বালি-পাথর পাচার সম্পর্কেও বেশ কিছু তথ্য পেয়েছে সিবিআই। প্রতীকী ছবি।
তাঁর গ্রেফতারি মূলত গরু পাচারের মামলাতেই। সেই মামলায় তৃণমূল কংগ্রেসের বীরভূম জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলকে জেরা করতে গিয়ে বালি-পাথর পাচার সম্পর্কেও বেশ কিছু তথ্য পেয়েছে সিবিআই। তদন্তকারীদের দাবি, এই পাচারের দরুন রাজ্য সরকারের কয়েকশো কোটি টাকার রাজস্ব ক্ষতি হয়েছে। এবং মূলত বীরভূমের বিভিন্ন এলাকা থেকে সেই সব সামগ্রীর পাচার চলায় ওই জেলার ‘সমান্তরাল’ প্রশাসনের মাথা অনুব্রত তাতেও অন্যতম অভিযুক্ত বলে সিবিআই সূত্রের দাবি। তবে বালি-পাথর পাচারের সঙ্গে গরু পাচারের যোগসূত্র ঠিক কতটা, সেটা স্পষ্ট করে বলেনি সিবিআই।
তদন্তকারীরা জানান, পাচারের সূত্রে বীরভূম জেলা প্রশাসনের কয়েক জনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তলব করা হয়েছে। তাঁরা হাজিরা দিলে এই বিষয়েও প্রশ্ন করা হতে পারে।
সিবিআই সূত্রের খবর, সম্প্রতি বীরভূমে অনুব্রত-ঘনিষ্ঠ কয়েক জনের বাড়ি ও অফিসে তল্লাশি চালানো হয়েছিল। সেই তল্লাশি-অভিযানে এমন কিছু নথিপত্র পাওয়া গিয়েছে, যা থেকে বালি-পাথর পাচারের কথা জানতে পেরেছে সিবিআই।
তদন্তকারীদের দাবি, গত আট বছরে প্রায় প্রতিদিনই বীরভূম জেলা থেকে অবৈধ ভাবে লরিতে গরু, পাথর ও বালি পাচার করা হত। সে-ক্ষেত্রে জেলা প্রশাসনকে বৈধ কোনও কর দেওয়া হত না। আইনত জেলার বাইরে কোনও মালবাহী গাড়ি বেরোনোর আগে চেকপোস্টে (টোল প্লাজ়া) মূলত ভূমিরাজস্ব দফতরের নিয়ন্ত্রিত অফিসার-কর্মীরা বালি ও পাথরের গাড়ি থেকে কর সংগ্রহ করে থাকেন। এবং সেই সংগৃহীত অর্থ রাজ্য সরকারের কোষাগারে জমা পড়ে। তদন্তকারীরা জানান, ওই সব গাড়ির কাছ থেকে কর সংগ্রহের পরে একটি রসিদ দেওয়া হয়। সংশ্লিষ্ট লরিতে থাকা পণ্য যে সম্পূর্ণ বৈধ এবং তার কর যে প্রদান করা হয়েছে, তা প্রমাণিত হয় ওই রসিদের মাধ্যমেই।
তদন্তকারীদের দাবি, বীরভূম জেলার বিভিন্ন চেকপোস্ট অর্থাৎ টোল প্লাজ়ায় ভূমিরাজস্ব দফতরের নজরদারি ছিল না। ওই সব টোল প্লাজ়ায় কোনও রাজস্ব জমা না-করেই অনুব্রত এবং তাঁর ঘনিষ্ঠ বিধায়কের লোকজন অবৈধ ভাবে গরু, পাথর ও বালি পাচারের লরি বার করে দিতেন। সে-ক্ষেত্রে জেলা প্রশাসনের নামে জাল রসিদ দেওয়া হত প্রতিটি গাড়িকে। যাত্রাপথের কোনও জায়গায় ওই সব গাড়ি তল্লাশির মুখে পড়লে সেই জাল রসিদ দেখিয়ে দেওয়া হত বলে তদন্তকারীদের দাবি।
সিবিআইয়ের এক পদস্থ অফিসার বলেন, ‘‘এমন ভাবে অঢেল গরু-পাথর-বালি যে পাচার করা হয়েছে, তার তথ্য তদন্তকারীদের হাতে এসেছে। সে-ক্ষেত্রে বীরভূম জেলায় আদতে কোনও পুলিশ ও প্রশাসনের অস্তিত্ব ছিল কি না, সেই বিষয়েই সন্দেহ জাগতে পারে।’’
ইডি বা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট সম্প্রতি কয়লা পাচার কাণ্ডে একাধিক জেলাশাসককে তাদের দিল্লির সদর দফতরে তলব করেছে। সে-ক্ষেত্রেও জাল রসিদের সাহায্যে বছরের পর বছর রাজস্ব ফাঁকি দেওয়ার ঘটনার কথা জানা গিয়েছে। সেই একই কায়দায় বীরভূমের বালি-পাথর পাচারের প্রমাণ পেয়েছে সিবিআই।
ওই কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা সূত্রের খবর, জেরায় অনুব্রত দাবি করছেন যে, তিনি এ-সবের কিছুই জানতেন না। তাই এই ব্যাপারে অনুব্রত-ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ী এবং প্রশাসনের কর্তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হতে পারে। প্রয়োজনে মুখোমুখি বসিয়েও প্রশ্ন করা হতে পারে তাঁদের।