নেতাইয়ের শহিদ বেদী। ফাইল চিত্র।
এক দশক পেরিয়েছে। লালগড়ের নেতাই গ্রামে গুলিতে জখম গ্রামবাসীদের বেশিরভাগই এখনও চাকরি পাননি। অথচ মৃতদের পরিজনেরা চাকরি পেয়েছেন। ৭ জানুয়ারি আরও একটা নেতাই দিবসের আগে তাই ক্ষোভের আঁচ জঙ্গলমহলের এ তল্লাটে।
২০১১ সালের ৭ জানুয়ারি নেতাইয়ে সিপিএমের সশস্ত্র শিবির থেকে গুলি চালানোর অভিযোগ ওঠে। নিহত হন ৪ মহিলা-সহ ৯ গ্রামবাসী। জখম ২৮ জন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পরে মৃতদের পরিজন ও আহতরা আর্থিক ক্ষতিপূরণ পান। পরে মৃতদের পরিবারের এক জনকে চাকরিও দেওয়া হয়। আর জখম ২৮ জনের মধ্যে মাত্র ৬ জনের চাকরির ব্যবস্থা হয়েছে। একজন জখম পরে স্থানীয়ভাবে চুক্তিভিত্তিক সরকারি কাজ পেয়েছেন। আর একজন জখমের মৃত্যু হয়েছে বছরখানেক আগে। সব মিলিয়ে এখনও ২০ জন জখম চাকরি পাননি। তাঁদের ক্ষোভ, শুভেন্দু অধিকারী যখন তৃণমূলের মন্ত্রী ছিলেন, মূলত তাঁর উদ্যোগেই দখম ৬ জনের চাকরির ব্যবস্থা হয়। শুভেন্দু বিজেপিতে যেতে সব তৎপরতা বন্ধ হয়েছে। জেলার তৃণমূল নেতা-নেত্রীদের কাছে আবেদন-নিবেদন করেও লাভ হচ্ছে না।
নেতাইয়ে এখন শহিদ স্মরণের তোড়জোড় চলছে। গ্রামে ঢোকার মুখে ভীমচকে নেতাই শহিদ স্মৃতিরক্ষা কমিটির উদ্যোগে শহিদ-স্মৃতি তর্পণের তোরণ করা হয়েছে। তার দু’পাশে মমতা ও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবি। শহিদ স্মৃতিরক্ষা কমিটির সহ-সভাপতি ভাগবত সিংয়ের বাবা শক্তিপদ সিং গুলিতে জখম হয়েছিলেন। ভাগবতও বলছেন, ‘‘বুকে গুলি লাগলেও বরাতজোরে বাবা বেঁচে যান। কিন্তু দশ বছর পেরিয়ে গেলেও কাজের ব্যবস্থা হয়নি। বাবা বয়স্ক। তাহলে আমাকে কেন চাকরি দেওয়া হল না?’’ পারুল পাত্রের বাঁ ঘাড়ে গুলি লেগেছিল। তাঁরও প্রশ্ন, ‘‘জঙ্গলমহলে কত লোককে দিদি চাকরি দিয়েছেন। তাহলে আমি বা আমার ছেলে চাকরি পাব না কেন?’’
একই প্রশ্ন তুলেছেন গুলিতে জখম সংকীর্তন রায়, লক্ষ্মণ সেন, নব ঘাটা, গুরাই দাস, অসীম রায়, সলিল পাল, বন্দনা মণ্ডলা। সংকীর্তন তো ক্ষোভের সুরে বলছেন, ‘‘জঙ্গমহলে মাওবাদী, চোর-বদমাশ সবাই বিশেষ প্যাকেজে চাকরি পেয়ে গেল। যারা এক সময় এলাকায় এসে চমকাত, তারা এখন স্পেশাল হোমগার্ড!’’ সংকীর্তন, পারুলদের আক্ষেপ, ‘‘শুভেন্দুবাবুর হস্তক্ষেপে হাতে গোনা কয়েকজন জখম চাকরি পেয়েছেন। এখন জেলার নেতারা আমাদের আবেদনপত্র নেন। কিন্তু সেগুলি দিদির কাছে আদৌ পৌঁছয় কি না জানি না।’’
জেলা বিজেপির সাধারণ সম্পাদক অবনী ঘোষের কটাক্ষ, ‘‘যাঁদের ব্যবহার করে তৃণমূল ক্ষমতায় এসেছে, পরে তাঁদেরই ভুলে গিয়েছে। তবে শুভেন্দুবাবু যে নেতাইবাসীর জন্য কাজ করেছেন, সেটা বাসিন্দাদের বক্তব্যেই স্পষ্ট।’’ নেতাইয়ের বাসিন্দা লালগড় অঞ্চল যুব তৃণমূলের সভাপতি জয় রায় যদিও বলছেন, ‘‘শুভেন্দু অধিকারী দলে থাকার সময় নেতাই-নন্দীগ্রাম দেখতেন। নন্দীগ্রামে আহতদের সকলেই চাকরি পেয়েছেন। অথচ তিনি নেতাইয়ের সব জখমদের বিষয়ে পদক্ষেপ করেননি।’’ জয়ের দাবি, নেতাইয়ের জখমদের বিষয়টি দলের উচ্চ নেতৃত্বকে জানানো হয়েছে।’’ নেতাইয়ের জখমরা বলছেন, ‘‘নেতাই দিবসে রাজ্য নেতারা এলে তাঁদের কাছেই জবাব চাইব।’’