ভেঙে পড়া গাছে অবরুদ্ধ সোনাচূড়া। নিজস্ব চিত্র
ফারাক বিস্তর। তা-ও ঘূর্ণিঝড়ের তাণ্ডবে এক যুগেরও বেশি সময় পরে নন্দীগ্রামে ফিরল চেনা ছবি। গাছের গুঁড়িতে অবরুদ্ধ রাস্তা। কোথাও যাওয়ার জো নেই।
২০০৭ সালে রাস্তায় গাছ ফেলে জমি রক্ষার আন্দোলনে নেমেছিল নন্দীগ্রাম। এ বার গাছ উপড়ে রাস্তায় ফেলেছে আমপান। নন্দীগ্রামের লড়াই এখন জীবন বাঁচানোর।
বুধবার বিকেল গড়াতেই নন্দীগ্রামে বিকট শব্দে ভাঙতে শুরু করে গাছ। একাধিক রাস্তা অবরুদ্ধ হয়ে যায়। বৃহস্পতিবার সোনাচূড়া গ্রাম দিয়ে স্থানীয় বাজারে ঢোকা যায়নি। গাছের গুঁড়িতে পথ ছিল রুদ্ধ। ঠিক যেমনটা হত জমি আন্দোলনের সময়। রাস্তার দু’ধারে সার সার ভাঙা গাছের পাশাপাশি এ দিন দেখা গিয়েছে বহু বাড়ির টিন ও টালির ছাদের ভগ্নাংশ। বাড়িতে মজুত চাল, মুড়ি উড়ে গিয়ে পড়ে ভাসছে খালের জলে।
সোনাচূড়ার বছর ষাটের প্রবীর মণ্ডল বলছিলেন, ‘‘সে সময়ে যে সব রাস্তায় গাছ ফেলে আন্দোলন হত, বুধবারের ঝড়ের দাপটে সেই সব রাস্তায় গাছ পড়ে গোটা এলাকা অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছে।’’ ওই গ্রামের ইন্দ্রজিৎ মণ্ডলের কথায়, ‘‘যখন নন্দীগ্রাম আন্দোলন হয়েছিল তখন আমার বয়স পনেরো। সেটা একটা লড়াই ছিল। নন্দীগ্রামের মানুষের কাছে এটা নতুন লড়াই। তবে এ লড়াই আগের থেকে অনেক কঠিন।’’
আরও পড়ুন: আয়লার চেয়ে তেজি আমপান, ‘হাতিবাঁধে’ রক্ষা বহু গ্রামের
ঠিক কত ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে সেই হিসেব কষতে শুরু করেছে প্রশাসন। এ দিন বিকেলে নন্দীগ্রাম ১ ব্লক অফিসে আসেন নন্দীগ্রামের বিধায়ক তথা পরিবহণ, সেচ ও জলপথ উন্নয়ন মন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী। তিনি বলেন, ‘‘নন্দীগ্রামের দুই ব্লকের ছ’হাজার বাসিন্দা এখনও ঘরে ফিরতে পারেননি। তবে নন্দীগ্রামে প্রাণহানি এড়ানো গিয়েছে।’’
আবহবিদদের আশঙ্কা ছিল, আমপান প্রভাব ফেলতে পারে নন্দীগ্রামে। সত্যি হয়েছে আশঙ্কা। যা আঁচ করা যায়নি তা হল, হলদিয়ার পরিস্থিতি। বুধবারের তাণ্ডবে গোটা জেলায় ছ’জনের প্রাণহানি হয়েছে, তার মধ্যে হলদিয়া মহকুমারই চার জন। মৃতদের মধ্যে তিন জন আবার শিল্পশহর হলদিয়ার বাসিন্দা। তছনছ গোটা শহর। ক্ষতি হয়েছে শিল্প সংস্থাগুলিতেও। আংশিক ক্ষতির মুখে পড়লেও বন্দরে এ দিন স্বাভাবিক কাজকর্মই হয়েছ। বিশেষজ্ঞেরা বলছেন, শহর এলাকায় যে ঝড়ের এমন তাণ্ডব হতে পারে তা আঁচ করতে পারেননি শিল্পশহরের বাসিন্দারা। হলদিয়ার পুরপ্রধান শ্যামলকুমার আদক বলেন, ‘‘বারবার অনুরোধ সত্ত্বেও স্বেচ্ছায় বহু লোক ঝড়ের সময় কাঁচা বাড়িতে ছিলেন।’’
আরও পড়ুন: আমপান তাণ্ডবে রাজ্যে মৃত ৮০, পুনর্গঠনে হাজার কোটি
আমপান স্থলভাগে ঢুকলে দিঘায় আছড়ে পড়বে। মন্দারমণিতে ক্ষয়ক্ষতি হবে বলে আশঙ্কা করেছিল প্রশাসন। সেই মতো নেওয়া হয়েছিল প্রস্তুতিও। দিঘা-সহ রামনগর ১ ও ২ ব্লকের বিস্তীর্ণ উপকূল এলাকা জুড়ে প্রচুর প্রাকৃতিক সম্পদ নষ্ট হয়ে গিয়েছে। দিঘা, তাজপুর, মন্দারমণি এবং শঙ্করপুরের মতো পর্যটনকেন্দ্র পুরোপুরি বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। এ ধরনের ক্ষয়ক্ষতি ছাড়া বড় বিপদ এড়িয়েছে উপকূল এলাকা।