ছবি: পিটিআই।
ঘণ্টা দেড়েক ধরে পরিদর্শন হেলিকপ্টারে। তার পরে ঘূর্ণি-ধ্বংসলীলার প্রায় ভরকেন্দ্রে অবতরণ। চল্লিশ মিনিটের বৈঠক রাজ্য প্রশাসনের শীর্ষকর্তা ও জেলা প্রশাসনের সঙ্গে। বৈঠক শেষে রাজ্যপাল ও মুখ্যমন্ত্রীকে পাশে নিয়ে ১ হাজার কোটি টাকার প্যাকেজ ঘোষণা। আমপানের (প্রকৃত উচ্চারণে উম পুন) জেরে হওয়া ক্ষয়ক্ষতির মোকাবিলায় আপাতত পশ্চিমবঙ্গের জন্য এই পদক্ষেপই করলেন প্রধানমন্ত্রী। তবে এই হাজার কোটিতেই শেষ, নাকি পরে আরও মিলবে, তা স্পষ্ট নয় বলে মুখ্যমন্ত্রী এ দিন জানিয়েছেন। কেন্দ্রের যা মনে হয় দিক, রাজ্য কোনও দাবি জানাবে না, এমনও বলেছেন তিনি।
শুক্রবার সকাল পৌনে ১১টা নাগাদ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বিমান কলকাতা বিমানবন্দরে নামে। তাঁকে স্বাগত জানানোর জন্য উপস্থিত ছিলেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড় এবং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সওয়া ১১টা নাগাদ কলকাতা বিমানবন্দর থেকে হেলিকপ্টারে প্রধানমন্ত্রী রওনা দেন আমপান-বিধ্বস্ত এলাকা পরিদর্শনের জন্য। সঙ্গে ছিলেন রাজ্যপাল এবং মুখ্যমন্ত্রী। দুই ২৪ পরগনার দুর্গত এলাকা পরিদর্শনে এ দিন কিন্তু অনেকটা সময় ব্যয় করেছেন মোদী। তাঁকে নিয়ে ভারতীয় বায়ুসেনার কপ্টার একটানা প্রায় ঘণ্টা দেড়েক উড়েছে সুন্দরবন আর আবাদ অঞ্চলের আকাশে। পরে জানা গিয়েছে, দক্ষিণ ২৪ পরগনার পাথরপ্রতিমা, বাসন্তী, গোসাবা, কুলতলি, ভাঙড়-সহ বিভিন্ন এলাকা এবং উত্তর ২৪ পরগনার রাজারহাট, মিনাখাঁ, হিঙ্গলগঞ্জ, সন্দেশখালি, হাসনাবাদ, বসিরহাট আকাশপথে ঘুরে দেখেছেন মোদী।
পরিদর্শন শেষে বসিরহাটে নামে প্রধানমন্ত্রীর কপ্টার। সময়টা পৌনে ১টার আশেপাশে। সেখানে ততক্ষণে প্রস্তুত রাজ্য ও জেলা প্রশাসনের শীর্ষকর্তারা। প্রধানমন্ত্রী, রাজ্যপাল ও মুখ্যমন্ত্রীকে তাঁরা নিয়ে যান বসিরহাট কলেজে। সেখানেই প্রশাসনিক বৈঠকের ব্যবস্থা হয়েছিল। সে বৈঠকে মুখ্যসচিব রাজীব সিংহ আমপানে হওয়া ক্ষয়ক্ষতির বিশদ হিসেব তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রীর সামনে।
বসিরহাট কলেজে হওয়া প্রশাসনিক বৈঠকও খুব সংক্ষিপ্ত ছিল না। একপাশে মুখ্যমন্ত্রী এবং আর এক পাশে রাজ্যপালকে নিয়ে মিনিট চল্লিশেক রাজ্য ও জেলা প্রশাসনের শীর্ষকর্তাদের সঙ্গে মুখোমুখি আলেচনা সারেন প্রধানমন্ত্রী। তার পরে জানান যে, এই ক্ষয়ক্ষতি মোকাবিলার জন্য পশ্চিমবঙ্গকে আপাতত ১ হাজার কোটি টাকার ‘অগ্রিম সহায়তা’ দেওয়া হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর কথায়, ‘‘এখন যাতে রাজ্য সরকারের অসুবিধা না হয়, তার জন্য অগ্রিম সহায়তা হিসেবে ১ হাজার কোটি টাকা দেওয়া হচ্ছে।’’ এ ছাড়া আমপানে যাঁদের মৃত্যু হয়েছে, তাঁদের পরিবারকে ২ লক্ষ টাকা করে এবং আহতদের ৫০ হাজার টাকা করে প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল থেকে দেওয়া হবে বলেও মোদী ঘোষণা করেন।
