Coronavirus Lockdown

জলের তলায় হাজার বিঘে জমি

স্থানীয় বাসিন্দারাই হিসেব দিলেন, হালদারঘেরি-নস্করঘেরি মিলিয়ে প্রায় এক হাজার বিঘে চাষের জমি জলের তলায় চলে গিয়েছে।

Advertisement

সমীরণ দাস

কুলতলি শেষ আপডেট: ২৬ মে ২০২০ ০৪:০৮
Share:

ছবি: পিটিআই।

কংক্রিটের সরু পথটা মূল রাস্তা থেকে এঁকেবেঁকে চলে গিয়েছে নদীবাঁধ পর্যন্ত। পথের দু’ধারে নিচু কৃষিজমির আর আলাদা করে অস্তিত্ব নেই। পুরোটাই জলের তলায়। মাথা উঁচিয়ে থাকা রাস্তাটাও জলে থই থই। গোড়ালি ডোবা জল ভেঙে ওই পথেই পৌঁছলাম ভেঙে যাওয়া নদীবাঁধের কাছে। আমপানের দাপটের পর দিনই মৈপিঠের এই সব এলাকা ঘুরে গিয়েছিলাম। দেখেছিলাম, বাঁধ বাঁচানোর জন্য হালদারঘেরি-নস্করঘেরির মানুষগুলোর লড়াই। দিন চারেক পরে ভেঙে যাওয়া বাঁধটার সামনে মানুষের জটলাটা এখনও একই রকম। শুধু বাঁধ বাঁচানোর সেই ব্যর্থ লড়াইটা শেষ হয়েছে। শুরু হয়েছে সব হারানোর হতাশা।

Advertisement

জটলার মধ্যেই চোখে পড়ল চেনা মুখ। বাদল করণ। হতাশ বাদল বললেন, “জমিটা বাঁচাতে পারলাম না। ওই দেখুন, ওই খানে দু’বিঘা জমিতে ঢেঁড়শ চাষ করেছিলাম। এখন সেখানে জোয়ার-ভাটা খেলছে।” গ্রামের মানুষ জানালেন, ঝড়ের পর থেকে খাবার নেই। জল নেই। ত্রাণ নিয়ে রাজনীতির পুরনো খেলা মাথা চাড়া দিচ্ছে ইতিউতি। তা নিয়ে অভিযোগ রয়েছে বিস্তর। তবে সব হারানো মানুষগুলোর হা-হুতাশ সব ওই জলে ডুবে যাওয়া ধান-আনাজের জমি ঘিরে।

স্থানীয় বাসিন্দারাই হিসেব দিলেন, হালদারঘেরি-নস্করঘেরি মিলিয়ে প্রায় এক হাজার বিঘে চাষের জমি জলের তলায় চলে গিয়েছে। ধানের জমি তো বটেই, গাছ ভরা উচ্ছে, ঝিঙে, ঢেঁড়শ সবই জলের নীচে। বিঘের পর বিঘে জমি জুড়ে ভাসছে পানের বরজ। দেখলাম, বিস্তীর্ণ সেই জমির উপর দিয়ে ঢুকছে জোয়ারের জল। বাদল বলেন, “এ জমি এখন নদীই। দেখছেন না, কেমন জোয়ার-ভাটা খেলছে। বাঁধ দিয়ে কি আর এ নদীকে বাঁধা যাবে!”

Advertisement

আরও পড়ুন: বদলের ডাক বিজেপির, পাল্টা আক্রমণে তৃণমূল

বাঁধ ভেঙে কৃষিজমি ভেসে যাওয়ার একই ছবি কুলতলির নদী ঘেঁষা দেউলবাড়িতেও। এখানে মাতলার পাড় ধরে কয়েকশো মিটার বাঁধ পুরোপুরি জলে মিশে গিয়েছে। নোনা জল ঢুকেছে চাষের জমিতে। স্থানীয় বাসিন্দা আব্দুল হকের কথায়, “উচ্ছে, ঝিঙের ফলন হয়েছিল ভালই। দিন দশেকের মধ্যেই বাজারে নিয়ে যাওয়ার কথা ছিল। সে আর হল না। সব শেষ। জানি না, এ জমি আর ফিরে পাব কিনা। পেলেও যে ভাবে নোনা জল ঢুকেছে, তাতে অন্তত বছর দু’য়েক চাষ করা যাবে না।” কৃষিবিজ্ঞানীরাও বলছেন, নোনা জলে ডোবা এই জমি থেকে জল সরলেও, স্বাভাবিক কৃষিকাজ শুরু করা যাবে না এখনই।

নদীবাঁধ ভাঙার পর থেকে একে একে নেতারা এসেছেন। বাঁধ পরিদর্শন করে ফিরেও গিয়েছেন। বিরোধী পক্ষ শাসক দলের মুণ্ডপাত করেছেন। শাসক দল এসে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়ে গিয়েছে। স্থানীয়রা বলছেন, খাবারের ব্যবস্থা হয় তো হবে। মাথা গোঁজার একটা ঠাঁইও জুটে যাবে এক দিন। কিন্তু নোনা জলে ডোবা বিঘের পর বিঘে এই চাষের জমি আর ফিরবে কি, সেই প্রশ্নই এখন ঘুরপাক খাচ্ছে গ্রামের মানুষের মনে।

আরও পড়ুন: ‘অতিবিরল ঝড়’ তকমা চায় রাজ্য

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement