বাংলার শিক্ষা পোর্টালে আপলোড করতে না পারায় বহু স্কুলের পড়ুয়াদের হাতে নম্বর লিখে মার্কশিট তুলে দিতে হয়েছে। ছবি: সংগৃহীত।
বাংলার শিক্ষা পোর্টালে প্রায় সময়েই সার্ভার ডাউন থাকে বলে অভিযোগ। তাই অনেক চেষ্টা করে এ বারও সেই পোর্টালে পড়ুয়াদের নম্বর আপলোড করতে পারলেন না বহু স্কুলশিক্ষক। মঙ্গলবার রাজ্যের বহু স্কুলের পরীক্ষার ফল বেরিয়েছে। শিক্ষকেরা জানাচ্ছেন, পরীক্ষার নম্বর বাংলার শিক্ষা পোর্টালে আপলোড করতে না পারায় বহু স্কুলের পড়ুয়াদের হাতে নম্বর লিখে মার্কশিট তুলে দিতে হয়েছে।
এখন সারা বছরে এক জন পড়ুয়ার তিন বার পর্যায়ক্রমিক মূল্যায়ন হয়। তিনটি মূল্যায়ন একত্রিত করে এক জন পড়ুয়ার চূড়ান্ত ফল তৈরি করেন শিক্ষকেরা। সেই ফলাফল বাংলার শিক্ষা পোর্টালে আপলোড করতে হয়। শিক্ষকেরা জানাচ্ছেন, এখন পড়ুয়াদের সকলের ফলাফলই ওই পোর্টালে আপলোড করে দেওয়া হয়। সারা বছরের তিনটি মূল্যায়ন মিলিয়ে একটি চূড়ান্ত মার্কশিট তৈরি হয়ে যায়। সেই মার্কশিট ডাউনলোড করে সেটির প্রিন্ট আউট নিয়ে পড়ুয়াদের ফল বেরোনোর দিন দিয়ে দিতে হয়।
শিক্ষকেরা জানাচ্ছেন, বাংলার শিক্ষা পোর্টালের সার্ভার ডাউন থাকার সমস্যা নতুন নয়। প্রতি বছরই এই সমস্যা হয়। এ নিয়ে বার বার শিক্ষা দফতরকে জানানোর পরে এ বার তারা আশ্বাস দিয়েছিল যে, নম্বর আপলোড করতে সমস্যা হবে না। কিন্তু সেই সমস্যাটা থেকেই গিয়েছে। রাত জেগে বসে থাকতে হয়েছে কখন পোর্টালের সার্ভার ঠিক হবে, সেই অপেক্ষায়। শিক্ষকেরা জানাচ্ছেন, ফল বেরোনোর সময় যত এগিয়ে এসেছে, ততই তাঁরা
আশঙ্কিত হয়েছেন, সকলের নম্বর আপলোড করতে পারা যাবে তো? প্রধান শিক্ষকদের সংগঠন ‘অ্যাডভান্সড সোসাইটি ফর হেডমাস্টার্স অ্যান্ড হেডমিস্ট্রেসেস’-এর রাজ্য সম্পাদক চন্দন মাইতি বলেন, ‘‘আমাদের আশঙ্কাই সত্যি হল। বাজার থেকে মার্কশিট কিনে এনে হাতে নম্বর লিখে পড়ুয়াদের দিতে হল। বাংলার শিক্ষা পোর্টালের সার্ভার কেন উন্নত হবে না?’’ শিক্ষকদের প্রশ্ন, বছরের শুরু থেকেই এই সমস্যাটা চলছিল। প্রথম পর্যায়ক্রমিক মূল্যায়নের সময়েও একই ভাবে নম্বর আপলোড করতে অসুবিধা হচ্ছিল। এই সমস্যাটার সারা বছর ধরে সমাধান করা হল না কেন?
শিক্ষা দফতরের এক কর্তার কথায়, ‘‘স্কুলের সময়ে শিক্ষকেরা সবাই মিলে একসঙ্গে সার্ভার খুললে সার্ভার একটু ধীরে চলতে পারে। কিন্তু সন্ধ্যার দিকে সার্ভার ঠিক মতোই কাজ করছে। অসুবিধা হচ্ছে না। বহু স্কুলই ঠিক মতো নম্বর আপলোড করে মার্কশিট দিতে পেরেছে বলে জানতে পেরেছি।’’
যদিও শিক্ষানুরাগী ঐক্য মঞ্চের সাধারণ সম্পাদক কিঙ্কর অধিকারী বলেন, ‘‘রাত জেগে কাটাতে হয়েছে, কখন সার্ভার ঠিক হবে, সেই অপেক্ষায়। আমাদের স্কুলে হাতে লেখা মার্কশিট দিতে হয়েছে। স্কুলশিক্ষা দফতর বলছে, একসঙ্গে সবাই মিলে পোর্টাল খুললে পোর্টাল শ্লথ হয়ে যায়। কিন্তু আমাদের প্রশ্ন, কেন এমন হবে? রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলিতেও প্রতিদিন একসঙ্গে অনেকে কাজ করেন। তাদের সার্ভার তো এ রকম সমস্যা করে না।’’ কিঙ্করের মতে, নম্বর লেখার কাজটা দু’বার করে করতে হচ্ছে। হাতে মার্কশিটে নম্বর লিখতে হল। আবার সকলের নম্বর পোর্টালে আপলোড করতে না পারায় এই কাজটা অসমাপ্ত রয়ে গেল। নতুন বছরে কাজের ফাঁকে বাংলার শিক্ষা পোর্টালে তাঁদের নম্বর আপলোড করতে হবে।