CPM State Conference

মার্ক্স, মিষ্টি আর মোর! শূন্যদশা কাটাতে শনিবার রাজ্য সম্মেলন শুরু, বাম পথের সন্ধান ডানকুনিতে

প্রতিনিধিদের রাখার জন্য ডানকুনিতে দিল্লি রোড এবং দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ের ধারে কমলা ইন, গোল্ডেন ইন, অলিম্পাসের মতো গোটা ১৫ হোটেল, লজ, গেস্ট হাউস শুক্রবার থেকেই প্রায় সিপিএমের দখলে।

Advertisement

শোভন চক্রবর্তী

শেষ আপডেট: ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ২০:০৩
Share:
27th West Bengal state conference of CPM is going to start from Saturday at dankuni

গ্রাফিক: আনন্দবাজার অনলাইন।

প্রায় এক যুগ হয়ে গেল পরিচালক মৈনাক ভৌমিক তৈরি করেছিলেন ‘মাছ, মিষ্টি অ্যান্ড মোর’। সেই ছবিতে হাস্যরসই ছিল মূল প্রতিপাদ্য। বাংলায় ভোটের রাজনীতিতে সিপিএম যখন অন্য দলগুলির কাছে হাস্যাস্পদ জায়গায় পৌঁছেছে, একের পর এক বড় ভোটে ‘শূন্যদশা’ কাটাতে পারছে না, তখন শনিবার থেকে হুগলির ডানকুনিতে শুরু হচ্ছে রাজ্য সম্মেলন। সে সম্মেলনে প্রতিনিধিদের পাতে মাছ পড়বে। তবে তার চেয়েও বেশি আলোচনায় থাকবেন মার্ক্স (কার্ল মার্ক্স)। সমপরিমাণে থাকবে মিষ্টিও। সাড়ে তিন দিন আলোচনা করে ডানকুনি থেকেই ২০২৬ সালে শূন্যদশা কাটানোর বামপথের বাম পথ খোঁজার নীল নকশা আঁকবে লাল পার্টি।

Advertisement

রাজ্য সম্মেলন মানে বড় খরচ। প্রায় আড়াই দশক পরে কলকাতার বাইরে সিপিএমের রাজ্য সম্মেলন হচ্ছে। জনগণের থেকে অর্থ জোগাড় করতে হুগলি জেলা সিপিএম নানাবিধ পন্থা নিয়েছিল। জেলা সিপিএম সূত্রে খবর, সেই অর্থ মোটামুটি উঠে গিয়েছে। কোচবিহার থেকে কাকদ্বীপ পর্যন্ত যে শ’পাঁচেক প্রতিনিধি আসবেন, তাঁদের আপ্যায়নের জন্য মিষ্টিতেই বেশি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। হুগলি জেলা মিষ্টির জন্য প্রসিদ্ধ। ঠিক হয়েছে এক এক দিন, এক এক জায়গার মিষ্টি দেওয়া হবে প্রতিনিধিদের। কোনও দিন চন্দননগরের বিখ্যাত দোকানের জলভরা, কোনও দিন উত্তরপাড়ার ঘট মিষ্টি। ডানকুনি হুগলির চণ্ডীতলা ব্লকের অন্তর্গত। সেই চণ্ডীতলাতেই রয়েছে জনাই। যেখানকার মিষ্টি মনোহরা প্রসিদ্ধ। রয়েছে রাবড়ি গ্রামও। যেখানে ঘরে ঘরে প্রস্তুত হয় রাবড়ি। প্রতিনিধিদের মেনুতে সে সব থাকাও খুব অপ্রত্যাশিত নয়।

তবে দলের এই ‘দুর্দিনে’ এত আতিশয্য কেন, সেই প্রশ্ন একাংশের মধ্যে রয়েছে। তেমনই অনেকের বক্তব্য, জেলায় রাজ্য সম্মেলন হচ্ছে। যাঁরা আসবেন তাঁরা অতিথি। এটুকু আপ্যায়ন তো করতেই হয়। এক নেতার কথায়, ‘‘ধর্মকর্ম না মানলেও আমরা এটুকু জানি যে অতিথিদেবো ভব।’’ দলের অন্য একটি অংশ আবার পৃথক একটি যুক্তি দিচ্ছেন। তাঁদের বক্তব্য, ‘‘আমাদের পার্টির বড় অংশের নেতার ডায়াবিটিস রয়েছে। তাঁদের এত মিষ্টি খাওয়ানো কি বিজ্ঞানসম্মত?’’ এ সব বিতর্কে অবশ্য কান দিতে চাইছেন না সিপিএম নেতৃত্ব। জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর এক সদস্যের কথায়, ‘‘এত বড় আয়োজন হচ্ছে। সেখানে এগুলো খুবই সাধারণ বিষয়। বড় কথা হল, জেলার মানুষের সহযোগিতাতেই আমরা এই বিশাল কর্মযজ্ঞের আয়োজন করতে পেরেছি।’’

