(বাঁ দিক থেকে) ঝাড়খণ্ডের ডিজিপি অজয় কে সিংহ, পশ্চিমবঙ্গের ডিজিপি মনোজ মালবীয় এবং বিহারের ডিজিপি আরএস ভাট্টি। —নিজস্ব চিত্র।
পঞ্চায়েত ভোটের মনোনয়ন পর্ব এবং তার পরবর্তী সময়েও রাজ্যে হিংসার অভিযোগ উঠছে। কিন্তু পঞ্চায়েত নির্বাচনের আবহে ‘ছোট ঘটনাকে বড় করে দেখানো হচ্ছে’ বলে এ বার সংবাদমাধ্যমের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুললেন রাজ্য পুলিশের ডিজি মনোজ মালবীয়। মঙ্গল বার তিন রাজ্যের পুলিশ-প্রধান বৈঠকে বসেছিলেন। তার পরের সাংবাদিক বৈঠকে ওই মন্তব্য করেন এ রাজ্যের ডিজি।
আগামী ৮ জুলাই রাজ্যে পঞ্চায়েত ভোট। মনোনয়ন পর্ব থেকেই অশান্তি শুরু হয়েছে রাজ্যের একাধিক জায়গায়। এখনও তা অব্যাহত। বিরোধী-শাসকের সেই গন্ডগোলের আবহে দিন কয়েক আগে দক্ষিণ ২৪ পরগনায় গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছিলেন, পঞ্চায়েত ভোটে এত শান্তিপূর্ণ মনোনয়ন আগে রাজ্য দেখেনি। এ বার একই কথা শোনা গেল রাজ্য পুলিশের ডিজির মুখে। তিনি রাজ্যে হিংসার সমস্ত অভিযোগ কার্যত উড়িয়েই দিয়েছেন। উল্টে তিনি দায় ঠেলেছেন সংবাদমাধ্যমের উপর। ডিজি জানিয়েছেন, ছোট ছোট ঘটনাকেও সংবাদমাধ্যম এমন ভাবে দেখাচ্ছে, যা উচিত নয়। মঙ্গলবার ঝাড়খণ্ডের ডিজি অজয় কে সিংহ, বিহার পুলিশের ডিজি আরএস ভাট্টির সঙ্গে সমন্বয় বৈঠকে বসেন এ রাজ্যের ডিজি। সেই বৈঠকের পরেই সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হন তিন রাজ্যের ডিজি। সেখানে পঞ্চায়েত ভোটে হিংসার প্রসঙ্গ উঠলে মালবীয় সাফ জানান, নির্বাচন ছাড়া এমনিও রাজ্যে কিছু ঘটনা হয়েই থাকে। নির্বাচনের পর তিনি সংবাদমাধ্যমকে জানাবেন, হিংসার পরিসংখ্যান বেড়েছে নাকি কমেছে। তাঁর পরেই অভিযোগের সুরে রাজ্য পুলিশের ডিজি মালবীয় বলেন, ‘‘ছোট ছোট ঘটনাকেও যদি মিডিয়া এমন দেখায় যে, বাংলায় এ রকম হচ্ছে, ও রকম হচ্ছে, এটা উচিত নয়।’’
মনোজ দু’-তিনটে হিংসার ঘটনার কথা মেনে নিয়ে জানিয়েছেন, উপর মহল থেকে তা নিয়ন্ত্রণের নির্দেশ রয়েছে। তাঁর কথায়, ‘‘দু-তিনটে ঘটনা হচ্ছে, যেখানে পুলিশ দ্রুত পদক্ষেপ করেছে। উপর থেকে নির্দেশও রয়েছে যে, কোনও এ ধরনের ঘটনা হলে তাকে দ্রুত নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে। এমন কোনও ঘটনা হয়নি, যা আমরা নিয়ন্ত্রণে আনতে পারিনি। পুলিশ নিজেদের কাজ করছে।’’ ডিজির আশ্বাস, ‘‘আপনাদের নিশ্চিত করে বলছি, নির্বাচনে পুলিশ ভাল ভাবে কাজ করবে।’’
এর আগে শাসক দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘জনসংযোগ যাত্রা’ কর্মসূচির শেষ দিনে দক্ষিণ ২৪ পরগনার কাকদ্বীপে গিয়েছিলেন মমতা। নামখানার ওই জনসভায় মমতা জানিয়েছিলেন, মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে নন, তৃণমূলের নেত্রী হিসাবে তিনি বক্তব্য রাখতে এসেছেন। তার পরই পরিসংখ্যান তুলে ধরে বলেন, ‘‘২ লক্ষ ৩১ হাজার মনোনয়ন জমা পড়েছে। এত শান্তিপূর্ণ মনোনয়ন এর আগে কখনও হয়নি।’’ বাম আমলের ‘অশান্তি’র প্রসঙ্গও টেনে এনেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। পরিসংখ্যান তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘‘২০০৩ সালে ৭০ জন মারা গিয়েছিলেন। ২০০৮ সালে মারা গিয়েছিলেন ৩৬ জন।’’
পঞ্চায়েত ভোটে প্রতিবেশী রাজ্য থেকে অস্ত্র আমদানি রোখার বিষয়েও মঙ্গলবারের সমন্বয় বৈঠকে আলোচনা হয়েছে। মনোজ জানিয়েছেন, বিহার বা ঝাড়খণ্ড থেকে যাতে অস্ত্র এ রাজ্যে না ঢোকে, তাই বাংলার সীমানায় নাকা চেকিং শুরু হবে। বিহারের ডিজি আরএস ভাট্টি জানিয়েছেন, শুধু মুঙ্গের থেকেই বেআইনি অস্ত্র উদ্ধার হয় না। এখন আগের থেকে অনেক বেশি বেআইনি অস্ত্র উদ্ধার হচ্ছে। সাইবার অপরাধ দমনের বিষয়েও ইতিবাচক আলোচনা হয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি।