প্রতীকী ছবি
এক শহরের সেফ হোমে খাবার নিয়ে অসন্তোষ। অন্য শহরে কোভিড হাসপাতালে ছুরি দিয়ে শিরা কেটে আত্মহত্যার চেষ্টা করলেন এক বৃদ্ধ। উত্তরবঙ্গের দুই জায়গায় দুই অভিযোগের পরে প্রশ্ন উঠে গেল স্বাস্থ্য পরিষেবা এবং নজরদারি নিয়ে।
দার্জিলিং জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, বৃহস্পতিবার গভীর রাতে শিলিগুড়িতে কাওয়াখালির কোভিড হাসপাতালে ভর্তি আশি বছরের এক বৃদ্ধ ছুরি দিয়ে হাতের শিরা কেটে আত্মহত্যা করতে চেষ্টা করেন বলে অভিযোগ। তখনই বিষয়টি স্বাস্থ্যকর্মীদের দুই-এক জনের নজরে পড়লে তারা তাঁকে আটকান। তবে বৃদ্ধ কোথা থেকে ছুরি পেলেন, সেই প্রশ্ন উঠেছে। কেন তিনি আত্মহত্যা করতে গেলেন, উঠেছে সেই প্রশ্নও। হাসপাতালের সুপার সঞ্জিত সিংহের দাবি, ‘‘উনি মানসিক ভাবে অসুস্থ। রাতে স্বাস্থ্যকর্মীদের ঘরে ঢুকে ছুরি নিয়ে নাড়াচাড়া করার সময় কর্মীরা দেখে ফেলেন।’’ নজরদারি এড়িয়ে বৃদ্ধ রাতে কী ভাবে ওয়ার্ড থেকে বার হলেন, সেই প্রশ্নও উঠেছে। ওই কোভিড হাসপাতালের একটি সূত্রে জানা গিয়েছে, রাতের ঘটনার পর বৃদ্ধকে শয্যার সঙ্গে বেঁধে রাখা হয়েছে। যদিও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তা মানতে চায়নি।
এর মধ্যে জলপাইগুড়ির রানিনগরের সেফ হোমে করোনা আক্রান্তকে প্রাতঃরাশে রোগীর জন্য অস্বাস্থ্যকর লুচি, আলু-কচুর ঝোল দেওয়ার অভিযোগও উঠেছে। এই নিয়ে একটি ভিডিয়ো ভাইরাল হয়, যার সত্যতা আনন্দবাজার যাচাই করেনি। ওই ভিডিয়োটি সামাজিক মাধ্যমে শেয়ার করেন সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্রও। ভিডিয়োটি গত মঙ্গলবারের তোলা বলে দাবি। জলপাইগুড়ির বিশ্ববঙ্গ ক্রীড়াঙ্গনের কোভিড হাসপাতালে রোগীদের
রাখার জায়গা না হওয়ায় কিছু রোগীকে রানিনগরের সেফহোমে পাঠানো হয়েছিল। সেখানে যে খাবার দেওয়া হচ্ছে, তা মুখে তোলা যাচ্ছে না বলে অভিযোগ করেছিলেন রোগীদের কয়েক জনের। পাশাপাশি নোংরা পরিবেশ, চিকিৎসক বা চিকিৎসা কর্মী না পাওয়া, কাশির সিরাপের মতো ওষুধ না মেলার মতো অভিযোগও রয়েছে। ভিডিয়োটি তুলে ধরে রাজ্যের স্বাস্থ্য পরিকাঠামো নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন রাজ্যের প্রাক্তন স্বাস্থ্যমন্ত্রী সূর্যকান্ত মিশ্র।
এ দিন রাজ্যের পর্যটনমন্ত্রী গৌতম দেব বলেন, “জলপাইগুড়ির জেলাশাসকের সঙ্গে কথা বলেছি। প্রোটোকল মেনেই রোগীরা যাতে খাবার পান, তা দেখতে বলেছি।’’ সূর্যবাবুর উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘‘আমি ওঁকে বিনয়ের সঙ্গে বলতে চাই, সারা বিশ্বে কোথাও কেউ কোভিড নিয়ে তৈরি ছিল না। সারা রাজ্যে এমন একটা-দুটো অভিযোগ আসতেই পারে। আমরাও সঙ্গে সঙ্গে সেই ক্ষেত্রে ব্যবস্থা নিচ্ছি।’’ করোনা মোকাবিলায় উত্তরবঙ্গের বিশেষ আধিকারিক (ওএসডি) সুশান্ত রায় বলেন, “সূর্যকান্তবাবু নিজেও চিকিৎসক। ওঁকে বলব, আপনি নিজে আসুন, হাসপাতাল ঘুরে দেখুন ভিডিয়ো করুন। তারপরে ফেসবুকে প্রকাশ করুন। যথাযথ খাদ্য তালিকা মেনেই খাবার দেওয়া হচ্ছে।”
রানিনগরের সেই সেফ হোমে এ দিনও ফের লুচি-তরকারি খেতে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ। শুক্রবার দুপুরের পর থেকে জলপাইগুড়ি কোভিড হাসপাতালে পানীয় জলের সরবরাহ ছিল না বলেও অভিযোগ। বিকেলের পরে রোগীরা হাসপাতালের ঘর ছেড়ে বেরিয়ে বিক্ষোভ দেখান। বিক্ষোভের খবর পেয়ে গৌতম দেব এ দিন সন্ধ্যেয় জেলাশাসক অভিষেক তিওয়ারিকে ফোন করে দ্রুত পদক্ষেপের নির্দেশ দেন।