Minakshi Mukherjee

অল্প দূর না বহু দূর? মিনাক্ষী যাবেন কত দূর? সম্মেলনের আবহে রাজ্য সিপিএমে দুই মতের অক্ষ যুবনেত্রীকে ঘিরে

পশ্চিমবঙ্গ থেকে যাঁরা সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটিতে রয়েছেন, তাঁদের মধ্যে রেখা গোস্বামীর এ বার বয়সের কারণে বাদ পড়ার কথা। তাঁর জায়গায় কেন্দ্রীয় কমিটিতে কে জায়গা পাবেন, সেটাই সিপিএমে আলোচ্য হয়ে উঠেছে।

Advertisement

শোভন চক্রবর্তী

শেষ আপডেট: ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ০৮:৫৯
Share:
Will Meenakshi Mukherjee be included in CPM Central Committee? Two opinions have formed within the Bengal party

মিনাক্ষী মুখোপাধ্যায়কে ঘিরে দুই মত রাজ্য সিপিএমের অন্দরে। গ্রাফিক: আনন্দবাজার অনলাইন।

সিপিএমের এই ‘দুর্দিনেও’ জেলায় জেলায় কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে তাঁকে নিয়েই সর্বোচ্চ আগ্রহ। তিনি যে সভায় বক্তা হচ্ছেন, সেখানে ভিড় হচ্ছে জমাট। অন্যদের ক্ষেত্রে তেমন ছবি যে নেই, তা মানেন রাজ্য সিপিএমের প্রথম সারির নেতারাও। দলের সম্মেলন পর্বে ফের সেই মিনাক্ষী মুখোপাধ্যায়কে ঘিরেই আলোচনা শুরু হয়েছে সিপিএমের অন্দরে। সিপিএম সূত্রের খবর, কুলটির যুবনেত্রীকে ঘিরে রাজ্য সিপিএমে দু’টি অক্ষ তৈরি হয়েছে। একাংশের বক্তব্য, এ বারই মীনাক্ষীকে দলের কেন্দ্রীয় কমিটিতে জায়গা দেওয়া হোক। অন্য অংশের বক্তব্য, মীনাক্ষীর বয়স সবে ৪০। তাঁর জন্য আরও সময় পড়ে রয়েছে। বরং মহিলা সংগঠন থেকে কোনও নেত্রীকে জায়গা দেওয়া হোক কেন্দ্রীয় কমিটিতে।

Advertisement

মিনাক্ষী আপাতত সিপিএমের রাজ্য কমিটির সদস্য। বঙ্গ সিপিএমের রেওয়াজ হল, পার্টি কংগ্রেসের পরে রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলী গঠন করা। ফলে ফেব্রুয়ারির তৃতীয় সপ্তাহে রাজ্য সম্মেলন থেকে রাজ্য কমিটি তৈরি হয়ে গেলেও সম্পাদকমণ্ডলী গঠিত হবে পার্টি কংগ্রেসের পরে। অর্থাৎ, এপ্রিলের দ্বিতীয় সপ্তাহের আগে নয়। অনেক দিন ধরেই গুঞ্জন রয়েছে, এ বারে সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীতে জায়গা হতে পারে মিনাক্ষীর। কিন্তু এখন আলোচনা আবর্তিত হচ্ছে তাঁর কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য হওয়া নিয়ে।

পশ্চিমবঙ্গ থেকে যাঁরা কেন্দ্রীয় কমিটিতে রয়েছেন, তাঁদের মধ্যে মহিলা মুখ রেখা গোস্বামীর এ বার বয়সের কারণে বাদ পড়ার কথা। তাঁর জায়গায় কে কেন্দ্রীয় কমিটিতে জায়গা পাবেন, তা নিয়েই দু’টি মত তৈরি হয়েছে দলের মধ্যে। সিপিএম সূত্রের খবর, পলিটব্যুরোর এক প্রবীণ সদস্য, দু’জন কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য-সহ কয়েক জন মহিলানেত্রী মিলে দলে এই ‘ভাষ্য’ ভাসিয়ে দিচ্ছেন যে, কেরলের মহিলা সমিতির রাজ্য সম্পাদক বা সভানেত্রী পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটিতে জায়গা পান। তা হলে পশ্চিমবঙ্গ থেকে তেমন হবে না কেন? মহিলা সমিতির কেরল রাজ্য কমিটির বর্তমান সম্পাদক সিএস সুজাতা দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য। তাই পশ্চিমবঙ্গ থেকে মহিলা সমিতির সম্পাদক অথবা সভানেত্রীকে দলের কেন্দ্রীয় কমিটিতে জায়গা দেওয়া হোক। উল্লেখ্য, পশ্চিমবঙ্গে মহিলা সমিতির রাজ্য সম্পাদকের পদে বর্তমানে রয়েছেন কনীনিকা ঘোষ বোস। সভানেত্রী পদে রয়েছেন জামুড়িয়ার প্রাক্তন বিধায়ক জাহানারা খান। জাহানারা এক দিকে মহিলা, অন্য দিকে সংখ্যালঘু। তা ছাড়া তাঁর সংসদীয় রাজনীতিতে পূর্ব অভিজ্ঞতা রয়েছে। আবার কনীনিকা সংবাদমাধ্যমের সৌজন্যে বাম মহলে পরিচিত মুখ। জাহানারার ক্ষেত্রে আরও একটি বিষয় রয়েছে। তিনি পশ্চিম বর্ধমান থেকেই উঠে আসা নেত্রী। মিনাক্ষীও সেই জেলারই।

