আদালতে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে কুলতলিকাণ্ডে ধৃত সাদ্দাম ও মান্নানকে। —নিজস্ব চিত্র।
সাদ্দাম সন্ত্রাসবাদী নন। তিনি এক জন সমাজসেবী। এই মর্মে সওয়াল করে মক্কেলকে জামিন পাইয়ে দেওয়ার যথাসাধ্য চেষ্টা করেছিলেন আইনজীবী। কিন্তু কোনও কথায় কান দিল না আদালত। কুলতলিকাণ্ডের মূল অভিযুক্তকে ১২ দিনের পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দিল বারুইপুর মহকুমা আদালত। তাঁর সঙ্গেই গ্রেফতার হওয়া সিপিএম নেতা মান্নানের পাঁচ দিনের পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছে কোর্ট।
বুধবার রাতে সাদ্দামকে কুলতলির ঝুপড়িঝাড়ার বানীরধল এলাকায় একটি মাছের ভেড়ির আলাঘর থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ। সাদ্দামের সঙ্গে ওই ভেড়ির মালিক মান্নানকেও গ্রেফতার করা হয়। সাদ্দামের বিরুদ্ধে যে প্রতারণাচক্র চালানোর অভিযোগ উঠেছে, তাতে মান্নানও যুক্ত ছিলেন বলে দাবি করেছে পুলিশ। এর পর বৃহস্পতিবার দুপুরে তাঁদের বারুইপুর মহকুমা আদালতে হাজির করানো হয়। দু’জনের ১৪ দিনের পুলিশি হেফাজতের আবেদন করেন সরকারি আইনজীবী। আদালতে তিনি জানান, দু’জনের নামেই জয়নগর ও কুলতলি থানায় একাধিক মামলা রয়েছে। তাঁদের কাছ থেকে এখনও কোনও আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করা না গেলেও পুলিশের দিকে যে বন্দুক দেখানো হয়েছিল গত সোমবারের ঘটনার সময়, তার ভিডিয়ো ফুটেজ রয়েছে বলে আদালতে দাবি করেন সরকারি আইনজীবী।
পাল্টা সাদ্দামের আইনজীবী দাবি করেন, বিষয়টিকে বড় করে দেখানো হচ্ছে। সাদ্দামের কাছে কোনও আগ্নেয়াস্ত্র নেই। ভুল তথ্যের ভিত্তিতে সাদ্দামের বাড়িতে পুলিশ গিয়েছিল। সাদ্দামকে কেন পুলিশ ধরতে গিয়েছে, গ্রামবাসীরা তা-ই জানতে চেয়েছিলেন পুলিশের কাছে। সাদ্দামের আইনজীবী আদালতে বলেন, ‘‘সাদ্দাম একজন সমাজসেবী। সাদ্দামের সঙ্গে থানারও যোগাযোগ রয়েছে। বার বার থানায় যেতেন সাদ্দাম। রক্তদান শিবিরের আয়োজন করতেন। তা হলে কী করে টেররিস্ট হলেন? ১১৩ টেরটিস্ট অ্যাক্ট যে দেওয়া হয়েছে, তা একেবারে যুক্তিহীন। সেই রকম কোনও ঘটনাই ঘটেনি।’’
মান্নানের আইনজীবীও জামিনের আবেদন করে আদালতে জানান, তাঁর মক্কেলের নাম কোথাও নেই। পুলিশের বিরুদ্ধে হামলার অভিযোগও তাঁর নাম ছিল না। মান্নানের আইনজীবী বলেন, ‘‘ভেড়ি থাকতে দেওয়ার জায়গা নয়। আমার মক্কেলের ফিশারির আশপাশে কেউ যদি থাকেন, তাতে আমার মক্কেলের কী করার আছে? আমার মক্কেলকে কেন গ্রেফতার করা হল? মান্নান টেররিস্ট নন। কোনও ভাবেই যুক্ত নন এই কেসে।’’
প্রতারণার অভিযোগের ভিত্তিতে গত সোমবার সাদ্দামের বাড়িতে তল্লাশিতে গিয়ে পুলিশ হামলার মুখে পড়েছিল বলে অভিযোগ। পুলিশের দাবি, তাদের উপর গুলিও চালানো হয়েছিল। পরিবার-প্রতিবেশীদের হামলায় জখমও হয়েছিলেন তিন পুলিশকর্মী। ওই ঘটনার পরে রাবেয়া ও মাসুদা বিবি নামে দুই মহিলাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। বৃহস্পতিবার তাঁদেরও জামিনের আবেদন করা হয়েছিল। তাঁদের দু’জনেরই সন্তান রয়েছে বলে আদালতে সওয়াল করেছিলেন তাঁদের আইনজীবী। কিন্তু তাঁদেরও জামিন মঞ্জুর করেনি আদালত। জেল হেফাজতের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।