রাজ্যে নোভেল করোনার টিকাকরণ শুরু হল। —নিজস্ব চিত্র।
অবশেষে অপেক্ষার অবসান। শনিবার পশ্চিমবঙ্গ-সহ গোটা দেশে নোভেল করোনাভাইরাসের টিকাপ্রদান কর্মসূচি শুরু হল। সকাল সাড়ে ১০টায় ভিডিয়ো কনফারেন্সের মাধ্যমে টিকাকরণের শুভ সূচনা করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তিনি জানান, ইতিহাসে এত বড় টিকাকরণ কর্মসূচি এই প্রথম। তবে টিকাকরণ শুরু হলেও, মাস্ক ব্যবহার এবং দূরত্ব বিধি বজায় রাখায় ঢিলেমি দিলে চলবে না বলে জানান তিনি।
পশ্চিমবঙ্গের মোট ২০৭টি হাসপাতাল এবং স্বাস্থ্যকেন্দ্রকে টিকাকরণের জন্য বেছে নেওয়া হয়েছে। প্রথম দফায় টিকাকরণের জন্য চিকিৎসক, নার্স এবং স্বাস্থ্যকর্মীদেরই অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে। টিকাকরণের জন্য ঢের আগেই তাঁদের নাম নথিভুক্ত করা হয়েছিল। আপাতত ব্রিটিশ-সুইডিশ সংস্থা অ্যাস্ট্রাজেনেকা ও অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির তৈরি কোভিশিল্ড প্রতিষেধকটিই তাঁদের শরীরে প্রয়োগের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
স্বাস্থ্যভবন সূত্রে খবর, তাঁদের তালিকা অনুযায়ী প্রথম দফায় রাজ্যের মোট ৬ লক্ষ স্বাস্থ্যকর্মীকে টিকা দেওয়া হবে। শনিবার কলকাতার ১৯টি হাসপাতাল এবং স্বাস্থ্যকেন্দ্রে টিকাকরণ শুরু হয়েছে। প্রতিটি কেন্দ্রে ১০০ জন করে রোগীকে প্রতিদিন টিকা দেওয়ার লক্ষ্য রাখা হয়েছে। নবান্ন থেকে ভিডিয়ো কনফারেন্সের মাধ্যমে শনিবার টিকাকরণ কর্মসূচি পর্যবেক্ষণ করবেন।
কলকাতার যে যে জায়গায় টিকাকরণ চলছে, সেগুলি হল— এসএসকেএম, কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ, আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ, নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ, ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ, চিত্তরঞ্জন সেবা সদন, স্কুল অব ট্রপিক্যাল মেডিসিন, বিধানচন্দ্র রায় শিশু হাসপাতাল, বেলেঘাটা আইডি, এম আর বাঙুর হাসপাতাল ও বরো ২-এর অধীনে হাতিবাগানে আর্বান প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্র (ইউপিএইচসি)-১১, বরো ৩-এর সিআইটি রোডের ইউপিএইচসি-৩১, বরো ৭-এর ডি সি দে রোডের ইউপিএইচসি-৫৭, বরো ৯-এর চেতলা সেন্ট্রাল রোডের ইউপিএইচসি-৮২, বরো ১১-এর বোড়াল মেন রোডের ইউপিএইচসি-১১১। এ ছাড়াও রয়েছে পাঁচটি বেসরকারি হাসপাতাল— ঢাকুরিয়া আমরি, রবীন্দ্রনাথ টেগোর, অ্যাপোলো, পিয়ারলেস এবং টাটা মেডিক্যাল সেন্টার।
আরও পড়ুন: গুজব ছড়ালে হবে নথিভুক্তি, টিকা-অস্ত্রে আজ শুরু নতুন লড়াই
রাজ্যের তরফে ৭ জন বিশিষ্ট চিকিৎসকের নাম তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। তাঁরাও আজ প্রতিষেধক নেবেন।
এই টিকাকরণ মূলত তিনটি ধাপে হবে। হাসপাতাল বা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে পৌঁছে প্রথমে ‘কোউইন’ অ্যাপে নাম ও পরিচয় নথিভুক্ত করতে হবে সাধারণ মানুষকে। তার পর প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরীক্ষা হবে তাঁদের। সেখান থেকে আলাদা ভাবে ‘অবজারভেশন রুম’-এ বেশ কিছু ক্ষণ রেখে তাঁদের পর্যবেক্ষণ করা হবে। তার পরই শরীরে প্রয়োগ করা হবে কোভিড টিকা। কোভিশিল্ডের দু’টি ডোজ করোনার বিরুদ্ধে কার্যকর বলে প্রমাণিত। তাই প্রথম ডোজ নেওয়ার পর দ্বিতীয় ডোজটিও নেওয়া বাধ্যতামূলক। প্রথম ডোজটি নেওয়ার পর কবে, কোথায় দ্বিতীয় ডোজটি নিতে হবে, সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির মোবাইলে সেই তথ্য চলে যাবে। আর প্রথম ডোজটি যদি কেউ কোভিশিল্ড নেন, দ্বিতীয় ডোজটিও কোভিশিল্ডেরই হতে হবে।
জরুরি ভিত্তিতে টিকাকরণের জন্য কোভিশিল্ড এবং ভারত বায়োটেকের তৈরি কোভ্যাক্সিন প্রতিষেধকই ভারতে নিয়ন্ত্রক সংস্থার ছাড়পত্র পেয়েছে। বাংলায় এখনও পর্যন্ত কোভিশিল্ডেরই টিকা দেওয়া হচ্ছে। ইতিমধ্যে রাজ্যে কোভিশিল্ডের ৬.৮৯ লক্ষ ডোজও এসে পৌঁছে গিয়েছে। কেন্দ্রীয় নির্দেশাবলী মেনে টিকাকরণের জন্য তৈরি প্রতিটি কেন্দ্র। টিকাকরণ কর্মসূচি পর্যবেক্ষণের দায়িত্বে রয়েছেন স্বাস্থ্যকর্তারা। তার জন্য জাতীয় হেল্পলাইন ১০৭৫ চালু করা হয়েছে। ওই নম্বরে যোগাযোগ করলে প্রতিষেধক সম্পর্কে যাবতীয় তথ্য জানা যাবে।
আরও পড়ুন: ২৩শে কি রাজ্যে মোদী, বঙ্গে বদলাচ্ছে কি হাল, জানতে চাইলেন শাহ
কেন্দ্রীয় সরকার জানিয়েছে, টিকাকরণের প্রথম দফায় করোনা হাসপাতালে যাঁরা কাজ করছেন এমন চিকিৎসক এবং স্বাস্থ্যকর্মীদেরই অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। সরকারি ছাড়াও শনিবার বেশ কিছু বেসরকারি হাসপাতালেও টিকাকরণ কর্মসূচি চলবে। দ্বিতীয় ধাপে পুলিশ, হোমগার্ড, দমকল কর্মীদের মতো করোনা যোদ্ধারা প্রতিষেধক পাবেন। প্রশাসনিক স্তরে কর্মরত বিডিও, এসডিও, পঞ্চায়েত সদস্য এবং পুরসভার কর্মীরা প্রতিষেধক পাবেন তৃতীয় ধাপে। চতুর্থ দফায় প্রতিষেধক পাবেন পঞ্চাশোর্ধ্ব এবং পঞ্চাশের নীচে কোমর্বিডিটি থাকা মানুষ। পঞ্চম দফায় সাধারণ মানুষের টিকাকরণের পরিকল্পনা রয়েছে।