চায়ের দোকানে কাজ করেও আইএএস! দিনহাটায় জীবনযুদ্ধের গল্প শোনাবেন মহারাষ্ট্রের আনসার

এর মধ্যেই সব থেকে কমবয়সি আইএএস উত্তীর্ণদের তালিকায় চলে এসেছেন আনসার। মহারাষ্ট্রের জালনা জেলার শেলগাঁও গ্রামের বাসিন্দা ওই তরুণ।

Advertisement

অরিন্দম সাহা

কোচবিহার শেষ আপডেট: ০১ অগস্ট ২০১৯ ০২:০১
Share:

আনসার আহমেদ শেখ

কখনও রেস্তোরাঁয় কাজ করেছেন দিনে ৮০ টাকা মজুরিতে। দোকানের চেয়ারটেবিল সাফাই থেকে খদ্দেরদের চা এগিয়ে দেওয়া, সবই করতে হয়েছে তাঁকে। কখনও কোচিং সেন্টারে কাজ করে রোজগার করেছেন আর একটু বাড়তি টাকা। অটোচালক বাবা আর খেতমজুর মা যা উপার্জন করতেন, ছ’জনের সংসারের জন্য তা যথেষ্ট নয়। তাই নিজের পড়া চালাতে পথে নামতেই হয়েছিল আনসার আহমেদ শেখকে। মেধাবী ছাত্রটি কিন্তু নিজের লক্ষ্য থেকে সরেননি। সাফল্য এল ২০১৬ সালে। যাবতীয় কঠিন পরীক্ষায় উতরে ওই বছরই আইএএস-এর খাতায় সরকারি ভাবে নাম লেখান তিনি। তখন তাঁর বয়েস মোটে ২১ বছর। কাজের সূত্রেই মহারাষ্ট্রের খরা কবলিত শেলগাঁওয়ের বাসিন্দা আনসার এখন কোচবিহারে। কিছু দিনের মধ্যে দিনহাটার মহকুমাশাসকের দায়িত্ব নেবেন। তার আগে শোনাচ্ছিলেন লড়াইয়ের কথা।

Advertisement

এর মধ্যেই সব থেকে কমবয়সি আইএএস উত্তীর্ণদের তালিকায় চলে এসেছেন আনসার। মহারাষ্ট্রের জালনা জেলার শেলগাঁও গ্রামের বাসিন্দা ওই তরুণ। বাবা আহমেদ, মা আজমা, দুই দিদি আর এক দাদা মিলিয়ে ছ’জনের সংসার। বাবা অটো চালিয়ে যা আয় করতেন, তা দিয়ে নুন আনতে পান্তা ফুরনোর জোগাড়। মা চাষের কাজে দৈনিক মজুরি খেটে কিছুটা সাহায্য করতেন সংসারে আর আনসারের পড়ায়। এই অবস্থায় দাদার পড়ার খরচ চালাতে ভাই আনিস পড়াশোনা ছেড়ে দিয়ে কাজ শুরু করেন। আনসার নিজে গ্রামের রেস্তোরাঁয় কাজ করেছেন। ‘‘কষ্ট ছিল, কিন্তু সবাই মিলে তাকে হারিয়ে দিয়েই পড়াশোনা করেছি,’’ বলছিলেন তিনি। বলছিলেন, “বিজ্ঞান পড়ার সামর্থ্য ছিল না। স্কুল সেরা হয়েও তাই কলা বিভাগে ভর্তি হয়েছি।”

মরাঠি মাধ্যমের সাধারণ সরকারি স্কুলে পড়াশোনা করেছেন। আনসার বলেন, ‘‘বাড়িতে পড়া দেখানোর মতো কেউ ছিলেন না। তবে শিক্ষকদের সাহায্য পেয়েছি। দশম শ্রেণির পরীক্ষার পরে কম্পিউটার কোর্স করতে চেয়েছিলাম। টাকা জোগাড় করতে রেস্তোরাঁয় কাজ নিই।’’

Advertisement

তাঁর এই লড়াইয়ের কাহিনি নিয়ে আনসার কোচবিহারের তরুণ প্রজন্মকে উৎসাহিত করতে চান। প্রশাসনের উদ্যোগে এই জেলায় উত্তরবঙ্গ রাষ্ট্রীয় গ্রন্থাগারে চাকরিপ্রার্থী তরুণ-তরুণীদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। রাষ্ট্রবিজ্ঞানের ছাত্র আনসার বলেন, “ওই প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে যাব। আমার জীবনের কথা বলব। আমি যদি প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে অভাব অনটনের মধ্যে সাধারণ সরকারি স্কুলে পড়াশোনা করে আইএএস হতে পারি, তা হলে যে কেউ নিজের দক্ষতা, ক্ষমতা বুঝে ঠিকমতো চেষ্টা করলে নিজেদের লক্ষ্যপূরণ করতে পারবে।” কোচবিহারের জেলাশাসক কৌশিক সাহা বলেন, “আনসার আমাদের গর্ব। ওঁর জীবনের কথা অন্যদের উদ্দীপ্ত করবে। তিনি প্রশিক্ষণকেন্দ্রে ক্লাসও নেবেন।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement