হুগলির দেবানন্দপুর দেবদাস স্বাস্থ্যকেন্দ্রে টিকাকরণ ঘিরে চরম বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়। —নিজস্ব চিত্র।
কোথাও দেড়শো টিকা দেওয়া হবে। কিন্তু লাইনে দাঁড়িয়ে ৫০০ জন। কোথাও বা টিকা নিতে লাইনে দাঁড়াচ্ছেন ভোর ৩টে থেকে। অনেক জায়গায় অর্থের বিনিময়ে লাইন বিক্রির অভিযোগ। অনেকের দাবি, টিকাকরণে অগ্রাধিকার পাচ্ছেন ‘প্রভাবশালী’দের পরিজনেরা। হুগলি, বীরভূম বা উত্তর ২৪ পরগনা— সোমবার রাজ্যের বহু জেলার একাধিক টিকাকরণকেন্দ্রে দেখা গিয়েছে চূড়ান্ত অব্যবস্থা। অনেকে ধৈর্য হারিয়ে ক্ষোভে ফেটে পড়েছেন। অনেকে আবার টিকা ছাড়াই ফিরেছেন বাড়ি। তবে স্বাস্থ্যভবনের মতে, লাইন নিয়ে অব্যবস্থার অভিযোগ জেলা বা পুর প্রশাসনকে স্থানীয় স্তরেই মেটাতে হবে।
সোমবার হুগলির দেবানন্দপুর দেবদাস স্বাস্থ্যকেন্দ্রে টিকাকরণ ঘিরে চরম বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়। অভিযোগ, ১৫০ জনের টিকার ব্যবস্থা থাকলেও লাইনে দাঁড়িয়েছেন ৫০০ জন। টিকার কুপন নিয়ে এলেও তা পাননি। একসঙ্গে প্রায় ৫০০ জন স্বাস্থ্যকেন্দ্রে পৌঁছনোয় কার্যত দিশেহারা সেখানকার কর্মীরা। পরিস্থিতি সামলাতে দেবানন্দপুর পঞ্চায়েতকে খবর দেওয়া হয়। পঞ্চায়েত থেকে প্রতিটি সংসদ এলাকার পাঁচ জন করে একটি তালিকা দিয়ে দেওয়া হয়। তাতেই ক্ষোভে ফেটে পরেন টিকা নিতে ইচ্ছুকরা। তাঁদের দাবি, এর আগেও লাইন দিয়ে টিকা পাননি। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ মোতায়েন করতে হয়। পঞ্চায়েত সদস্য পীযূষ ধর বলেন, ‘‘আধার কার্ড দিয়ে নাম নথিভুক্ত করেছেন ৯,২০০ জন। চাহিদার তুলনায় খুবই কম টিকা আসায় এ সমস্যা হচ্ছে।’’
বোলপুর প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র সকাল থেকেই টিকার জন্য দীর্ঘ লাইন দেখা যায়। —নিজস্ব চিত্র।
হুগলির মতোই প্রায় একই অভিযোগ বোলপুরে। বোলপুর প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র সকাল থেকেই টিকার জন্য দীর্ঘ লাইন দেখা যায়। অনেকে ধৈর্য হারিয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বচসায় জড়িয়ে পড়েন। লাইন নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ তুলেছেন কয়েক জন। টিকা নিতে আসা মৌসুমী চৌধুরীর দাবি, ‘‘চার দিন ধরে লাইন দিয়ে যাচ্ছি। বেলা শেষ হতেই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছেন, আজ আর হবে না। কিন্ত চোখের সামনে দেখছি, লাইনে না দাঁড়িয়ে অনেকই টিকা পেয়ে যাচ্ছেন। টাকা দিয়ে লাইন বিক্রি হচ্ছে বলেই তাঁরা আগে টিকা পাচ্ছেন। প্রতিবাদ করলে আমাদের উপর চড়াও হচ্ছে।’’ যদিও বোলপুরের স্বাস্থ্য আধিকারিক সব্যসাচী রায়ের পাল্টা দাবি, ‘‘স্থানীয় কয়েক জন অসাধু ব্যক্তির এমন কাজেই মানুষ ভোগান্তির স্বীকার হচ্ছে। এতে হাসপাতাল জড়িত নয়। ভবিষ্যতে টিকাকরণের সময় পুলিশ মোতায়েন থাকবে। ’’
বারাসত পুরসভায় অস্থায়ী টিকাকরণকেন্দ্রেও ভোর থেকে লাইনে দাঁড়ানোর পর টিকা না পাওয়ায় অনেকেই বাড়ি ফিরে গিয়েছেন বলে অভিযোগ। তাঁদের দাবি, টিকাকরণ নিয়ে পুরসভার নির্দিষ্ট পরিকল্পনা নেই।
তবে টিকাকরণ নিয়ে অব্যবস্থার অভিযোগকে স্থানীয় স্তরেই মেটাতে হবে বলে মনে করে স্বাস্থ্য ভবন। নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক এক স্বাস্থ্য আধিকারিক বলেন, ‘‘টিকার জন্য লোকজনকে লাইনে অপেক্ষা না করিয়ে টোকেন দিয়ে ছেড়ে দেওয়া যেতে পারে। টিকার লাইন নিয়ে সমস্যা মেটাতে হবে জেলা বা পুর প্রশাসনকেই।’’