শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার দাবিতে স্কুল পড়ুয়াদের অবস্থান-বিক্ষোভ। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক।
রাজ্যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ফের খোলার দাবি আরও জোরালো হচ্ছে। কোভিড-বিধি এবং সতর্কতা মেনে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের দরজা খুলে দেওয়ার পক্ষে সরব হয়ে নানা কর্মসূচি নিচ্ছে রাজ্যের বিভিন্ন শিক্ষক, শিক্ষাকর্মী ও অন্যান্য সংগঠন। কলকাতায় বৃহস্পতিবার অবস্থান কর্মসূচিও শুরু হয়েছে। সরকারি সূত্রে অবশ্য বলা হচ্ছে, প্রশাসনিক স্তরে গোটা পরিস্থিতির পর্যালোচনার পরে এই বিষয়ে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া যেতে পারে।
খেলা, মেলা, ভোট, দু’শো জনকে নিয়ে বিয়ে বাড়ি, বিউটি পার্লার, জিম সবই যদি চালু থাকতে পারে, তা হলে কেন স্কুল-কলেজ খোলা হবে না? এই প্রশ্নই তুলছেন বিভিন্ন জেলার শিক্ষক ও অভিভাবকদের একাংশ। মাধ্যমিক শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী সমিতির তরফে এ দিন স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে ফের পঠন-পাঠন শুরুর আবেদন জানিয়ে মুখ্যমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রীকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। সমিতির সদস্যেরা জানান, স্কুল-কলেজ না খুললে জেলায় জেলায় তাঁরা বৃহত্তর আন্দোলনে যাবেন। প্রয়োজনে রাস্তা অবরোধও করবেন শিক্ষকেরা। সমিতির সাধারণ সম্পাদক বিশ্বজিৎ মিত্রের মতে, “কর্পোরেট ব্যবসায়ীদের হাতে শিক্ষাকে তুলে দেওয়ার জন্য নানা ধরনের বেসরকারি অ্যাপের সাহায্যে অনলাইন শিক্ষার পক্ষে সওয়াল করছেন শিক্ষা প্রশাসনের কর্তা-ব্যক্তিরা! এর ফলে দেশের দরিদ্র অংশের ছাত্র-ছাত্রীরা ক্রমশ শিক্ষা থেকে দূরে সরে যাচ্ছে।”
আলিপুরদুয়ারের ছাত্র শিক্ষক অভিভাবক মঞ্চ এ দিন জেলা স্কুল পরিদর্শকের দফতরের সামনে বিক্ষোভ দেখিয়ে স্কুল খোলার পক্ষে দাবিপত্র দিয়েছে। এক ছাত্রীর বক্তব্য, স্কুল খোলার জন্য এই লড়াই কোনও দলের নয়, সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের পক্ষ থেকে তাঁরা লড়তে এসেছেন। বঙ্গীয় প্রাথমিক শিক্ষক সমিত ১৭ খেকে ২২ জানুয়ারি ‘সারা বাংলা প্রতিবাদ সপ্তাহ’ এবং ‘চলো স্কুলে পড়াই’ কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। সমিতির সাধারণ সম্পাদক আনন্দ হান্ডা জানান, স্কুল বন্ধের বিরোধিতায় শিক্ষকদের অনেকে ছাত্র-ছাত্রীদের নিয়ে মাঠে, ক্লাবঘরে বা বারান্দায় পড়ানো শুরু করেছেন। স্বাস্থ্যবিধি মেনে প্রাথমিক স্তর থেকে অবিলম্বে পঠন-পাঠন চালু না করা পর্যন্ত এই ভাবে পাঠদান চালিয়ে যাবেন ওই শিক্ষকেরা।
অবিলম্বে মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের ছাত্র-ছাত্রীদের নিয়মিত ক্লাস, প্র্যাকটিক্যাল ক্লাস করানোর সঙ্গে সঙ্গে পঞ্চম থেকে দ্বাদশ শ্রেণির পঠন-পাঠন শুরুর দাবি বিকাশ ভবনে জানিয়েছে রাজ্যের প্রধান শিক্ষক শিক্ষিকাদের সংগঠন ‘অ্যাডভান্স্ড সোসাইটি ফর হেডমাস্টার্স এন্ড হেডমিস্ট্রেসেস’।
স্কুল-কলেজ খোলার দাবিতে হতে শুরু করেছে বিভিন্ন রাজনৈতিক ও অরাজনৈতিক সংগঠনও। রাজ্যের সর্ব স্তরের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান অবিলম্বে খোলার দাবিতে ‘সারা বাংলা সেভ এডুকেশন কমিটি’ ২৭ জানুয়ারি রাজ্য জুড়ে বিক্ষোভ, ধর্না, পদযাত্রা এবং সই সংগ্রহ অভিযানের ডাক দিয়েছে। কমিটির সম্পাদক তরুণকান্তি নস্কর এ দিন জানিয়েছেন, মুখ্যমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রীর কাছে দাবিপত্র পাঠানো হবে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার দাবিতে ছাত্র সংগঠন ডিএসও’র নেতৃত্বে রাজ্য জুড়ে দু’দিনের অবস্থান-বিক্ষোভ কর্মসূচি শুরু হয়েছে এ দিনই। একই দাবিতে পড়ুয়াদের মায়েদের আগামী ২৮ জানুয়ারি রাজ্য জুড়ে ধর্না, বিক্ষোভ, পদযাত্রায় শামিল হওয়ার আহ্বান জানিয়েছে মহিলা সাংস্কৃতিক সংগঠন (এমএসএস)। সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তীও ফের প্রশ্ন তুলেছেন, ‘‘রাজ্যের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, করোনা সংক্রমণের গতি কমছে। যদিও পরীক্ষা কমে গিয়েছে। তবু সব কিছু খুলে গেলে স্কুল-কলেজই শুধু বন্ধ থাকবে? কেন ‘ডিজ়িটাল ডিভাইড’-এর দিকে ঠেলে দেওয়া হবে ছাত্র-ছাত্রীদের?’’