খেজুর রস থেকে গুড় তৈরি করা, তার কারবার নিয়েই চলে দিনযাপন। —নিজস্ব চিত্র।
শীতের জমাটি ঠান্ডায় নাকি নলেন গুড়ের গন্ধ খোলতাই হয়। সে গুড় চেখে স্বাদের ফারাক বুঝতে পারেন সমঝদারেরা। তাঁদের নজরে উতরোতে খামতি রাখছেন না গুড়ের কারবারিরা।
শহুরে বাসিন্দাদের অনেকের কাছেই গুড় তৈরির পদ্ধতি অজানা। অনেকের মনে পড়তে পারে নরেন্দ্রনাথ মিত্রের ‘রস’ গল্পের কথা। রসিকেরা মনে করিয়ে দেন অমিতাভ বচ্চন এবং নূতন অভিনীত ‘সওদাগর’ ফিল্মের কথাও। সুধেন্দু রায় পরিচালিত ১৯৭৩ সালের যে ফিল্মের হাত ধরেই জাতীয় পুরস্কার পেয়েছিলেন অভিতাভ। খেজুর রস থেকে নলেন গুড় তৈরি করেন কারবারিরা। ফিল্মের কাহিনির মতো টানাপড়েন নয়। বরং বেশ সাদামাটা জীবন। পসার জমাতে বছর পাঁচেক ধরেই মানকরের গ্রামের কাছে ঘাঁটি গেড়ে বসছেন তাঁরা। পূর্ব-পশ্চিম বর্ধমানের মাঝামাঝি জায়গায় অভিরামপুর এবং বুদবুদের লাগোয়া ঘাঁটিতে বসেই নিজেদের হাতের জাদু দেখাচ্ছেন নলেন গুড়ের কারবারিরা।
শীতের মরসুমে খেজুর রস থেকে গুড় তৈরি করেই কেটে যায় নদিয়ার নাকাশিপাড়ার এই বাসিন্দাদের। গুড় তৈরির জন্য প্রায় সাড়ে তিনশো খেজুর গাছ লিজ নিয়েছেন তাঁরা। রস থেকে গুড় তৈরি করা, তার কারবার নিয়েই চলে দিনযাপন। মানকরের গ্রামের কাছে যাতায়াতের পথেই ঘাঁটি গেড়েছেন তাঁরা। কয়েক বছর ধরে পসারও জমে উঠেছে। বহু পথ পেরিয়ে হলেও ক্রেতারা আসছেন। ‘গুড়সন্ধানী’ সৌমেন শিকদারের মতে, ‘‘এখানকার গুড়ের গন্ধই আলাদা। একেবারে খাঁটি! আমরা যেমন এখান থেকে গুড় কিনে নিয়ে যাই, তেমনই মিষ্টির দোকানদারেরাও আসেন।’’ আর এক সমঝদার মিন্টু কাপরির কথায়, ‘‘যাতায়াতের পথে গুড় কিনতে আসা।’’
সমঝদারদের তারিফ পেতে খাটুনি কম নয় গুড়ের কারবারিদের। —নিজস্ব চিত্র।
সমঝদারদের তারিফ পেতে খাটুনি কম নয়। গুড়ের কারবারি নুর হাসান শেখ বলেন, ‘‘গোটা পরিবার এ কাজে লেগে রয়েছে। খেজুর রস জাল দিয়ে গুড় তৈরির প্রক্রিয়াও বেশ দীর্ঘ। আর যত্নের কথা না-ই বা বললাম!’’ তবে কায়িক শ্রমের পাশাপাশি গুড়ের স্বাদে শীতের হাতও রয়েছে। হাড়কাঁপানো শীতেই নাকি গুড়ের গন্ধ বাড়ে। গত ক’দিন ঠান্ডা বাড়ায় গুড়ের গন্ধও খোলতাই হচ্ছে। দামও ভালই পাচ্ছেন পাসিরা। এ বার পাটালি গুড়ের দাম প্রতি কেজি ১২০ টাকা। ঝোলাগুড়ের দু’কিসিমের দামও ভিন্ন। কেজি প্রতি ৯০ ও ১২০ টাকা।
সামনেই পিঠেপরবের মরসুম। কারবারিদের আশা, বাজার আরও চড়বে। চলছে তারও প্রস্তুতি!