রাজ্য বিজেপিতে শুভেন্দু বনাম দিলীপ শিবিরের বিতর্ক চলছেই।
উনি কেন দিল্লি গিয়েছেন সেটা দিল্লির নেতারাই বলতে পারবেন। বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর সাম্প্রতিক দিল্লি সফরের সময় সাংবাদিক বৈঠকে বলেছিলেন বিজেপি রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। তাঁকে ‘অন্ধকারে’ রেখেই যে মোদী-শাহ-নড্ডাদের সঙ্গে বৈঠক করতে শুভেন্দু দিল্লি গিয়েছেন, সেটা নিজেই প্রকাশ্যে এনে দিয়েছিলেন দিলীপ। এ বার প্রকাশ্য না বললেও দলের অন্দরে দিলীপ ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন যে, সোমবার দলের বিধায়কদের নিয়ে রাজভবন সফর নিয়েও তাঁর সঙ্গে কোনও পরামর্শ তো দূরের কথা, তাঁকে কিছু জানানোও হয়নি। একেবারে শেষ মুহূর্তে তিনি ওই কর্মসূচির কথা জানতে পেরেছেন।
দিল্লি সফরের সময় বিতর্ক ওঠার পরে শুভেন্দু জানিয়েছিলেন, তিনি রাজ্যের সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন) অমিতাভ চক্রবর্তীকে জানিয়েছিলেন। এ বারেও শুভেন্দু শিবিরের বক্তব্য, রাজভবনে বিধায়কদের নিয়ে যাওয়ার কথাও অমিতাভর সঙ্গে আলোচনা হয়েছিল। বিজেপি সূত্রে খবর, সেটা দিলীপ পরে জানতে পারেন। এমনটা যাতে বারবার না হয় তা নিয়ে দিলীপ অমিতাভর সঙ্গে কথা বলেছেন বলেও গেরুয়া শিবির সূত্রে জানা গিয়েছে। কিন্তু ঘটনাপ্রবাহে ইতিমধ্যেই দলের মধ্যে এই প্রশ্ন উঠেছে যে, রাজ্য সভাপতিকে এড়িয়ে কেন বারবার অমিতাভর সঙ্গেই কথা বলছেন শুভেন্দু। রাজ্য বিজেপি-র এক শীর্ষ নেতার বক্তব্য, ‘‘অমিতাভদা সংবাদমাধ্যমের সামনে আসেন না। সংগঠন সম্পাদক গুরুত্বপূর্ণ পদ হলেও দলের নীতি অনুযায়ী তাঁরা আড়াল থেকে কাজ করেন। ফলে দিলীপদাকে বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দিতে হয়। দিলীপদা অন্ধকারে থাকলেও সেটা প্রকাশ্যে এসে যায়। কারণদিলীপদা না জেনে ‘জানি’ বলার লোক নন।’’
বিজেপি-তে যোগ দেওয়ার দিন থেকেই পদ্মশিবিরে ‘বাড়তি গুরুত্ব’ পেতে শুরু করেন শুভেন্দু। সেই সময় দিলীপ শিবির একটু হলেও খুশি হয়েছিল। কারণ, শুভেন্দুর যোগদানে মুকুল রায়ের গুরুত্ব কমে গিয়েছিল কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের কাছে। কিন্তু এখন দুই শিবিরের মধ্যে দ্বৈরথ ক্রমেই বাড়ছে। যা এক লাফে অনেকটা বেড়ে গিয়েছে শুভেন্দুর সাম্প্রতিক দিল্লি সফরে। বাংলায় দলের ‘ছন্নছাড়া’অবস্থার মেরামতিতে শুভেন্দুর উপর যে কেন্দ্রীয় নেতারা বেশি ভরসা করছেন, তা নিয়েও চলছে আলোচনা। দিলীপকে না জানিয়ে দিল্লি গিয়ে শুভেন্দু দু’দিন ধরে যে ভাবে জেপি নড্ডা, অমিত শাহ এবং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে বৈঠক করেছেন, তা থেকে দলের নেতাদের কাছে একটা বিষয় স্পষ্ট যে, ওই সফর আচমকা ছিল না। আগে থেকেই সাক্ষাৎ ও বৈঠকের সময় ঠিক হয়েছিল। অথচ পুরো বিষয়েই দিলীপকে অন্ধকারে রাখা হয় বলে মনে করছেন বিজেপি নেতাদের একাংশ। এর পরে দলের বিধায়কদের নিয়ে শুভেন্দুর রাজভবন যাত্রা নিয়েও একই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।
শুভেন্দু শিবিরের একাংশের অবশ্য বক্তব্য, দিলীপের উপরে সংগঠনের দায়িত্ব। সেখানে তাঁকে না জানিয়ে কিছুই করেননি শুভেন্দু। পরিষদীয় দলের নেতা হিসেবে বিধায়কদের নিয়ে বৈঠক বা রাজভবনে যাওয়ার জন্য দিলীপের ‘অনুমতি’ নেওয়ার কোনও দরকার ছিল না। দলের নেতাদের অনেকের মতে, দলের সাংগঠনিক বিষয়টি দেখবেন দিলীপ। শুভেন্দু দেখবেন পরিষদীয় বিষয়। দু’টি ক্ষেত্রে দুই নেতা সমান্তরাল ভাবে কাজ করবেন। এ নিয়ে যেন কোনও ‘ভুল বোঝাবুঝি’ না হয়।
শুভেন্দু-ঘনিষ্ঠদের বক্তব্য, সৌজন্যের খাতিরেই দিল্লি এবং রাজভবন যাওয়ার বিষয়টি অমিতাভকে জানিয়েছিলেন শুভেন্দু। অন্য দিকে, দিলীপ শিবিরের বক্তব্য, শুভেন্দু হতে পারেন বিরোধী দলনেতা। কিন্তু মনে রাখতে হবে যে, তিনি এবং যাঁদের নিয়ে রাজভবনে গিয়েছিলেন তাঁরা সকলেই বিজেপি-র বিধায়ক। তাই রাজ্য সভাপতিকে জানিয়েই কর্মসূচি ঠিক করা উচিত ছিল। সেটা না করায়‘সাংগঠনিক রীতি’ ভঙ্গ হয়েছে। প্রশ্ন উঠেছে অমিতাভর ভূমিকা নিয়েও। দিলীপের মতো তিনিও আরএসএস প্রচারক। পর পর দু’টি ক্ষেত্রে শুভেন্দু তাঁকে জানালেও তিনি কেন দিলীপকে সেটা জানাননি সেই প্রশ্নেও অনেকেই সরব।সূত্রের খবর, দিলীপও এ নিয়ে অমিতাভর সঙ্গে কথা বলেছেন।