লরি চালকের দেহ উদ্ধারের ২৪ ঘণ্টায় রহস্যভেদ করল পুলিশ। প্রতীকী চিত্র।
জেরক্স মেশিন বোঝাই লরি হঠাৎই উধাও হয়ে যায় হাওড়ায়। বহু খোঁজের পর লরির সন্ধান মেলে বটে, কিন্তু চালককে কোথাও পাওয়া যায়নি। অবশেষে শুক্রবার একটি খাল থেকে উদ্ধার হয় লরি চালক মহম্মদ সাদ্দামের পচাগলা দেহ। সেই দেহ উদ্ধারের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সেই খুনের রহস্যভেদ করল দক্ষিণ ২৪ পরগনার ডায়মন্ড হারবার পুলিশ।
শনিবার ডায়মন্ড হারবারের সরিষার মুড়োগাছা এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয় মূল অভিযুক্ত সাদ্দাম মোল্লাকে। দিনভর অভিযান চালিয়ে উধাও হওয়া প্রায় ৩০টি জেরক্স মেশিন উদ্ধার করে পুলিশ। পুলিশ সূত্রে খবর, চালককে খুন করে ওই লরির খালাসিই। তার পর লরি থেকে জেরক্স মেশিন নিয়ে দালাল মারফত বিক্রির চেষ্টা করে সে।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, গত ১৫ জানুয়ারি একটি বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানের তৈরি ৫৮টি জেরক্স মেশিন ট্রাকে করে হাওড়ায় পাঠানো হচ্ছিল। কিন্তু হাওড়ার ধূলাগড় পার হওয়ার পর ট্রাকটির কোনও খোঁজ পায়নি ওই সংস্থা। এর পর অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্তে নামে পুলিশ। অনেক খোঁজাখুঁজির পর শুক্রবার ‘হারিয়ে’ যাওয়া লরির খোঁজ মেলে ডায়মন্ড হারবারে। উদ্ধার হয় মালিকের পচাগলা দেহও।
তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পারে, লরির খালাসিই চালককে খুন করেছেন। মাদক মিশ্রিত খাবার খাইয়ে প্রথমে তাঁকে অচেতন করা হয়। এর পর তাঁর গলায় ফাঁস লাগিয়ে খুন করেন তিনি। এর পর খালাসি হাতে নেয় লরির স্টিয়ারিং। হাওড়া থেকে লরি নিয়ে সে সোজা চলে আসে ডায়মন্ড হারবার। সেখানে একটি খালে মৃতদেহ ফেলে আবার লরি নিয়ে গা ঢাকা দেয় সে।
গত ২৫ জানুয়ারি সুন্দরবন পুলিশ জেলা থেকে পাচার হওয়া ৬টি জেরক্স মেশিন উদ্ধার হয়। পরে ডায়মন্ড হারবার পুলিশ জেলার রামনগর থানা এলাকা থেকেই লরি সহ ১৫টি জেরক্স মেশিন উদ্ধার করে। কিন্তু লরিচালকের সন্ধান পাওয়া যায় শুক্রবার। মৃত অবস্থায়। খাল থেকে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় তাঁর পচাগলা মৃতদেহ উদ্ধার হয় দেবীপুর এলাকায়।
এর পর শুক্রবার দিনভর তল্লাশি চালিয়ে অভিযুক্ত সাদ্দাম মোল্লাকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে আরও ৩০টি মেশিনের হদিশ মেলে। পুলিশ সূত্রে খবর, অভিযুক্ত জেরায় খুনের কথা কবুল করেছে। পুলিশ জানাচ্ছে, ধৃত সাদ্দাম বিহারের বাসিন্দা হলেও তার মামাবাড়ি ডায়মন্ড হারবারের মুড়োগাছা এলাকায়। অন্য দিকে, খুন হওয়া লরিচালকও বিহারের নওগার বাসিন্দা। তাকে খুন করে ওই জেরক্স মেশিনগুলি পাচারের ছক কষেন সাদ্দাম বলে প্রাথমিক অনুমান পুলিশের। এই ঘটনায় আরও কে বা কারা জড়িত তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ। এ বিষয়ে ডায়মন্ড হারবার পুলিশ জেলার পুলিশ সুপার অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘অজ্ঞাত পরিচয় দেহ উদ্ধারের ঘটনার তদন্তে নেমে বড়সড় সাফল্য পেয়েছে ডায়মন্ড হারবার থানা। মাত্র ২৪ ঘণ্টার মধ্যে মূল অভিযুক্তকে গ্রেফতার করা গিয়েছে।’’