Advertisement

প্রথমে সিপিএম রাজ্য সম্মেলন করার জন্য কোনও প্রেক্ষাগৃহ পাচ্ছিল না। প্রাথমিক ভাবে ঠিক হয়েছিল, খোলা জায়গায় হ্যাঙার টাঙিয়ে হবে সম্মেলন। যদিও পরে ডানকুনি কোল কমপ্লেক্সের শান্তি মঞ্চে সম্মেলন করার অনুমতি পেয়েছে তারা। উল্লেখ্য, ২০১৮ সালে এই শান্তি মঞ্চেই প্রথম দলের যুব সংগঠনের রাজ্য সভাপতি হয়েছিলেন মিনাক্ষী মুখোপাধ্যায়। পরে তিনিই সম্পাদকের দায়িত্বে। আবার সাত বছর পরে যখন মিনাক্ষী শান্তি মঞ্চে দলের রাজ্য সম্মেলনে পৌঁছবেন, তখন তিনি দলের ‘মুখ’ হয়ে উঠেছেন। যদিও নির্বাচনী রাজনীতিতে সিপিএমের শূন্যদশা কাটেনি। ২০২১ সালে নন্দীগ্রামে নিজেও হেরেছিলেন মিনাক্ষী।

প্রতিনিধিদের রাখার জন্য ডানকুনিতে দিল্লি রোড এবং দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ের ধারে কমলা ইন, গোল্ডেন ইন, অলিম্পাসের মতো গোটা ১৫ হোটেল, লজ, গেস্ট হাউস শুক্রবার থেকেই প্রায় সিপিএমের দখলে। কারণ, দূরবর্তী জেলার প্রতিনিধিরা শুক্রবার থেকেই পৌঁছতে শুরু করছেন। থাকার জায়গা থেকে সম্মেলন স্থলে যাওয়ার জন্য অবশ্য ট্রেকার ভাড়া করেছে সিপিএম। সন্দেহ নেই, যে আয়োজন হয়েছে, তাতে চার দিনে সব মিলিয়ে খরচ খুব কম নয়।

ডানকুনি থেকেই ২০২৬ সালের বিধানসভা ভোটের লক্ষ্যে যাবতীয় পরিকল্পনা নেবে সিপিএম। এ বারই প্রথম রাজ্য সম্মেলনে নির্বাচনী বিপর্যয় মোকাবিলা সংক্রান্ত বিশেষ অধিবেশন হবে। এমনিতেই সম্মেলনের প্রতিবেদনে উল্লেখ থাকছে, নিচুতলায় বিস্তর গলদ রয়েছে। সূত্রের খবর, বুথ স্তরের সংগঠনের দুর্বলতা এবং ধারাবাহিক ভাবে তা কাটাতে ব্যর্থতার কথাও উল্লিখিত রয়েছে প্রতিবেদনে। কংগ্রেস এবং আইএসএফের সঙ্গে ভোটের আগে জোট তৈরি হওয়া নিয়ে কর্মীদের মনে যে ধোঁয়াশা রয়েছে, তারও উল্লেখ রয়েছে।

আগামী মঙ্গলবার সকালে তৈরি হবে সিপিএমের নতুন রাজ্য কমিটি। কারা বাদ পড়বেন, কারা থাকবেন, কারা নতুন আসবেন, তা নিয়ে দলে জল্পনা রয়েছে। অনেককে বয়সের কারণে ‘মার্গদর্শক’ হতে হবে। সিপিএমে গুঞ্জন রয়েছে, কাউকে কাউকে হয়তো বয়স থাকতে থাকতেই রাজ্য কমিটি থেকে সরিয়ে নতুন মুখ নেওয়া হবে। তবে এই রাজ্য কমিটির নেতৃত্বেই ২০২৬ সালের ভোটে লড়বে সিপিএম।

রাজ্য সম্মেলনে মার্ক্স থাকছেন। মিষ্টি থাকছে। তবে সিপিএমের নজর ‘মোর’-এর দিকে। ২০২৬ সালে একটি আসন পেলেও তারা শূন্যদশা কাটিয়ে সেই অভীষ্টে পৌঁছতে পারবে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement