২৭তম রাজ্য সম্মেলনে সিপিএম নেতারা। ছবি: এক্স।
মূর্তিতে বুদ্ধদেব-সীতারাম
ডানকুনিতে সিপিএমের রাজ্য সম্মেলন স্থলের নামকরণ করা হয়েছে প্রয়াত প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের নামে। আর মঞ্চের নামকরণ হয়েছে প্রয়াত সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরির নামে। সম্মেলন স্থলের বাইরে বসানো হয়েছে সীতারাম এবং বুদ্ধদেবের ফাইবার গ্লাসের আবক্ষ মূর্তি। তৈরি করেছেন কুমারটুলির শিল্পী সুবল পাল। পরবর্তী কালে দু’টি মূর্তিই সংরক্ষিত করার ভাবনা রয়েছে সিপিএমের।
ভারতীয় মানিক
সিপিএমের রেওয়াজ হল কেউ প্রয়াত হলে বা কাউকে শ্রদ্ধা জানাতে গেলে কাঁধের উপরে মুষ্টিবদ্ধ হাত তোলা। দলীয় পরিভাষায় ‘লাল সেলাম’। সারা পৃথিবীতেই কমিউনিস্টরা এ ভাবে শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করেন। কিন্তু সিপিএমের রাজ্য সম্মেলনে ভিন্ন দৃষ্টান্ত তৈরি করলেন দলের পলিটব্যুরোর সদস্য তথা ত্রিপুরার প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার। বিমান বসু থেকে প্রকাশ কারাট, মহম্মদ সেলিম থেকে সূর্যকান্ত মিশ্রেরা যখন শহিদ বেদিতে মাল্যদান করে ‘লাল সেলাম’ জানালেন, তখন মানিক জোড়হাত করে প্রণাম করলেন। যা নজর এড়ায়নি অনেকেরই। দলীয় সূত্রে আনুষ্ঠানিক ভাবে এর ব্যাখ্যা মেলেনি। তবে অনেকে বলছেন, মানিক অনেক দিন ধরে এ ভাবেই শ্রদ্ধা জানান। যে সূত্রে সিপিএমের মধ্যে আলোচনায় ফিরেছে প্রয়াত সুভাষ চক্রবর্তীর নামও। সুভাষও তেমনই করতেন। বলতেন, ‘‘আমি আগে ভারতীয়। তার পর কমিউনিস্ট।’’
(বাঁ দিকে) সিপিএমের ২৭তম রাজ্য সম্মেলনে শহিদ বেদিতে মাল্যদান করছেন ত্রিপুরার প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার। জোড়া মোবাইল হাতে বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু (ডান দিকে)। ছবি: শোভন চক্রবর্তী।
বিমান-হস্তে জোড়া মোবাইল
বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান তথা প্রবীণ সিপিএম নেতা বিমান বসু মোবাইল ফোন ব্যবহার করেন না। কথা বলতে হলে আলিমুদ্দিনের ল্যান্ডলাইন বা অন্য নেতাদের মোবাইল ফোন ভরসা। দূরে কোথাও গেলে গাড়ির চালকের মোবাইল। সেই বিমানের হাতে দেখা গেল জোড়া মোবাইল ফোন। তবে মিনিট তিনেকের জন্য। সিপিএম নেত্রী বৃন্দা কারাট মাল্যদান করতে যাওয়ার আগে পাশে দাঁড়ানো বিমানের হাতে নিজের দু’টি মোবাইল ধরিয়ে দিয়েছিলেন। বিমানও সুহৃদের মতোই দু’টি ফোন নিয়ে নেন। মাল্যদান করে মঞ্চ থেকে নেমে এসে ফোনজোড়া নিয়ে নেন বৃন্দা।
কাতলা-চিংড়ি-পোলাও-চিকেন
শুক্রবারই আনন্দবাজার অনলাইন বলেছিল, রাজ্য সম্মেলনে প্রতিনিধিদের মেনুতে মিষ্টির বৈচিত্র রাখছে সিপিএম। দেখা গেল শুধু মিষ্টি নয়, মেনুতে প্রথম দিন আদ্যোপান্ত বাঙালিয়ানা। দুপুরের মেনুতে আলু-ফিঙ্গার, কাতলা মাছের কালিয়া, পটল-চিংড়ি এবং চাটনি। বিকালে ‘ভেজ’ এবং চিকেন পকোড়ার সঙ্গে কফি। রাতে পোলাও এবং চিকেন কষা। সকালের প্যাকেটে কেক, কলা, ডিমের সঙ্গে নতুন গুড়ের ভাপা সন্দেশ। রাতে শেষ পাতে রিষড়ার প্রখ্যাত দোকানের মিষ্টি।
ডানকুনিতে সম্মেলন স্থলের বাইরে বসানো হয়েছে (বাঁ দিকে) সীতারাম ইয়েচুরি এবং বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের (ডান দিকে) ফাইবার গ্লাসের আবক্ষ মূর্তি। ছবি: শোভন চক্রবর্তী।
ধর্মকে আলিঙ্গন সিপিএমের
বামের ভোট রামে চলে যাওয়ার পরে সেই ভোট আর ফিরছে না। এরই মধ্যে সিপিএম ঠিক করেছে, ধর্মপ্রাণ মানুষের কাছে গিয়ে তারা ধর্ম এবং সাম্প্রদায়িকতার ফারাক বোঝাবে। রাজ্য সম্মেলনে দেখা গেল ধর্মীয় ঐতিহ্যকে আলিঙ্গন করল সিপিএম। সম্মেলন কক্ষের বাইরে হুগলি জেলার ঐতিহ্যের প্রদর্শনীতে শ্রীরামকৃষ্ণের ছবি দিয়ে কামারপুকুরের ইতিহাস লিপিবদ্ধ করা হয়েছে। পাশাপাশি রয়েছে তারকেশ্বর মন্দিরের ছবিও। বাদ পড়েনি হুগলির দুই ধর্মস্থান ব্যান্ডেল চার্চ এবং ফুরফুরা শরিফও।
ঠান্ডা ঠান্ডা-কুল কুল
২০১১ সালের ভোটের আগে বর্তমান শাসকদলের কর্মীরা স্লোগান দিতেন, ‘‘ঠান্ডা ঠান্ডা-কুল কুল, জিতবে এ বার তৃণমূল।’’ সিপিএম তেমন কোনও স্লোগান দেয়নি। তবে সম্মেলন কক্ষকে ঠান্ডা রাখতে বসানো হয়েছে গোটা সাতেক কুলার। ফুরফুরে ঠান্ডা হাওয়া ছড়িয়ে পড়ছে সম্মেলন কক্ষে। যদিও তার মধ্যেই অসুস্থ হয়ে পড়েছেন সিপিএমের আলিপুরদুয়ার জেলা সম্পাদক কিশোর দাস। তাঁকে স্থানীয় একটি নার্সিংহোমে ভর্তি করানো হয়েছে।
(শোভন চক্রবর্তী)