১ হাজার কোটি টাকার প্যাকেজ প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা করেছেন ঠিকই, তবে এটাই সম্পূর্ণ প্যাকেজ, নাকি এটা অগ্রিম, তা স্পষ্ট নয় বলে জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। যদিও প্রধানমন্ত্রী এই ১ হাজার কোটিকে ‘অগ্রিম সহায়তা’ হিসেবেই উল্লেখ করেছেন। কিন্তু এর পরে আরও কিছু মিলবে কি না, মিললেও কত, সে সব নবান্নের কাছে এখনও পরিষ্কার নয় বলেই খবর। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথায়, ‘‘তিনি (প্রধানমন্ত্রী) বলেছেন, এ ব্যাপারে তিনি পরে সিদ্ধান্ত নেবেন। কিন্তু এটা অগ্রিম হতে পারে বলেও তিনি জানিয়েছেন।’’ উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনার কোন কোন অংশ তাঁরা এ দিন আকাশপথে দেখেছেন, পরে তা বিশদে সংবাদমাধ্যমকে জানান মুখ্যমন্ত্রী। আকাশপথে পরিদর্শনের পাশাপাশি কলকাতার কিছু ছবি তিনি নিজে প্রধানমন্ত্রীকে দেখিয়েছেন বলেও মুখ্যমন্ত্রী এ দিন জানিয়েছেন। তবে কেন্দ্রের কাছে রাজ্য কোনও নির্দিষ্ট অঙ্ক যে দাবি করবে না, তা-ও স্পষ্ট করে দিয়েছেন মমতা। তিনি জানিয়েছেন, ক্ষয়ক্ষতির চেহারা দেখে কেন্দ্র যা দেওয়ার দেবে, রাজ্য কোনও দাবি জানাবে না। তবে যদি কিছু দেওয়ার হয়, তা হলে তাড়াতাড়ি দেওয়া হোক, না হলে যা করার রাজ্যকে একাই করতে হবে— এমনও জানিয়েছে মমতা।
আরও পড়ুন: আমপান: রাজ্যকে ১ হাজার কোটি টাকা সাহায্যের প্রতিশ্রুতি মোদীর
বসিরহাট কলেজে বসে প্রধানমন্ত্রী এ দিন জানিয়েছেন যে, ক্ষয়ক্ষতির মূল্যায়ন করতে কেন্দ্রীয় দল পাঠানো হচ্ছে বাংলায়। তাঁর কথায়, ‘‘কৃষি, বিদ্যুৎ, টেলিযোগাযোগ, ঘরবাড়ির অবস্থা, পরিকাঠামোর অবস্থা— সব কিছুর বিশদ সার্ভে হোক। কেন্দ্রের তরফ থেকেও একটা টিম আসবে। তারাও দ্রুত এই সব বিষয়ের সমীক্ষা করবে। আর আমরা হাত মিলিয়ে পুনর্বাসন, পুনর্গঠন, পুনর্নির্মাণের ব্যাপক পরিকল্পনা তৈরি করে বাংলার এই দুঃখের সময়ে পূর্ণ সহযোগিতা করব।’’
আরও পড়ুন: দোতলা সমান ঢেউ! বাঘের সঙ্গে ঘর করা মৈপিঠের গ্রামবাসীরা লড়ছেন বাঁধের সঙ্গে
বসিরহাটে বৈঠক সারার পরে প্রধানমন্ত্রী মোদী কপ্টারে ফেরেন কলকাতা বিমানবন্দরে। সেখান থেকে রওনা হয়ে যান ভুবনেশ্বর, ওড়িশার পরিস্থিতি পরিদর্শনের জন্য।