অন্যত্র সরানো হচ্ছে গবাদি পশুদের। গোসাবায় রবিবার। নিজস্ব চিত্র।
তিন দিন ধরে কোনও মতে রাস্তায় প্লাস্টিক খাটিয়ে স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে দিন গুজরান করছেন গোসাবার রাঙাবেলিয়ার বাসিন্দা বেনাথ কয়াল। ত্রাণের চিঁড়ে-গুড় খাচ্ছেন। কাড়াকাড়ি করে নিতে হচ্ছে জলের পাউচ। কিন্তু গরুগুলো খাবে কী?
দুর্যোগের জেরে নোনা জলে পুকুর ভরেছে। মাঠ ডুবেছে। না মিলছে মিষ্টি জল, না ঘাস। তিন দিন ধরে সে ভাবে কোনও খাবার দিতে না-পারায় রবিবার গরুগুলিকে বাসন্তীতে আত্মীয়ের বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার জন্য গোসাবা খেয়াঘাটে দাঁড়িয়েছিলেন বেনাথ। তাঁর কথায়, ‘‘সন্তানদের মুখেই জল-খাবার তুলে দিতে পারছি না। গরুগুলোকে কী খাওয়াব? এখানে থাকলে মরে যাবে। তাই অন্যত্র নিয়ে যাচ্ছি। যেখানে একটু জল, ঘাস পাবে।”
বেনাথ একা নন, এই পথ ধরেছেন ওই এলাকার পুষ্পেন্দু হাজরা, ছায়া নস্করের মতো দুর্গতেরাও। ছায়া বলেন, “নদীর নোনা জলে বাড়িঘর সব ডুবে গিয়েছে। এলাকায় একফোঁটা ঘাস বেঁচে নেই। সব পুকুরে নোনা জল। কী খাওয়াব গরু-ছাগলগুলোকে? অবলাগুলোকে তো এই ভাবে মেরে ফেলতে পারি না! তাই অন্যত্র নিয়ে যাচ্ছি।” পুষ্পেন্দুর কথায়, ‘‘এক প্রতিবেশীর বাড়ির ছাদে রয়েছি। গরু-ছাগল রাখব কোথায়? চার দিকে আবর্জনা, পচা-ময়লা জল, ডায়েরিয়ার প্রকোপ বাড়ছে। তাই গরুগুলোকে বাসন্তীতে আত্মীয়ের বাড়িতে রেখে আসতে যাচ্ছি। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে পরে নিয়ে আসব।”
গোটা গোসাবা ব্লকের সর্বত্র এই একই চিত্র। খাবার ও পানীয় জলের অভাবে অনেকে যেমন গ্রাম ছাড়ছেন, তেমনই অনেকে কষ্ট করে থেকে গেলেও পোষ্যদের অন্যত্র রেখে আসছেন। বুধবার যখন ইয়াস আছড়ে পড়ে, তখন অবশ্য এত খারাপ পরিস্থিতি হয়নি গোসাবার। নদীবাঁধ ভেঙে বা উপচে গ্রামে নোনা জল ঢুকেছিল ঠিকই, কিন্তু বৃহস্পতিবার সকালে জোয়ারের জল গোটা এলাকা ভাসিয়ে দেয়।
এখনও গ্রামগুলিতে জমা জলে জোয়ার-ভাটা খেলছে। বাঁধ মেরামতি সম্ভব হয়নি। ক্যানিংয়ের মহকুমাশাসক রবিপ্রকাশ মিনা বলেন, “আমরা সকলকে খাবার, জল পৌঁছে দিচ্ছি। যাতে সকলেই খাবার পান, সে দিকে লক্ষ্য রাখা হচ্ছে। এই প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্যে সকলেই সাধ্যমতো চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।” তবে, মানুষ জনের জন্য ত্রাণের ব্যবস্থা করা হলেও গবাদি পশুদের জন্য কোনও ব্যবস্থা করা এখনও সম্ভব হয়নি বলে স্বীকার করে নিয়েছেন ব্লক প্রশাসনের আধিকারিকরা।