Advertisement

আলিমুদ্দিনের অন্য অংশের বক্তব্য, মিনাক্ষীকে এ বারেই কেন্দ্রীয় কমিটিতে না নেওয়া হলে নতুন প্রজন্মকে সামনের সারিতে আনার বার্তা ‘ধাক্কা খাবে’। উল্লেখ্য, আগামী জুন মাসে সিপিএমের যুব সংগঠন ডিওয়াইএফআইয়ের রাজ্য সম্মেলন। সব ঠিক থাকলে বয়সের কারণে যুব সংগঠন ছাড়বেন মিনাক্ষী। তার পর তাঁকে কোন গণ সংগঠনে কাজ করানো হবে, তা নিয়েও আলোচনা রয়েছে দলে। সিপিএমের একটি অংশ চায়, মিনাক্ষীকে কোনও গণ্ডিতে আটকে না রেখে দলের ‘মুখ’ করে সারা রাজ্যে ব্যবহার করতে। বিশেষত, ২০২৬ সালের ভোটের আগে নির্দিষ্ট পরিকল্পনা করে মিনাক্ষীকে ব্যবহার করা উচিত বলে মত তাঁদের।

কোন অক্ষ কী ভাবে প্রকাশ কারাটদের কাছে যুক্তির জাল বোনে, তার উপরেই সব নির্ভর করছে। মিনাক্ষীকে আরও সময় দেওয়ার পক্ষে যাঁরা, তাঁদের মধ্যে এক রাজ্য কমিটি সদস্যের বক্তব্য, ‘‘আমরা অনেক তরুণ মুখকে নিয়ে অতীতেও অনেক আদিখ্যেতা করেছি। তার ফল ভাল হয়নি। তাই সময় দেওয়া জরুরি।’’ উল্টো দিকে যাঁরা রয়েছেন, তাঁদের মধ্যে এক শ্রমিক নেতার বক্তব্য, ‘‘মিনাক্ষী পরীক্ষিত। এ কথা বলতে দ্বিধা নেই, গত বছর ওঁর নামেই ব্রিগেড ভরেছিল। ওঁকে ঈর্ষা করলে ইতিহাস ক্ষমা করবে না।’’

মিনাক্ষীকে যে মহম্মদ সেলিমেরা নেতৃত্বের সামনের সারিতে আনতে খানিকটা ‘আগ্রাসী’, তার প্রমাণ মিলেছিল গত নভেম্বরে। আরজি কর-কাণ্ডে সিবিআইয়ের তদন্তের গতি বাড়ানোর দাবি নিয়ে সিজিও কমপ্লেক্স অভিযান করেছিল সিপিএম। সে দিন দেখা গিয়েছিল কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য শ্রীদীপ ভট্টাচার্য, সুজন চক্রবর্তী, সুমিত দে-রা দাঁড়িয়েছিলেন সিজিও-র গেটের বাইরে। তাঁদের সঙ্গে ছিলেন রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য কল্লোল মজুমদার, দেবব্রত ঘোষ, পলাশ দাসও। আর স্মারকলিপি দিতে ভিতরে মিনাক্ষীকে নিয়ে গিয়েছিলেন সেলিম এবং দলের প্রাক্তন সাংসদ রামচন্দ্র ডোম। যাকে অনেকে সম্মেলন পর্বের আগে ‘বার্তা’ বলে অভিহিত করেছিলেন। রাজ্য সম্মেলনের আগে এখন বঙ্গ সিপিএমের আলোচনার অন্যতম বিষয়— অল্প দূর না বহু দূর? মিনাক্ষী যাবেন কত দূর? উত্তর দেবে এপ্রিলের মাদুরাই।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement