ঘূর্ণিঝড় আমপানের তাণ্ডবে পড়ে যাওয়া গাছ নতুন করে প্রতিস্থাপিত হচ্ছে রবীন্দ্র সরোবরে। —নিজস্ব চিত্র
ঘূর্ণিঝড় আমপান (প্রকৃত উচ্চারণ উম পুন)-এর তাণ্ডবে তছনছ হয়ে গিয়েছে দক্ষিণবঙ্গের একটা বড় অংশ। বিশেষ করে ক্ষতি হয়েছে দুই ২৪ পরগনা, সুন্দরবন এবং উপকূলবর্তী এলাকা। প্রবল ঝড়ের তাণ্ডবে উপড়ে গিয়েছে প্রায় ১৬ লক্ষ গাছ। এই পরিস্থিতিতে কলকাতা পুরসভা, রাজ্যের বন দফতর এবং পরিবেশ দফতর নিজেদের মধ্যে সমন্বয় রেখে প্রায় সাড়ে ছয় কোটি গাছ লাগানোর পরিকল্পনা নিল। কলকাতা-সহ শহুরে এলাকায় সবুজ রক্ষা করলে করের ক্ষেত্রে ছাড় দেওয়া হবে বলেও জানিয়েছেন পুরসভার প্রশাসকমণ্ডলীর চেয়ারম্যান ফিরহাদ হাকিম।
শনিবার কলকাতা পুরসভায় একটি উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন বনমন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়, রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের চেয়ারম্যান কল্যাণ রুদ্র-সহ বৃক্ষ সৃজন এবং প্রতিস্থাপনের বিশেষজ্ঞরা। ওই বৈঠক থেকে সিদ্ধান্ত হয়, শহর এবং গ্রামের যে সব এলাকায় গাছ পড়েছে দ্রুত সেখানে নতুন করে গাছ লাগানো হবে। যে এলাকায় গাছ নতুন করে প্রতিস্থাপন করা সম্ভব, সেখানে পড়ে যাওয়া গাছ প্রতিস্থাপিত করা হবে। ইতিমধ্যে কলকাতায় রবীন্দ্র সরোবর, চেতলায় সেই কাজ শুরুও হয়ে গিয়েছে।
এ দিন বনমন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “আমপানের তাণ্ডবে প্রচুর গাছের ক্ষতি হয়েছে। প্রায় ১৬ লক্ষ গাছ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। প্রায় ১ লক্ষ ৬০ হাজার হেক্টর সুবজ নষ্ট হয়েছে। একটি গাছের বদলে ১০টি গাছ লাগানো হবে। আগামী ৫ জুন থেকে দ্রুত গাছ রোপণ করার প্রকল্প নেওয়া হচ্ছে।” পুর ও নগরায়নমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম বলেন, “শহরের যে এলাকায় গাছ পড়েছে, সেখানে দ্রুত গাছ লাগানো হবে। না হলে, ওই জায়গা দখল হয়ে যেতে পারে। নিজের জমিতে বাড়ি বাদ দিয়ে যদি কেউ সবুজায়নের জন্য জমি ছেড়ে রাখেন, সেখানে গাছ লাগান তা হলে করেও ছাড় মিলবে। এমনকি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান-সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে ছাড় দেওয়া হবে। ওই প্রতিষ্ঠান চত্বরে গাছের যত্ন তাঁদের নিতে হবে।”
আরও পড়ুন: ৮ জুন থেকেই রাজ্যে খুলছে শপিং মল-হোটেল-রেস্তরাঁ
কলকাতা পুরসভার বৈঠকে প্রশাসনিকমণ্ডলীর চেয়ারম্যান ফিরহাদ হাকিম, বনমন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়, সদস্য দেবাশিস কুমার।—নিজস্ব চিত্র
দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের চেয়ারম্যান কল্যাণ রুদ্র বলেন, “ম্যানগ্রোভ অঞ্চলে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। কলকাতা তথা রাজ্যকে বাঁচাতে হলে গাছ লাগানোর পাশাপাশি ম্যানগ্রোভের দেওয়াল তুলতে হবে সুন্দরবনে। অক্টোবর থেকে দূষণ বাড়তে থাকে। তার আগেই দ্রুত গাছ লাগাতে হবে।”
আরও পড়ুন: ১০ দিন পরও জল নামেনি অনেক গ্রামে, ভয় বাড়ছে অসুখেরও
কলকাতা পুরসভার প্রশাসক মণ্ডলীর সদস্য দেবাশিস কুমার প্রস্তাব দেন, ‘‘এ বার থেকে বাড়ির নকশা অনুমোদন করতে হলে সেখানে কী গাছ লাগানো যেতে পারে, তার একটি আইন করা উচিত। অনেক সময়ই দেখা যায়, যেমন ইচ্ছা গাছ লাগানোর জন্য ঝড়ের সময় প্রচুর ক্ষয়ক্ষতি হচ্ছে।’’
ওই বৈঠকে হাজির ছিলেন উদ্ভিদ বিশেষজ্ঞরাও। তারাও এই বৃক্ষ সৃজন এবং পড়ে যাওয়া গাছ কী ভাবে লাগানো যেতে পারে সে বিষয়ে তাঁদের মতামত জানান। বিভিন্ন সেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘রিবিল্ড বেঙ্গল’-এর নামে কাজ শুরু করেছেন কলকাতা এবং জেলায়।