Mahua Moitra

মহুয়া: শাঁখের করাতে বঙ্গের সিপিএম-কংগ্রেস

সংসদীয় রাজনীতিতে শাসকের বিরুদ্ধে বিরোধীরা পরস্পরের সঙ্গে সমন্বয় করেই থাকে। কিন্তু ময়দানের রাজনীতিতে? সেখানে সিপিএমকে লড়তে হবে তৃণমূলের বিরুদ্ধে।

Advertisement

সন্দীপন চক্রবর্তী

কলকাতা শেষ আপডেট: ১০ ডিসেম্বর ২০২৩ ০৫:৩১
Share:

মহুয়া মৈত্র। —ফাইল চিত্র।

সামনে ‘অন্যায়’ হচ্ছে দেখে তাঁরা নীরব থাকতে পারছেন না। আবার সরব হওয়ার জেরে ভবিষ্যতে কী পরিণাম হবে, তার আন্দাজ করে প্রমাদ গুনতে হচ্ছে!

Advertisement

তৃণমূল কংগ্রেসের সাংসদ মহুয়া মৈত্রের পাশে দাঁড়াতে গিয়ে এই রকমই শাঁখের করাতের মুখে পড়েছেন রাজ্যের সিপিএম ও কংগ্রেস নেতৃত্ব। আদানি গোষ্ঠীর প্রতি ‘অন্যায্য পক্ষপাতিত্বে’র অভিযোগে বিজেপির বিরুদ্ধে এই দুই দল বরাবরই সরব। মহুয়া-কাণ্ড সেই বৃহত্তর প্রতিবাদেরই অঙ্গ হয়ে উঠেছে।

কিন্তু কয়েক মাসের মধ্যেই লোকসভা ভোট। তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পরিষ্কার বার্তা দিয়েছেন, বিজেপি যে ভাবে ‘গণতন্ত্রকে হত্যা’ করেছে, তার বিরুদ্ধে লড়াই জারি রাখতে বহিষ্কৃত সাংসদ মহুয়াকে কৃষ্ণনগর লোকসভা কেন্দ্রে আবার দলের প্রার্থী করবেন। মহুয়ার পাশে দাঁড়িয়ে সুর চড়ানোর পরে কৃষ্ণনগরে আবার তাঁর বিরুদ্ধে প্রার্থী দিয়ে লড়াই কি বিশ্বাসযোগ্যতা পাবে? এই প্রশ্নই বিড়ন্বনায় ফেলছে সিপিএম ও কংগ্রেস শিবিরকে। আর পরিস্থিতির ফায়দা তুলতে আসরে নেমে পড়েছেন শুভেন্দু অধিকারী। অন্য সময়ে বিজেপি ও তৃণমূলের ‘সেটিং’ তত্ত্বে মুখর থাকেন মহম্মদ সেলিম, অধীর চৌধুরীরা। মহুয়া-কাণ্ডে সেই তির ঘুরিয়ে দিয়ে শুভেন্দু বলতে শুরু করেছেন, ‘চোর তৃণমূলের বি টিম’ আসলে সিপিএম ও কংগ্রেসই! বোঝাই যাচ্ছে, ভোট যত কাছে আসবে, শুভেন্দুরা এই আক্রমণের ঝাঁঝ তত বাড়াবেন।

Advertisement

প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি তথা লোকসভায় বৃহত্তম বিরোধী দলের নেতা অধীর গোড়া থেকেই মহুয়ার পক্ষে দাঁড়িয়েছেন। অভিযোগ করেছেন, আদানির বিরুদ্ধে সরব হওয়ায় রাহুল গান্ধীর কণ্ঠরোধের চেষ্টা হয়েছে, মহুয়ার ক্ষেত্রেও তা-ই। সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সেলিম, সাংসদ বিকাশ ভট্টাচার্য বা কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তীর প্রশ্ন, সংসদের যে এথিক্স কমিটি নারদ-কাণ্ডে বিচার না করে বছরের পর বছর ঝুলিয়ে রেখে দিল, তারাই মহুয়াকে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগটুকুও না গিয়ে তাঁর সাংসদ-পদ কেড়ে নিতে মরিয়া হয়ে উঠল কেন? তাঁদের মতে, আদানির স্বার্থরক্ষা করতেই কেন্দ্রের শাসক দল বিজেপির এই তৎপরতা। প্রথম দিকে মহুয়ার নিজের দল তৃণমূল বরং ‘নীরব’ ছিল। কংগ্রেস ও সিপিএম জোর গলায় মহুয়ার পাশে দাঁড়ানোর পরে তৃণমূল ধীরে ধীরে অবস্থান স্পষ্ট করেছে। অধীরের কথায়, ‘‘সতীর্থ এক জন সাংসদের সঙ্গে অন্যায় হচ্ছে বলে এক জন সাংসদ এবং লোকসভায় আমাদের দলের নেতা হিসেবে প্রতিবাদ করেছি। তদন্তে নিরপেক্ষতা ও কোনও পদ্ধতি যে মানা হয়নি, সেই প্রশ্ন তুলেছি। এর সঙ্গে তৃণমূলের চুরি-দুর্নীতিকে সমর্থন করার প্রশ্ন নেই।’’

সংসদীয় রাজনীতিতে শাসকের বিরুদ্ধে বিরোধীরা পরস্পরের সঙ্গে সমন্বয় করেই থাকে। কিন্তু ময়দানের রাজনীতিতে? সেখানে সিপিএমকে লড়তে হবে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। মমতার দলের সঙ্গে জোট না হলে কংগ্রেসকেও তা-ই করতে হবে। সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর এক সদস্যের কথায়, ‘‘মহুয়ার সঙ্গে যা করা হয়েছে, তার পদ্ধতি একেবারেই ঠিক নয়। কিন্তু এর পরে ভোটে গিয়ে কী বলা হবে, তার উত্তর পাওয়া মুশকিল! এই জন্যই আমাদের জেলা নেতৃত্বের একাংশ মহুয়াকে নিয়ে বেশি হইচই করা পছন্দ করছেন না।’’ ওই নেতার মতে, ‘‘পরিস্থিতি যা হল, তাতে মহুয়ার আবার জয় অনেকটাই নিশ্চিত হয়ে গেল বলা যায়। ওই কেন্দ্রে বিজেপি-বিরোধী এবং সংখ্যালঘু ভোট এই অবস্থায় মহুয়ার পক্ষেই যাওয়ার কথা।’’ প্রদেশ কংগ্রেস নেতৃত্বের একাংশও ঘরোয়া আলোচনায় মানছেন, কৃষ্ণনগরে অন্তত তৃণমূলের সঙ্গে কংগ্রেস-সিপিএমকে এক বন্ধনীতে দেখিয়ে উল্টো দিকে ফায়দা নেওয়ার চেষ্টা করবে বিজেপি।

বিড়ম্বনা মেনে সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির এক সদস্যের মন্তব্য, ‘‘বিজেপিকে ছেড়ে দেওয়া যাবে না। আবার তৃণমূলের প্রতিও নরম হওয়ার প্রশ্ন নেই। কিন্তু দোনলা বন্দুক নিলেও গুলি তো দু’দিকে একসঙ্গে যায় না! সমস্যা সেখানেই।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement