রেড রোডের ধর্নায় বৃহস্পতিবার মমতা অভিযোগ তুলেছিলেন, বিজেপি-সিপিএম এক হয়ে গিয়েছে। ফাইল চিত্র।
বাংলায় রাম ও বাম এক হয়ে গিয়েছে। দীর্ঘ দিন ধরেই এই অভিযোগ তুলছিল তৃণমূল। এমনকি, দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মুখেও শোনা গিয়েছে এই অভিযোগ। এ বার তার পাল্টা অভিযোগ তুলল বামেরা। সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিমের অভিযোগ, পঞ্চায়েত ভোটের আগে বিজেপির সঙ্গে হাত মিলিয়েছে তৃণমূল। আরও এক ধাপ এগিয়ে তিনি দাবি করেছেন, মমতার সঙ্গে এ ব্যাপারে ‘সমঝোতা’ হয়েছে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর।
রেড রোডের ধর্নায় বৃহস্পতিবার মমতা অভিযোগ তুলেছিলেন, বিজেপি-সিপিএম এক হয়ে গিয়েছে। তাঁর কথায়, ‘‘মনে রাখবেন, রাম-বাম এক হয়েছে। আর এক হয়ে বলছে সমস্ত কাগজপত্র সরকারি দফতর থেকে হাতে পেয়ে যাচ্ছে তারা। পাবে না কেন? বাম আমলের অফিসারগুলোকে তো তাড়াইনি। ওরাই সাহায্য করছে কাগজগুলো সরাতে।’’ রাজনীতির কারবারিদের মতে, শুক্রবার আলিমুদ্দিন স্ট্রিটের সদর দফতর থেকে তারই পাল্টা দিয়েছেন সেলিম। তিনি বলেছেন, ‘‘উনি ধর্না দিচ্ছেন কেন্দ্রের বিরুদ্ধে। অথচ গাল দিচ্ছেন বামেদের। কই, গৌতম আদানি, মেহুল চোক্সি, নীরব মোদীকে নিয়ে একটি শব্দও তো বললেন না। যেটা নিয়ে বিজেপির বিরুদ্ধে সমস্ত বিরোধী দল সরব হচ্ছে। সে ব্যাপারে কেন ধর্না মঞ্চে কিছুই বললেন না মমতা। এ থেকেই স্পষ্ট ওর অবস্থান। আমি বলব, তার চেয়ে উনি আমদাবাদে যান। আদানিদের হাত ধরেই যান।’’
সেলিমের আরও অভিযোগ, শুধু কেন্দ্রে নয়, রাজ্যেও বিজেপি এবং তৃণমূল হাত মিলিয়েছে। পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে নিজেদের সুবিধার্থে অশান্তি তৈরি করতে চাইছে দু’পক্ষই। সম্প্রতি সাগরদিঘি উপনির্বাচনে বাম সমর্থিত কংগ্রেস প্রার্থী জয়ী হয়েছেন। সে কথা মনে করিয়ে সেলিম বলেন, ‘‘লোকসভা ভোটের আগে আর কোনও ভোটের পরীক্ষা দিতে চাইছে না তৃণমূল এবং বিজেপি দু’পক্ষই। কারণ তা হলে আরও কয়েকটা সাগরদিঘি হতে পারে বলে আশঙ্কা করছে দু’দলই। আমি জানি, বিধানসভায় শুভেন্দু এবং মমতার বৈঠকে ঠিক হয়েছিল তারা ‘আনটেস্টেড’ লোকসভায় যেতে চায়। এমনকি, তার জন্য পঞ্চায়েত ভোটের আগে বাংলায় একটা অশান্তিও তৈরি করতে চাইছে দুই দল।’’
বিজেপি-তৃণমূলের পারষ্পরিক সহযোগিতার আরও একটি উদাহরণ দিয়েছেন সেলিম। তিনি বলেছেন, বাংলার রাজনৈতিক নেতাদের আয়ের সঙ্গতিহীন সম্পত্তি মামলায় সিপিএম, তৃণমূল, বিজেপি নেতাদের নাম ছিল। সেলিমের কথায়, ‘‘আমরা বলেছিলাম তদন্ত হোক। কিন্তু তৃণমূল আর বিজেপি চায়নি। ওরা এক যোগে সুপ্রিম কোর্টে গিয়ে বলে এল তদন্ত যেন না হয়।’’
সেলিমের এই ‘তত্ত্ব’ যদিও মানতে নারাজ তৃণমূল নেতৃত্ব। একই সঙ্গে তাঁদের দাবি, মমতা তাঁর ধর্না মঞ্চে মোদী, আদানিদের নিয়ে কোনও কথা বলেননি, সেলিমের এই দাবিও ঠিক নয়। বরং মমতা তাঁর ধর্না মঞ্চের বক্তৃতায় আদানি, এলআইসি, স্টেট ব্যাঙ্ক প্রসঙ্গ উত্থাপন করেছিলেন। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নাম না করে নন্দলাল বলে কটাক্ষ করে মমতা বলেছিলেন, “আদানির জন্য এলআইসিকে বিক্রি করে দিলে, এর দাম কে দেবে, স্টেট ব্যাঙ্ককেও যে বিকিয়ে দিলে তারই বা দাম কে দেবে!”