dhantala

Dhantala Rape Case: ধানতলা-অডিয়োয় গলা কাদের, এক প্রশ্নে দুই সুর পাশাপাশি বসা জগন্নাথ ও সুকান্তের

অডিয়ো ক্লিপ প্রকাশ্যে আসার পরেই জল্পনা তৈরি হয়েছে, তা হলে কি এফআইআর বদল এবং মৃতার দেহ আনার সময় পরিবর্তন করে ফায়দা তোলার চেষ্টা করছে বিজেপি?

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৭ এপ্রিল ২০২২ ২০:০৫
Share:

সাংবাদিক বৈঠকে জগন্নাথ ও সুকান্ত

ধানতলা ধর্ষণ ও খুন-কাণ্ডে দু’ভাগ রাজ্য বিজেপি। নাবালিকার অপমৃত্যুর ঘটনায় ভাইরাল হওয়া অডিয়ো ক্লিপে যে দু’জনের কণ্ঠস্বর শোনা গিয়েছে, তাঁরা কি বিজেপি কর্মী? এই প্রশ্নে কার্যত ভিন্ন সুর লক্ষ করা গেল বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার এবং রানাঘাটের সাংসদ জগন্নাথ সরকারের মন্তব্যে। রাজ্য দফতরে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে সুকান্ত ওই অডিয়ো ক্লিপে দুই তৃণমূল কর্মীর মধ্যে কথোপকথনের সম্ভাবনার বিষয়টি উস্কে দিতে চাইলেন। ঠিক তার পরেই সম্পূর্ণ উল্টো অবস্থান নিলেন জগন্নাথ। ঘটনাচক্রে, জগন্নাথ যে অবস্থান নিলেন, তা আসলে অডিয়ো ক্লিপ নিয়ে তৃণমূলের অভিযোগ স্বীকার করে নেওয়ার সমান।

বৃহস্পতিবার রাতে নাবালিকার মৃত্যুর পর প্রথমে পরিবারের তরফে শুধু আত্মহত্যায় প্ররোচনার অভিযোগ দায়ের করা হলেও পরে তা বদল করে ধর্ষণ ও খুনের অভিযোগ দায়ের করেন মৃতার বাবা। ওই অভিযোগের ভিত্তিতেই তদন্তে নেমে মৃতার পিসি, জামাইবাবুকে গ্রেফতার করে ধানতলা থানার পুলিশ। হঠাৎ মৃতার পরিবারের এই বয়ান এবং অভিযোগ বদল নিয়ে তরজার মধ্যে প্রকাশ্যে আসে ওই অডিয়ো ক্লিপ। সেই ক্লিপে দুই ব্যক্তিকে ধানতলার ঘটনায় এফআইআর পরিবর্তন নিয়ে নিজেদের মধ্যে আলোচনা করতে শোনা গিয়েছে। স্থানীয় থানার ওসিকেও ‘চাপে’ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি, এক ব্যক্তিকে বলতে শোনা গিয়েছে, ‘কাল বডি আসতে আসতে সন্ধেবেলা হয়ে যাবে। কাজ হবে না। তা হলে ডেটটা পরশু দিন কর। সে দিন যদি আসে, তা হলে এখানে পলিটিক্যাল মাইলেজ নিতে হবে আমাদের...।’ ওই অডিয়ো ক্লিপে ‘বাবুদা’ বলে এক জনের নামও উল্লেখ করা হয়েছে। যদিও অডিয়ো ক্লিপটি আনন্দবাজার অনলাইন যাচাই করে দেখেনি।

Advertisement

অডিয়ো ক্লিপ প্রকাশ্যে আসার পরেই জল্পনা তৈরি হয়েছে, তা হলে কি এফআইআর বদল এবং মৃতার দেহ আনার সময় পরিবর্তন করে রাজনৈতিক ফায়দা তোলার চেষ্টা করছে বিজেপি? এই নিয়ে জল্পনার মাঝে জগন্নাথ আগেই স্বীকার করেছেন, ওই অডিয়ো ক্লিপটি দুই বিজেপি কর্মীর মধ্যে কথোপকথনেরই। আনন্দবাজার অনলাইনকেই তিনি বলেন, ‘‘ওই অডিয়ো টেপে যাঁরা কথা বলছেন, তাঁরা আমাদের বিজেপি কর্মী। কিন্তু তাঁরা কোনও আপত্তিকর আলোচনা করেনি। হাঁসখালির ঘটনা নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী যা বিবৃতি দিয়েছেন, তার পর তৃণমূল নেতাদের আর মুখ দেখানোই উচিত নয়।’’

এর পরেই রবিবার সন্ধ্যায় রাজ্য বিজেপির দফতরে ধানতলার ঘটনায় ভাইরাল হওয়া অডিয়ো ক্লিপ প্রসঙ্গে সুকান্ত বলেন, ‘‘দু’টি কণ্ঠস্বর দুই বিজেপি কর্মীর বলে অভিযোগ। কিন্তু ওই কণ্ঠস্বর তো কোনও তৃণমূল কর্মীরও হতে পারে। বিজেপির নেতা-কর্মীরা কি আদৌ মামলা সাজাতে পারে? ধানতলায় সেই ক্ষমতা বিজেপির থাকলে তো রাজ্য সরকার আমাদের হাতে থাকা দরকার ছিল। পুলিশ আমাদের কথা মতো মামলা সাজাবে, এটা তো ভাবাই যায় না! তর্কের খাতিরে যদি ধরে নিই, ওই কণ্ঠস্বর দুই বিজেপি কর্মীরা, তা হলেও ভুল কিছু বলা হয়নি। রাজ্যে যে ভাবে ধর্ষণের ঘটনা চলছে, তাতে ইস্যু তো করতেই হবে।’’

Advertisement

সুকান্ত যখন এই কথা বলছেন, তখন পাশেই বসা জগন্নাথ। রাজ্য সভাপতি নিজে এ বিষয়ে জগন্নাথকে বিস্তারিত বলতে বলেন। এর পর মাইক হাতে নিয়ে রানাঘাটের সাংসদ স্বীকার করেন নেন, অডিয়ো ক্লিপের কণ্ঠস্বর দুই বিজেপি কর্মীরই। পাশাপাশিই, তিনি বলেন, ‘‘ওই অডিয়ো থেকে একটা বিষয় পরিষ্কার, বিজেপি একটা সুশৃঙ্খল দল। দল ইচ্ছাকৃত ভাবে বদনাম করতে চায় না। সেই কারণেই বলা হয়েছে বিষয়টাকে দেখে, ভেবে চিন্তে ধীরে সুস্থে ইস্যু করতে হবে।’’

প্রসঙ্গত, ওই অডিয়ো ক্লিপ প্রকাশ্যে আসার পরেই তৃণমূল দাবি করেছিল, ফোনে যে দুই ব্যক্তির মধ্যে কথোপকথন শোনা গিয়েছে, তাঁরা দু’জনেই বিজেপি নেতা। তাঁদের মধ্যে এক জন ব্লক সভাপতি, অন্য জন মণ্ডল সভাপতি। রানাঘাট সাংগঠনিক জেলা তৃণমূল সভাপতি রত্না ঘোষ কর বলেন, ‘‘যে কোনও মৃত্যুই দুঃখজনক। কিন্তু মৃত্যুকে কেন্দ্র করে বিজেপি যে নোংরা রাজনীতি শুরু করেছে, তা ওই অডিয়োটি থেকে পরিষ্কার। বিজেপির মুকুটমণি অধিকারী (রানাঘাট দক্ষিণের বিধায়ক) ও বাবু চট্টোপাধ্যায়ের (নদিয়ায় বিজেপির জেলা কমিটির সদস্য) মতো শীর্ষনেতার নাম উঠে এসেছে। ওরা বাংলাকে উত্তরপ্রদেশ বানাতে চাইছে। ওদের এই চক্রান্ত কখনওই সফল হবে না।’’

শাসকদলের এই অভিযোগ খারিজ করে ভাইরাল হওয়া অডিয়ো ক্লিপের সঙ্গে বিজেপির কোনও যোগ নেই বলে প্রথমে দাবি করেছিলেন দলের নদিয়া দক্ষিণ সাংগঠনিক জেলা সভাপতি পার্থসারথি চট্টোপাধ্যায়। এর পরেই জগন্নাথ স্বীকার করে নিয়েছিলেন, ওই দুই কণ্ঠস্বর দুই বিজেপি নেতারই। যদিও তাঁদের নাম উল্লেখ করেননি তিনি।

অডিয়ো ক্লিপ বিতর্কে বিধায়ক মুকুটমণির সঙ্গেও যোগাযোগ করা হয়েছে আনন্দবাজার অনলাইনের পক্ষ থেকে। অডিয়ো ক্লিপে ‘পলিটিক্যাল মাইলেজ’ প্রসঙ্গে তাঁর মতামত জানতে চাওয়া হয়েছিল। ওই বিষয়টি সম্পূর্ণ এড়িয়ে গিয়ে মুকুটমণি শুধু বলেন, ‘‘ধর্ষণ নিয়ে তৃণমূলের কোনও নেতার বিবৃতির উত্তর দেওয়ার প্রয়োজন আছে বলে বাংলার মানুষ মনে করে না।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement