—ফাইল চিত্র।
তৃণমূল আর বিজেপি, এই দ্বিমেরু বিভাজনই এখন রাজ্য রাজনীতিতে প্রকট। তার বাইরে তৃতীয় বিকল্পকে রাজনৈতিক পরিসরে নিয়ে আসার লক্ষ্যে এ বার বিধানসভা ভোটের আগে জোটের মঞ্চ থেকে ব্রিগেড সমাবেশ করতে চাইছে সিপিএম। আসন সমঝোতা করে ২০১৬ সালে লড়াই হলেও বাম ও কংগ্রেসের এমন যৌথ ব্রিগেড সমাবেশ আগে হয়নি। আনুষ্ঠানিক আলোচনা এখনও না হলেও সিপিএমের এমন প্রস্তাবে সাগ্রহে রাজি কংগ্রেস শিবিরও।
বাম ও কংগ্রেস জোট গড়ে লড়াইয়ের নীতিগত সিদ্ধান্ত দু’পক্ষের তরফেই হয়ে গিয়েছে। জোটের সিদ্ধান্তে আনুষ্ঠানিক সম্মতি দিয়ে রেখেছে কংগ্রেস হাইকম্যান্ডও। জানুয়ারি থেকেই আসন ভাগের প্রশ্নে দু’পক্ষের প্রস্তুতি ও আলোচনা শুরু হওয়ার কথা। তারই পাশাপাশি জোটের বার্তা আরও মজবুত করতে ব্রিগেড সমাবেশের ভাবনা রয়েছে আলিমুদ্দিনের। সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীতে প্রাথমিক আলোচনা হয়েছে, কংগ্রেস নেতৃত্বের সঙ্গে কথা বলেই এই বিষয়ে এগোনো হবে। এ বার পরীক্ষার মরসুম পিছিয়ে গিয়েছে। ফেব্রুয়ারির শেষে বা মার্চের প্রথম দিকে ব্রিগেড সমাবেশ করলে সময়ের দিক থেকে উপযুক্ত হবে বলে আলিমুদ্দিন স্ট্রিট মনে করছে। নতুন বছরে সিপিএমের রাজ্য কমিটির বৈঠক রয়েছে ৩ ও ৪ জানুয়ারি। সেখানে এই প্রসঙ্গে বিশদে আলোচনা হতে পারে বলে দলীয় সূত্রের খবর।
লোকসভা ভোটের আগে ২০১৯ সালে তিনটি ব্রিগেড সমাবেশ দেখেছিল কলকাতা। তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ব্রিগেডে সভা করেছিলেন দেশের ১৯টি অ-বিজেপি দলকে নিয়ে। সেই সভায় প্রতিনিধি পাঠিয়েছিল এআইসিসি-ও। বামফ্রন্ট এবং বিজেপি আরও দু’টি ব্রিগেড সমাবেশ করেছিল। ভিড়ের বহরে সে বার বামের সঙ্গে টক্কর হয়েছিল তৃণমূলের। বামেদের ব্রিগেড সভা শেষেই সন্ধ্যায় ধর্মতলায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা ধর্নায় বসেছিলেন কলকাতার তৎকালীন পুলিশ কমিশনার রাজীব কুমারকে গ্রেফতারের ‘চক্রান্তে’র প্রতিবাদে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে এনেও বিজেপি অবশ্য সে বার ব্রিগেডের মাঠ পুরো ভরাতে পারেনি।
আরও পড়ুন: বঙ্গ বিজেপির আড়ালের সেনাপতি শিবপ্রকাশের দায়িত্ব বাড়ল ভোটের মুখে
আরও পড়ুন: মমতা-সরকারের প্রতি অনাস্থায় বিজেপি-ছুঁতমার্গ নেই বাম-কংগ্রেসের
সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর এক সদস্যের বক্তব্য, ‘‘কেন্দ্রীয় নেতা-মন্ত্রীদের এনে বিজেপি বিরাট হইচই করবে, বিপুল অর্থও খরচ করবে। রাজ্যের শাসক দল হিসেবে তৃণমূলও যা করার, করবে। এদের বাইরে মানুষকে প্রকৃত বিকল্পের কথা বলার জন্য ব্রিগেড সমাবেশ উপযুক্ত মঞ্চ হতে পারে। আর জোট যখন হচ্ছে, তখন যৌথ ভাবে সেই সমাবেশ হওয়াই শ্রেয়।’’
সিপিএম নেতৃত্ব কথা বললে তারা প্রস্তাবকে স্বাগত জানাবে বলেই কংগ্রেস শিবির সূত্রে ইঙ্গিত মিলছে। দলের এক সাংসদের কথায়, ‘‘খুবই ভাল প্রস্তাব! বিষয়টি চূড়ান্ত হলে আমাদের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের সঙ্গেও কথা বলতে পারি, তাঁদের কাউকে আসার আমন্ত্রণ জানিয়ে।’’ ওই নেতার আরও বক্তব্য, ‘‘কে তোলাবাজ, কে বিশ্বাসঘাতক, এই নিয়ে তরজা চলছে! কিন্তু তেল-গ্যাসের দাম যে বেড়ে চলেছে, কর্মসঙ্কোচন বাড়ছে, এই সব জরুরি বিষয় আলোচনাতেই আসছে না। ক্ষমতার হুঙ্কার থেকে জরুরি বিষয়ের দিকে মানুষের নজর টেনে আনতেই হবে।’’