ফাইল চিত্র।
এত দিন কেন্দ্র যে প্রতিষেধক দিয়েছে, প্রশিক্ষিত কর্মীদের মাধ্যমে তা যথাযথ ভাবে দেওয়ার ফলে বেশ কয়েক লক্ষ ডোজ় বাঁচাতে পেরেছে রাজ্য। তার সঙ্গে মজুত এবং রবি ও সোমবার মিলিয়ে প্রতিষেধকের যত ডোজ় এসেছে, তাতে আগামী কয়েক দিন দ্বিতীয় ডোজ় ভালভাবে দেওয়া সম্ভব হবে বলেই আশা স্বাস্থ্য দফতরের।
স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, এখনও পর্যন্ত কেন্দ্রের মাধ্যমে প্রায় ১ কোটি ২৩ লক্ষ ডোজ় প্রতিষেধক এসেছে। তার মধ্যে খরচ হয়েছিল প্রায় ১ কোটি ২০ লক্ষ ডোজ়। অর্থাৎ রাজ্যের ভাঁড়ারে ছিল প্রতিষেধকের প্রায় ৩ লক্ষ মতো ডোজ়। স্বাস্থ্য অধিকর্তা অজয় চক্রবর্তী জানান, প্রতিষেধক প্রদানের জন্য সর্বত্র প্রশিক্ষিত কর্মীদের ব্যবহার করা হয়েছিল। তাই প্রতিষেধকের প্রতিটি ভায়াল যথাযথ ভাবে ব্যবহার করা সম্ভব হয়েছে। আর তাতেই প্রায় সাড়ে ৩ লক্ষ ডোজ় বাঁচানো সম্ভব হয়েছিল। স্বাস্থ্য শিবিরের ব্যাখ্যা, প্রতিষেধকের প্রতিটি ভায়াল থেকে ১০টি ডোজ় হয়। কিন্তু তা ঠিক ভাবে ব্যবহার করলে একটি ভায়াল থেকে ১১-১২টিও হতে পারে। সেই ভাবেই ওই লক্ষাধিক ডোজ় বাঁচানো সম্ভব হয়েছে।
অজয়বাবু আরও জানান, দ্বিতীয় ডোজ় দেওয়াতে দেশে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে রাজ্য। এখনও পর্যন্ত প্রায় ৩৫.৫ শতাংশ দ্বিতীয় ডোজ় দেওয়া হয়েছে। প্রথম স্থানে রয়েছে অন্ধ্রপ্রদেশ (৩৬.৪ শতাংশ)। রাজ্যে এখনও পর্যন্ত ৮৮.২৫ লক্ষ প্রথম ডোজ় দেওয়া হয়েছে। তাদের মধ্যে ৩১.৩৭ লক্ষের দ্বিতীয় ডোজ়ও হয়ে গিয়েছে। অজয়বাবু বলেন, ‘‘মোট প্রতিষেধক প্রদানের নিরিখে অন্ধপ্রদেশের থেকে আমাদের রাজ্য এগিয়ে রয়েছে।’’ জানা গিয়েছে, দক্ষিণের ওই রাজ্যে ৫৪.৩৯ লক্ষ প্রথম ডোজ় এবং ১৯.৭৮ লক্ষ দ্বিতীয় ডোজ় দেওয়া হয়েছে।
এ দিন রাজ্যে প্রায় সাড়ে ৭ লক্ষ ডোজ় কোভিশিল্ড প্রতিষেধক এসেছে। তার মধ্যে ৩ লক্ষ ৯৫ হাজার কেন্দ্র পাঠিয়েছে। স্বাস্থ্য দফতর জানিয়েছে, এটি দ্বিতীয় ডোজ়-এ ব্যবহার করা হবে। এ ছাড়াও বাকি সাড়ে ৩ লক্ষ ডোজ় রাজ্য কিনেছে। সেটি ১৮-৪৪ বছরের বয়সীদের প্রথম ডোজ় দেওয়ার ক্ষেত্রে ব্যবহার করার পরিকল্পনা রয়েছে। পাশাপাশি রাজ্যের কেনা কোভ্যাক্সিনের ১ লক্ষ ডোজ় রবিবার এসে পৌঁছেছে। সেটিরও কিছু অংশ দ্বিতীয় ডোজ়ে ব্যবহার করার পরিকল্পনা করেছে স্বাস্থ্য দফতর।
তবে রাজ্যে প্রতিষেধক নিয়ে সমস্যা এখনও চলছে। সোমবার রাজ্যে ১২৮৯টি কেন্দ্রে ১ লক্ষ ৩১ হাজার ৯৭৫ জন প্রতিষেধক নিয়েছেন। এ দিন পর্যন্ত রাজ্যে মোট ১ কোটি ২১ লক্ষ ৬ হাজার ১০০ জন প্রতিষেধক পেয়েছেন। স্বাস্থ্য দফতর দৈনিক প্রতিষেধক দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা বাড়ানোর যেমন চেষ্টা করছে তেমনি সংক্রমণও বাড়ছে।
এ দিন ১৯ হাজার ৪৪৫ জন আক্রান্ত হয়েছেন। মৃত্যু হয়েছে ১৩৪ জনের। গত সাতদিন ধরে মৃতের সংখ্যা ১০০-র উপরেই রয়েছে। এ দিন কলকাতায় ৩৯৪৮, উত্তর ২৪ পরগণাতে ৩৯৭১ জন আক্রান্ত হয়েছেন। এক হাজার জনের উপরে আক্রান্তের তালিকায় রয়েছে হাওড়া (১১৪৭), দক্ষিণ ২৪ পরগণা (১০৭৩), নদিয়া (১০১৬)। পাঁচশো-র উপরে আক্রান্তের তালিকায় রয়েছে হুগলি ৯৫১, পশ্চিম বর্ধমান ৮৮৭, পূর্ব বর্ধমান ৮৫০, পূর্ব মেদিনীপুর ৭২৮, পশ্চিম মেদিনীপুর ৬৫৩, বীরভূম ৭৩২, দার্জিলিং ৬৪৪ জন। এ দিনও স্বাস্থ্য দফতর জানিয়েছে কোভিড রিপোর্ট পজ়িটিভ থাকুক বা নেগেটিভ থাকুক করোনা উপসর্গ থাকা যে কোনও রোগীকে সরকারি বা বেসরকারি হাসপাতালের সারি ওয়ার্ডে ভর্তি করে চিকিৎসা করতে হবে।