কামরুজ্জামান। —ফাইল চিত্র।
অনেক সময়েই এলাকায় তাকে ঘোরাফেরা করতে দেখে সন্দেহ করেছেন মানুষজন। নিজেকে বিদ্যুতের মিটার দেখার কর্মী পরিচয় দিয়ে সেখান থেকে সে বেরিয়ে এসেছে। এই কারণেই ধোপদুরস্ত পোশাকে ‘অপারেশনে’ বেরোত বলে জেরায় জানিয়েছে পরপর মহিলা খুনে অভিযুক্ত কামরুজ্জামান সরকার, দাবি পুলিশের।
সোমবার ধৃতকে ফের মুর্শিদাবাদের রানিনগরে নিয়ে আসে পুলিশ। তাকে জেরা করে যে সব তথ্য উঠে এসেছে, সেগুলি যাচাই করার জন্যই রবিবারের পরে এ দিনও তাকে রানিনগরে আনা হয় বলে তদন্তকারীরা জানান। রবিবার ধৃতের গ্রামে গিয়ে পরিজনদের সঙ্গে কথা বলেছিল পুলিশ। এ দিন কামরুজ্জামানকে রানিনগর থানার পুলিশ লক-আপে রেখে তার ছেলেমেয়েরা যে স্কুলে পড়াশোনা করত, সেখানে যান তদন্তকারীরা।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, রানিনগরের একটি বেসরকারি স্কুলে পড়ত কামরুজ্জামানের তিন ছেলেমেয়ে। মেয়ে ২০১১ থেকে ২০১৬ পর্যন্ত, বড় ছেলে ২০১২ থেকে ২০১৭ এবং ছোট ছেলে ২০১৪ থেকে ২০১৭ পর্যন্ত সেখানে পড়াশোনা করেছে বলে স্কুল সূত্রে জেনেছে পুলিশ। ২০১৭ সালের ২৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত তার দুই ছেলে সেখানে পড়াশানো করেছে জেনে পুলিশের অনুমান, সে বছরের শেষ অবধি কামরুজ্জামানের পরিবার এখানেই থাকত। যদিও ছেলেমেয়েরা রানিনগরে পড়াশোনা করলেও কামরুজ্জামান কখনও পাকাপাকি ভাবে এখানে থাকত না বলে পুলিশের কাছে দাবি করেছেন তার পরিবারের লোকজন।
যে স্কুলে কামরুজ্জামানের ছেলেমেয়েরা পড়ত, সেই স্কুলের প্রধান শিক্ষক আসাদ আলি বলেন, ‘‘কামরুজ্জামান কী কাজ করত, জানতাম না। স্কুলের ফি নিজে এসে দিত। তবে প্রতি মাসে নয়। কয়েক মাস ছাড়া এসে সব টাকা মিটিয়ে যেত।’’ পুলিশ সূত্রে জানা যায়, রানিনগর থানাতেও কামরুজ্জামানের নামে একটি অভিযোগ রয়েছে।
২০১১ সালে রানিনগরের কার্তিকেরপাড়া গ্রামে একটি মোটরবাইক চুরির অভিযোগে ধরা পড়েছিল সে। তা থেকে তদন্তকারীদের অনুমান, অনেক আগে থেকেই চুরিতে ঝোঁক ছিল তার।
পুলিশের দাবি, ধৃতকে জেরা করে জানা গিয়েছে, বাড়ি থেকে সব সময় ধোপদুরস্ত পোশাকে বেরোত সে। রাস্তায় কোথাও হেলমেট খুলত না। খুন ও চুরি করতে কোনও বাড়িতে মিনিট পাঁচেকের বেশি সময় থাকত না সে। কোনও বড় রাস্তা নয়, পুলিশের চোখ এড়াতে বেশিরভাগ সময় গ্রামের ছোট রাস্তা ধরে যাতায়াত
করত কামরুজ্জামান।
কালনা, মেমারিতে একের পর এক মহিলার উপরে হামলার ঘটনা ঘটতে থাকায় রাস্তায় নজরদারি বাড়িয়েছিল পুলিশ। তদন্তকারীদের দাবি, ধৃত জানিয়েছে, মোটরবাইক নিয়ে বেরিয়ে অনেক বার দূর থেকে পুলিশের তল্লাশি চলছে দেখে অন্য রাস্তা ধরেছে সে। যে দিন কালনার সাধপুকুরে এক সিভিক ভলান্টিয়ারের হাতে সে ধরা পড়ে যায়, সে দিন সামান্য অন্যমনস্ক থাকায় পালাতে পারেনি, জেরার সময়ে আক্ষেপ করেছে ধৃত, দাবি পুলিশের।
এত দিন ধরে বারবার এই অপরাধ করার সময়ে কখনও বাধার মুখে পড়তে হয়নি? পুলিশের দাবি, এ প্রশ্নের জবাবে কামরুজ্জামান জানিয়েছে, অনেক জায়গায় তাকে বাড়ির আশপাশে ঘোরাফেরা করতে দেখে সন্দেহ করেছেন মানুষজন। কেউ কিছু প্রশ্ন করলেই সে জানিয়েছে, বিদ্যুৎ দফতর থেকে এলাকা পরিদর্শন করতে এসেছে। পোশাক-আশাক দেখে এর পরে আর কেউ বিশেষ সন্দেহ করত না বলে জানিয়েছে ‘চেন-খুনি’, দাবি পুলিশের।