দলীয় কর্মসূচিতে দিলীপ। মেদিনীপুরে। নিজস্ব চিত্র
বাড়ি বাড়ি জন-সংযোগ চলছিল। করোনা-কালে তার সঙ্গে রোগ মোকাবিলাকেও জুড়ে দিলেন বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। বিজেপি-র তরফে জীবাণুনাশের উদ্যোগের কথা যেমন জানালেন, তেমনই হোমিওপ্যাথি ওষুধ বিলি করে করোনা সামলানোর টোটকা দিলেন। করোনা ছড়ানোর জন্য তৃণমূল নেতাদের দিকে আঙুলও তোলেন দিলীপ।
শুক্রবার খড়্গপুরে গৃহ-সম্পর্ক অভিযানে বেরিয়েছিলেন দিলীপ। প্রথমে প্রাতর্ভ্রমণে বেরিয়ে সাউথসাইড এলাকায় চা-দোকানে জনসংযোগ সারেন তিনি। পরে গৃহ-সম্পর্ক অভিযানে যান শহরের ভগবানপুরে। শহরে ইতিমধ্যে ২৪জন করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। মৃত্যু হয়েছে ৪জনের। আক্রান্ত হয়েছেন খোদ শহরের প্রাক্তন উপ-পুরপ্রধান তথা পুর-প্রশাসক মণ্ডলীর সদস্য শেখ হানিফ। এই আবহে দিলীপ বলেন, “খড়্গপুর এখন করোনার হাব হয়ে উঠেছে। এখানকার যাঁরা তৃণমূল নেতা তাঁরাই ইচ্ছাকৃত করোনা ছড়িয়েছেন। আমি তাই বলছি তৃণমূলের নেতা, কাউন্সিলর সকলকে বয়কট করুন।”
গত এপ্রিলে নিজামুদ্দিনের ‘তবলিগ-ই-জামাত’ ফেরত ইন্দোনেশীয় মৌলবীদের সঙ্গে শেখ হানিফ ঘুরেছিলেন বলে অভিযোগ উঠেছিল। সেই হানিফ করোনা আক্রান্ত হওয়ায় এ দিন দিলীপ বলেছেন, “নিজামুদ্দিন থেকে আসা মৌলবীদের নিয়ে উপ-পুরপ্রধান শহরে ঘুরেছেন। পুরপ্রধান সর্বত্র গিয়েছেন। এখানকার পুলিশ আধিকারিকেরা তাঁদের সঙ্গে বসে গল্প করেছেন, খেয়েছেন দিনের পর দিন। আর পুরপ্রধান এলাকায় ঘুরে-ঘুরে মানুষকে সংক্রমিত করেছেন।” তাই এ দিন খড়্গপুরের প্রতিটি গলি-মহল্লা, বাড়ি বিজেপির পক্ষ থেকে জীবাণুমুক্ত করা হচ্ছে বলে জানান তিনি। পরে মেদিনীপুর ঘুরে খড়্গপুর গ্রামীণের রূপনারায়ণপুরে এক হোটেলে দলীয় নেতাদের নিয়ে বৈঠক করেন দিলীপ। সন্ধ্যায় খড়্গপুরে ফিরে আয়মায় গৃহ-সম্পর্ক অভিযানে যান।
শহরের বিধায়ক প্রদীপ সরকার পাল্টা বলেন, “করোনা যুদ্ধে আমরা মানুষের সঙ্গে কাঁধ মিলিয়ে লড়াই করেছি। আর দিলীপ ঘোষ ভোটে জিতে কলকাতায় বসে বড়-বড় বিবৃতি দিয়েছেন। এখন একদিন লোক দেখিয়ে জীবাণুমুক্ত করছেন।” এ দিকে, উদ্বেগ বাড়িয়ে হানিফের পরিবার ও পড়শি-সহ ৫ জনের করোনা রিপোর্ট অমীমাংসিত এসেছে। খড়্গপুর মহকুমা হাসপাতালের সুপার কৃষ্ণেন্দু মুখোপাধ্যায় বলেন, “এ বার পৃথক পরীক্ষা হবে।”
শুক্রবার মেদিনীপুরের কেরানিতলায় বিজেপির উদ্যোগে ‘আর্সেনিক অ্যালবাম ৩০’ বিতরণ করা হয়েছে। কেন্দ্রীয় আয়ুষ মন্ত্রক করোনা রোধে এই হোমিওপ্যাথি ওষুধের সাহায্য নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছে। কর্মসূচির সূচনা করে দিলীপ বলেন, ‘‘এটা খেলে শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়বে। এটাই একমাত্র বাঁচার ওষুধ।’’ ‘সকালে ঘুম থেকে উঠে গরম জল খাওয়ার কথাও বলেছেন তিনি।
দিলীপকে আরও বলতে শোনা যায়, ‘‘যাঁদের চা খাওয়ার অভ্যাস আছে তাঁরা চেষ্টা করুন চিনি ছাড়া লিকার চা খাওয়ার। কারণ চিনি যত খাবেন, সেটাও বিষ।’’ তারপরই মেদিনীপুরের সাংসদের কটাক্ষ, ‘‘আসলে দিলীপ ঘোষের কথা খুব তেতো লাগে। দিদিমণির (মুখ্যমন্ত্রী) কথা মিষ্টি লাগে। আমি বলছি, তেতো খান এখন বেঁচে থাকবেন। মিষ্টি খেয়েছেন তো ভগবানই ভরসা!’’
তিনি বলেন, ‘‘মাস্ক পরে থাকতে কষ্ট হচ্ছে। তবে করোনা ঠাকুরের জন্য এই নিয়মটা মানতে হবে।’’ তাঁর আরও দাবি, ‘‘চিনের অসুখ বেশি দিন থাকবে না। ভরসা রাখুন। আমরা চিনকে আটকাব। চিনের ভাইরাসকেও আটকাব।’’