনে নেয়নি দল। কিন্তু ওঁর ধারণা, দিলীপদাই বাধা দিয়েছিলেন! সেই থেকেই যত রাগ।’’
ঘটনাপ্রবাহ বলছে, বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি-র বিপর্যয় হওয়ার পর থেকেই নেটমাধ্যমে দিলীপের প্রতি উষ্মা প্রকাশ করতে শুরু করেন তথাগত। শুধু দিলীপ নন, তথাগতর নিশানায় ছিলেন তিন কেন্দ্রীয় নেতা কৈলাস বিজয়বর্গীয়, শিবপ্রকাশ এবং অরবিন্দ মেনন। চার নেতার পুরো নাম না নিয়ে ‘কে’, ‘এস’, ‘এ’, ‘ডি’ নামসংক্ষেপ ব্যবহার করতে দেখা গিয়েছে তথাগতকে। সম্প্রতি বিজেপি কর্মীদের ঘরছাড়া হওয়ার অভিযোগ তুলতে ওই চার নেতাকে দায়ী করে তথাগত টুইট করেন, ‘একজন খুব কাছের মানুষ এসে খুব কান্নাকাটি করছিলেন। বলছিলেন, কয়েক হাজার মানুষ, যাঁরা বিজেপি-র হয়ে কাজ করেছেন, তাঁরা তৃণমূল-আশ্রিত দুষ্কৃতীদের চাপে ঘরছাড়া। বড় অঙ্কের আর্থিক জরিমানার বিনিময়ে তাঁদের বাড়ি ফিরতে হচ্ছে। আমি অসহায়। রাজ্যের দায়িত্বপ্রাপ্ত কে-এস-এ পালিয়ে গিয়েছেন। ডি ফোন ধরছেন না।’
সম্প্রতি তিনি আবার কৈলাসকে আক্রমণ করেন। তবে সেটা ছিল ‘রিটুইট’। দিবাকর দেবনাথ নামে এক টুইটার ব্যবহারকারী মুকুল রায় ও কৈলাসের একটি ছবি পোস্ট করে কৈলাসের উদ্দেশে বেশ কিছু রুচিহীন শব্দের প্রয়োগ করেন। তৃণমূল নেত্রী মমতাকেও ‘পিসি’ সম্বোধন করেন। তাঁর বক্তব্য, মুকুল-কৈলাস সব সময়েই নিজেদের মধ্যে ‘গুজগুজ’, ‘ফিসফিস’ করতেন। মুকুল তৃণমূলের ফিরে যাওয়ায় কৈলাস এখন ‘হতাশ’। মমতার কাছে তাঁর অনুরোধ, কৈলাসকেও দলে নিক তৃণমূল। সেই বক্তব্যই অনুবাদ করে আরেকটি টুইট করেন তথাগত। তাতে তিনি লেখেন, ‘একজন একনিষ্ঠ বিজেপি কর্মীর টুইটের যথার্থ অনুবাদই করছি। কোনও অংশ যোগ বা বিয়োগ করিনি।’ কৈলাসের উদ্দেশে ওই ব্যক্তি যে শব্দবন্ধ ব্যবহার করেছেন, তার আক্ষরিক অনুবাদ করতে গিয়ে তিনি ‘ভোদো বিড়াল’ এর ইংরেজি করে লেখেন, ‘স্টুপিড ক্যাট’।
এ সবের আগেই অবশ্য প্রকাশ্যে ‘দলবিরোধী’ বক্তব্যের জন্য তথাগতকে দিল্লিতে ডেকে পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু তাতেও তিনি যে নিজের পথেই রয়েছেন, তা বোঝা গিয়েছিল কৈলাস-বিরোধী টুইটে। সম্প্রতি দলের নেতারা সোশ্যাল মিডিয়ায় দলবিরোধী পোস্ট করছেন কি না নজর রাখতে শৃঙ্খলারক্ষা কমিটি গড়েছে বিজেপি-র রাজ্যনেতৃত্ব। আনন্দবাজার ডিজিটালের কাছে ওই কমিটির কথা শুনে অট্টহাস্য করেছিলেন তথাগত।