ইন্দ্রজিৎ গুপ্তের শতবর্ষ শুরু হচ্ছে এ মাসেই।
সংগঠন কমতে কমতে ঠেকেছে তলানিতে। জাতীয় দলের স্বীকৃতি বিপন্ন। দু’জন সাংসদ শুধু তামিলনাড়ু থেকে। এই বাংলায় বিধায়ক মাত্র এক জন! সঙ্ঘ-বিজেপির দাপটের মুখে এমনই কোণঠাসা অবস্থায় কলকাতায় মিনি প্লেনাম ডাকল সাবেক কমিউনিস্ট পার্টি।
গেরুয়া আধিপত্য বিস্তারের মোকাবিলা করে বাম সংগঠন কী ভাবে তার মুখোমুখি দাঁড়াতে পারে, তার পথ খুঁজতে এই শহরে হবে সিপিআইয়ের জাতীয় পরিষদের বর্ধিত অধিবেশন। তার আগে হবে সমাবেশ। গোটা দেশের নানা রাজ্য থেকে প্রতিনিধিরা যোগ দেবেন, তাই ওই অধিবেশনকে মিনি প্লেনাম বলা হচ্ছে। সিপিআইয়ের পার্টি কংগ্রেস হওয়ার কথা ২০২১ সালে। সে কারণেই এখন পূর্ণাঙ্গ প্লেনাম ডাকা হয়নি। মিনি হলেও এই রাজ্যে পুরনো কমিউনিস্ট পার্টির এমন অধিবেশন শেষ কবে হয়েছে, মনে করতে পারছেন না বাম নেতারাও।
বাংলায় সংগঠনের বেহাল দশার মধ্যে এমন মিনি প্লেনাম ও সমাবেশ করার দায়িত্ব দল নিতে পারবে কি না, রাজ্য সিপিআইয়ের কাছে তা জানতে চেয়েছিলেন দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। প্রাক্তন সাংসদ ও শ্রমিক আন্দোলনের নেতা গুরুদাস দাশগুপ্তের স্মরণ-সভা উপলক্ষে শহরে এসে রাজ্য সিপিআইয়ের সঙ্গে বসেছিলেন দলের সাধারণ সম্পাদক ডি রাজা। রাজ্য পরিষদ জানিয়ে দিয়েছে, তারা এই ‘চ্যালেঞ্জ’ নিতে তৈরি। সিপিআইয়ের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর এক সদস্যের কথায়, ‘‘বাংলায় তৃণমূল যেমন মেরুকরণের রাজনীতিতে মদত দিচ্ছে, তেমনই বড় বিপদ হিসেবে দেখা দিচ্ছে বিজেপি। লোকসভা ভোটের ফলে সেই বিপদ সঙ্কেত আরও স্পষ্ট। এমন পরিস্থিতিতে বাংলার মাটিতে দাঁড়িয়েই আমরা বাম রাজনীতি ও সংগঠনকে সংহত করতে চাই।’’
রাজ্য পরিষদে আলোচনার ভিত্তিতে ঠিক হয়েছে, কলকাতায় রানি রাসমণি অ্যাভিনিউয়ে সিপিআইয়ের কেন্দ্রীয় সমাবেশ হবে আগামী ২ ফেব্রুয়ারি। তার পরে ৩ ও ৪ ফেব্রুয়ারি হবে জাতীয় পরিষদের বর্ধিত অধিবেশন। যার প্রস্তুতি শুরু হচ্ছে এখন থেকেই। ঘটনাচক্রে, এই বছরেই শুরু হচ্ছে সিপিআইয়ের প্রাক্তন সাধারণ সম্পাদক ও প্রাক্তন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ইন্দ্রজিৎ গুপ্তের শতবর্ষ। খড়গপুরে ১৭ নভেম্বর ইন্দ্রজিৎবাবুর শতবর্ষ পূর্তি উপলক্ষে আলোচনায় রাজা নিজেই আসবেন। আমন্ত্রণ করা হচ্ছে সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তীকে। খড়গপুর ও কালিয়াগঞ্জে এই মাসেই বিধানসভা উপনির্বাচন রয়েছে। খড়গপুরে রাজা এবং উত্তর দিনাজপুরে তরুণ নেতা কানহাইয়া কুমারকে একই সময়ে কর্মসূচিতে হাজির করিয়ে ভোটের বার্তাও দিতে চায় সিপিআই।
রাজার মতে, ‘‘বিজেপির আধিপত্যবাদী জমানায় যাবতীয় বিরোধী পরিসর সঙ্কুচিত। কঠিন পরিস্থিতিতে গণতন্ত্র, সংবিধান ও ধর্মনিরপেক্ষতা রক্ষা এবং মানুষের রুটি-রুজির লড়াইয়ে বামপন্থীদের সর্বশক্তি দিয়ে ঝাঁপাতে হবে।’’ সংগঠনে শক্তি সঞ্চয়ের চেষ্টাতেই মিনি প্লেনাম।