নবনীত সিকেরা।
ওয়েব সিরিজ ‘ভোকাল ২’ নিয়ে বেশ মাতামাতি হচ্ছে। বিশেষ করে পুলিশ অফিসার নবনীত সিকেরাই এই সিরিজের কেন্দ্রীয় চরিত্র হয়ে উঠেছেন। অভিনেতা সিকেরার ভূমিকায় অভিনয় করেছেন মোহিত রায়না। সিকেরার জীবনের উপরে আধারিত এই সিরিজ।
যাঁকে ঘিরে এত হইচই সেই সিকেরা কে?
উত্তরপ্রদেশ পুলিশের এনকাউন্টার স্পেশালিস্ট আইপিএস নবনীত। উত্তরপ্রদেশের এটাওয়া জেলায় এক ছোট গ্রামে মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্ম।
ঘটনা ১: দ্বাদশ শ্রেণি পাশ করে বড় স্বপ্ন নিয়ে দিল্লিতে রওনা দিয়েছিলেন। সেখানে হংসরাজ কলেজে ভর্তি হওয়ার ইচ্ছা ছিল তাঁর। কিন্তু ইংরাজি না জানার জন্য নাকি তাঁকে ভর্তির ফর্ম দেওয়া হয়নি। কলেজের এক কেরানি পকেট থেকে ২ টাকা বার করে তাঁকে বলেন বাস ধরে বাড়ি চলে যেতে। বিষয়টি খুব একটা ভাল চোখে নেননি নবনীত।
এর পর আইআইটি-র জন্য প্রস্তুতি নেন। পাশও করেন। আইআইটি রুরকিতে ভর্তি হন। সেখানে সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে স্নাতক করেন।
ইঞ্জিনিয়ারিং করা ছেলেটি হঠাৎ করে কেন পুলিশের চাকরিতে?
ঘটনা ২: এর পিছনেও একটি কাহিনি রয়েছে। নবনীতদের একটি জমি ছিল, যেটা দুষ্কৃতীরা কব্জা করে রেখেছিল। বাবার কাছ খবর পেয়েই রুরকি থেকে বাড়িতে চলে আসেন তিনি। বাবাকে নিয়ে এর পর থানায় পৌঁছন অভিযোগ দায়ের করতে। কিন্তু সেখানে গিয়েও তাঁদের হেনস্থা হতে হয়। পুলিশকর্মীরা নাকি নবনীতের মুখে কাগজ ছুড়ে মারেন। ওঁর বাবা এর প্রতিবাদ করে বলেছিলেন, “আমার ছেলে ইঞ্জিনিয়র। ওর সঙ্গে এ রকম আচরণ করতে পারেন না আপনারা।” তখন পাল্টা পুলিশ আধিকারিকরা বলেছিলেন, “এ রকম অনেক ইঞ্জিনিয়র দেখেছি যাঁরা ঘুরে ঘুরে বেড়ান।”
দিল্লিতে গিয়ে প্রথমে যে ধাক্কাটা খেয়েছিলেন, সেই ধাক্কাই তাঁকে ইঞ্জিনিয়র বানিয়েছে। আর দ্বিতীয় ধাক্কাটা এসেছিল নিজের এলাকা থেকেই। আর সেই ধাক্কাই নবনীতের জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছিল। এম টেক করার স্বপ্ন ছেড়ে দিয়ে দেশের এক জন প্রশাসনিক কর্তা হওয়ার প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করেন। ইউপিএসসি পরীক্ষার প্রস্তুতি নেন। কোনও আমলা নয়, পুলিশের চাকরিকেই বেছে নিয়েছিলেন পাশ করার পর।
আইপিএস পাশ করার পর দেশের বেশ কয়েকটি জায়গায় পোস্টিংয়ের পর নিজের রাজ্যে মুজফ্ফরনগরে এসএসপি হয়ে আসেন। সেই সময় মুজফ্ফরনগরে দুষ্কৃতীদের রমরমা। দুষ্কৃতীদের দু’তিনটে গ্যাং ওই শহরে তখন দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। খুন, অপহরণ, ধর্ষণ রোজকারের ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছিল। দায়িত্ব পেয়েই প্রথমে নিজের একটা বিশেষ দল গঠন করেন দুষ্কৃতীদের শায়েস্তা করার জন্য।
আর এখান থেকেই ‘সুপার কপ’-এর সফর শুরু নবনীতের। জানা যায়, নবনীত ওই সময় ৪০টির বেশি এনকাউন্টার করেছিলেন। এর পর তাঁকে মেরঠে বদলি করে দেওয়া হয়। সেখানেও ওঁর দাপটে দুষ্কৃতীরা সিঁটিয়ে গিয়েছিল। মেরঠে ওঁর এই কাজের জন্য বেশ জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন নবনীত। এর পর লখনউয়ে বদলি করা হয় নবনীতকে। সেখানে গ্যাংস্টার রমেশ কালিয়াকে খতম করার জন্য বরযাত্রীর ছদ্মবেশে গিয়েছিলেন নবনীত ও তাঁর দল। এই ঘটনা বিপুল চর্চিত। এখনও পর্যন্ত ৬০টি এনকাউন্টার করেছেন নবনীত।