(বাঁ দিকে) শুভেন্দু অধিকারী। মহম্মদ সেলিম (ডান দিকে)। —ফাইল চিত্র।
জেতা ধূপগুড়ি হাতছাড়া হয়েছে বিজেপির। উপনির্বাচনের ফল ঘোষণার ২৪ ঘণ্টা কাটতে না-কাটতেই সেই হারের জন্য সরাসরি সিপিএমকে দায়ী করলেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। শনিবার হাওড়ার সালকিয়ায় বিজেপির সভা থেকে শুভেন্দু দাবি করেন, ধূপগুড়ির সিপিএম প্রার্থী ঈশ্বরচন্দ্র রায় যে ১৩ হাজার ভোট কেটেছেন, তাতেই তৃণমূল জয় পেয়েছে।
সালকিয়ার সভা থেকে শুভেন্দু শনিবার বলেন, ‘‘সিপিএম কী করল? অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক ঈশ্বরচন্দ্র রায়কে দাঁড় করিয়ে ১৩ হাজার ভোট কাটিয়েছে। তাতে তৃণমূল জিতে গিয়েছে। তলায় তলায় মহম্মদ সেলিমরা এই কাজ করেছেন।’’ নিচুতলার সিপিএম কর্মী-সমর্থকদের উদ্দেশে শুভেন্দু বলেন, ‘‘আপনাদের বিজেপির কার্যকর্তা হতে হবে না। দূরে দাঁড়িয়ে মিটিং শুনুন। আর স্লোগান দিন ‘নো ভোট টু মমতা’। তা হলেই বাংলাকে বাঁচানো যাবে।’’
শুভেন্দুর মন্তব্যের প্রেক্ষিতে সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম বলেন, ‘‘ধূপগুড়িতে যদি উল্টো ফল হত (পড়ুন বিজেপি জিতত), তা হলে তৃণমূল বলত সিপিএম ভোট কেটে বিজেপিকে জিতিয়ে দিয়েছে। আসলে তৃণমূল বা শুভেন্দু সবাই নাগপুরের (আরএসএস-এর সদর দফতর) লাইনে চলছে। তাই বামপন্থীদের নিশানা করা হচ্ছে। আমাদের লড়াই জারি থাকবে।’’
বস্তুত, ২০২১ সালের বিধানসভা ভোটে ধূপগুড়িতে সিপিএম প্রার্থী পেয়েছিলেন ১৩,১০৭ ভোট। এ বারের উপনির্বাচনে তারা ১৩,৭৫৮ ভোট পেয়েছে। অর্থাৎ আড়াই বছরে সিপিএম ৬৫১টি ভোট বাড়িয়েছে। যে বৃদ্ধি ধর্তব্যের মধ্যে পড়ে না বলেই মনে করেন অনেকে। রাজনৈতিক মহলের অনেকের মতে, আড়াই বছর আগে সিপিএম যখন একই সংখ্যক ভোট পেয়েছিল, তখন বিজেপি জিতেছিল ৪,৩৫৫ ভোটে। এ বারে তৃণমূল জিতেছে ৪,৩০৯ ভোটে। ফলে অঙ্কের দিক থেকে এটা প্রমাণিত হয় না যে, সিপিএমের ভোট কাটার জন্য তৃণমূল সেখানে জয় পেয়েছে। সেই সঙ্গে এ-ও দেখা গিয়েছে, ধূপগুড়িতে বিজেপির ভোট কমে গিয়েছে প্রায় ১০ হাজার। যদিও শুভেন্দুর দাবি, নির্দিষ্ট একটি অংশের ভোট পেয়েছে সিপিএম। যা বিজেপির রাজনৈতিক ‘পুঁজি’।
প্রসঙ্গত, ২০১৯ সালের লোকসভা এবং ২০২১ সালের বিধানসভা ভোটে দেখা গিয়েছিল ‘বামের’ ভোট ‘রামের’ বাক্সে গিয়ে পড়েছে। সাদা চোখে এ-ও দেখা গিয়েছিল, বাম ভোট যতটা ক্ষয়েছে, ততটাই বেড়েছে গেরুয়া শিবিরের ভোট। কিন্তু তার পরবর্তী সময়ে বেশ কিছু নির্বাচনে দেখা গিয়েছে, ভোট বাড়ছে বাম ও কংগ্রেসের। উত্তরবঙ্গে সেই গতি অতীব শ্লথ হলেও দক্ষিণবঙ্গে তা তীব্র। যে কারণে বিজেপিকে প্রান্তিক শক্তিতে পরিণত হতে হচ্ছে বহু জায়গায়। অনেকের মতে, হতে পারে সে কারণেই বাম ভোট ফেরাতে শুভেন্দু নিচুতলার সিপিএম কর্মী-সমর্থকদের মন পেতে চাইছেন।
শুভেন্দু শনিবার এ-ও দাবি করেন, ধূপগুড়িতে আরএসএসের নামে মিথ্যা প্রচারপত্র বিলি করেছে তৃণমূল। যেখানে মহকুমার বিরোধিতা করা হয়েছিল। তা নিয়েও শাসকদলের সমালোচনা করেন বিরোধী দলনেতা।