মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। —ফাইল চিত্র।
শেষ দিনে চার জনের মৃত্যু, গোটা মনোনয়ন পর্ব জুড়ে রাজ্যে বেশ কিছু হামলা, সংঘর্ষ, বোমাবাজি, গোলাগুলির ঘটনা ঘটলেও মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মনে করেন— পঞ্চায়েত ভোটে এত শান্তিপূর্ণ মনোনয়ন এর আগে পশ্চিমবাংলা দেখেনি। অতীতের তিনটি পঞ্চায়েত ভোটে (তার মধ্যে দুটি বাম আমলের) মৃত্যুর সংখ্যা তুলে ধরার সঙ্গেই মমতার আরও দাবি, এ বার ভাঙড়ে যে লাগাতার হিংসার ঘটনা হয়েছে তার দায় বিরোধীদেরই।
শুক্রবার অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘তৃণমূলে নবজোয়ার’ কর্মসূচির শেষ দিন ছিল। দক্ষিণ ২৪ পরগনার কাকদ্বীপে নামখানার ইন্দিরা ময়দানে অভিষেকের সভায় বক্তব্য রাখেন মমতা। সেই সভা থেকে বিজেপি, কংগ্রেস, সিপিএমকে একই বন্ধনীতে রেখে আক্রমণ শানিয়েছেন তিনি। তাঁর আক্রমণের নিশানা থেকে বাদ পড়েনি আইএসএফ-ও। তবে সরাসরি নওশাদ সিদ্দিকি কিংবা তাঁর দলের নাম করেননি তিনি। তিনি বলেন, “ভাঙড়ের ঘটনা কিছু গুন্ডা করেছে। তৃণমূল করেনি। আমাদের দু’জন কর্মী মারা গিয়েছে।” সেখানকার একটি দল মানুষকে প্ররোচিত করেছে বলে অভিযোগ করলেও, নির্দিষ্ট কোনও দলের নাম করেননি তিনি। ভাঙড়ে অশান্তির পিছনে বিজেপির টাকা রয়েছে বলেও অভিযোগ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী।
সভার শুরুতেই মমতা জানিয়ে দেন, মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে নন, তৃণমূলের নেত্রী হিসাবে তিনি বক্তব্য রাখতে এসেছেন। তার পরই পরিসংখ্যান তুলে ধরে বলেন, ‘‘২ লক্ষ ৩১ হাজার মনোনয়ন জমা পড়েছে। এত শান্তিপূর্ণ মনোনয়ন এর আগে কখনও হয়নি।’’ বাম আমলের ‘অশান্তি’র প্রসঙ্গও টেনে আনেন মুখ্যমন্ত্রী। পরিসংখ্যান তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘‘২০০৩ সালে ৭০ জন মারা গিয়েছিলেন। ২০০৮ সালে মারা গিয়েছিলেন ৩৬ জন।’’
তাঁর আমলে ২০১৩ সালের পঞ্চায়েত ভোট নিয়ে তৎকালীন রাজ্য নির্বাচন কমিশনার মীরা পাণ্ডের সঙ্গে সরকারের দ্বন্দ্ব সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত গড়িয়েছিল। শেষ পর্যন্ত মীরার মত মেনে কেন্দ্রীয় বাহিনী নামানো হয়েছিল সেই ভোটে। এ বারের ভোটে কমিশন না-চাইলেও বিরোধীদের দাবি মেনে কেন্দ্রীয় বাহিনী নামানোর নির্দেশ দিয়েছে কলকাতা হাই কোর্ট। মমতা ২০১৩ সালের ভোটের প্রসঙ্গ তুলে বলেন, ‘‘কী করেছিল কেন্দ্রীয় বাহিনী? ২০১৩ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনে কেন্দ্রীয় বাহিনী থাকলেও ৩৯ জনের মৃত্যু হয়েছিল।’’ কেন্দ্রীয় বাহিনী প্রসঙ্গে মণিপুর হিংসার কথাও তোলেন তিনি। বলেন, ‘‘সেন্ট্রাল ফোর্স তো মণিপুরেও নিয়ে গেল। কী হল? সেন্ট্রাল মিনিস্টারের বাড়িই জ্বালিয়ে দিয়েছে। ১৫০ জন মারা গিয়েছে। কিছু করতে পারেনি।’’
মুখ্যমন্ত্রী বক্তব্য রাখতে ওঠার আগে বলেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক। নিজের বক্তব্যে নবজোয়ার যাত্রার ‘সাফল্যে’র জন্য সকলকে ধন্যবাদ জানান ডায়মন্ড হারবারের সাংসদ। মুখ্যমন্ত্রীর মতোই মনোনয়ন পর্ব নিয়ে মুখ খোলেন তিনিও। অভিষেক বলেন, “জেলা পরিষদের ১০০ শতাংশ আসনে মনোনয়ন হয়েছে। বিজেপি, সিপিএম বলতে পারবে না, তাদের প্রার্থীকে মনোনয়ন দিতে দেওয়া হয়নি।” দলের বিক্ষুব্ধ প্রার্থীদের হুঁশিয়ারি দিয়ে অভিষেক বলেন, “জোড়াফুল প্রতীক যার কাছে থাকবে, সে-ই তৃণমূলের প্রার্থী। পার্টির সঙ্গে যারা বেইমানি করবে, তাদের তৃণমূলে আর নেওয়া হবে না।”
অভিষেক বক্তব্য শেষ করার পরে বক্তব্য রাখতে ওঠেন মমতা। তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা পরিবারতন্ত্র চালানোর অভিযোগ উড়িয়ে একটি পুরনো ছবি তুলে ধরে তিনি জানান, অভিষেক ২ বছর বয়স থেকে রাজনীতি করছে। ছবিতে মুখ্যমন্ত্রী এবং তাঁর মা গায়ত্রী বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে দেখা যায় ছোট বয়সের অভিষেককে।