— ছবি সংগৃহীত
কমার কোনও লক্ষণ নেই। বরং প্রতিদিনই চড়চড় করে বেড়ে চলেছে আক্রান্তের সংখ্যা। প্রতিদিন সংক্রমণ বৃদ্ধির হার দেখে চিকিৎসক এবং বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, প্লাবনে জলস্তর যেমন ক্রমশ বাড়ে, তেমনি বঙ্গের সাগরে করোনার ঢেউ ক্রমশ বাড়ছে। এতদিন কিছু মানুষের অসচেতনতার মাসুল এখন গুণতে হচ্ছে।
চিকিৎসক ও সংক্রমণ বিশেষজ্ঞদের এখন সব থেকে বড় চিন্তা দুটি জেলাকে নিয়ে। তা হল কলকাতা (বুধবার আক্রান্ত ৩,৮২১) ও উত্তর ২৪ পরগনা (বুধবার আক্রান্ত ৩,৭৭৮)। ওই দুটি জেলা মিলিয়ে শুধু আক্রান্ত হয়েছেন ৭ হাজার ৫৯৯ জন। যা বুধবারের মোট আক্রান্ত ১৭ হাজার ২০৭-র অর্ধেকের কাছাকাছি। চিকিৎসকেরা বলছেন, ওই দুটি জেলায় প্রতিদিনই সংক্রমণ বাড়ছে। যে হেতু আক্রান্ত বাড়ছে, তাই সঙ্কটজনক রোগীর সংখ্যাও বাড়ছে। তার কারণে প্রতিদিন করোনা আক্রান্ত হয়ে রাজ্যে যত জনের মৃত্যু হচ্ছে তাঁদের বেশির ভাগ ওই দুই জেলার বাসিন্দা। এ দিন রাজ্যে করোনা আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছে ৭৭ জনের। তার মধ্যে ২২ জন কলকাতার ও ১৬ জন উত্তর ২৪ পরগনার বাসিন্দা।
ওই দুই জেলার পাশাপাশি আরও কয়েকটি জেলায় প্রায় প্রতিদিনই আক্রান্তের সংখ্যা থাকছে ৫০০-র উপরে। এ দিনও সেই তালিকায় কলকাতা ও উত্তর ২৪ পরগণা ছাড়াও আরও ৮টি জেলা রয়েছে। যেমন দক্ষিণ ২৪ পরগনায় ৯৮৬, হাওড়ায় ৯৫৫, হুগলিতে ৮৮২, পশ্চিম বর্ধমানে ৮৫০, পূর্ব বর্ধমানে ৫৮৯, বীরভূমে ৭৮২, নদিয়ায় ৬৯০, মালদহে ৫০৭ জন আক্রান্ত হয়েছেন। এছাড়াও অন্যান্য জেলায় কমবেশি অনেকেই আক্রান্ত হয়েছেন। দৈনিক আক্রান্তের সংখ্যা লাফিয়ে বেড়ে যাওয়ার কারণেই বিশেষত কলকাতাকেন্দ্রিক হাসপাতালে শয্যার আকাল দেখা দিয়েছে। ওই সব সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালের উপর কলকাতা, দুই চব্বিশ পরগনার বাসিন্দারা মূলত নির্ভরশীল। পরিস্থিতি সামলাতে প্রতিদিনই কোনও না কোনও নির্দেশিকা জারি করছে স্বাস্থ্য দফতর। কিন্তু তারপরেও কি সমস্যা পুরোপুরি মিটছে?
এক চিকিৎসকের কথায়, "আগুন তো যা লাগার তা লেগে গিয়েছে। এখন তাই আর কিছু করার নেই। এক শ্রেণির দায়িত্বজ্ঞানহীনতাই তো করোনাকে ঘরের দরজায় নিয়ে এসেছে।" আর সেই করোনার থাবা থেকে এ বারে রেহাই মিলছে না শিশুদেরও। তাই এ বার তাদের চিকিৎসার বিষয়ে নির্দেশিকা তৈরির জন্য শিশু চিকিৎসক অপূর্ব ঘোষকে চেয়ারম্যান করে এবং আরও চার জন শিশু চিকিৎসকদের নিয়ে একটি কমিটি গঠন করেছে স্বাস্থ্য দফতর। অবিলম্বে কমিটির পরামর্শ রাজ্যের স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিকর্তার কাছে জমা দিতে বলা হয়েছে।
এ সবের মধ্যে রাজ্যে প্রতিষেধকের অভাব এখনও চলছে। বহু জায়গাতেই দ্বিতীয় ডোজ়ও মিলছে না। দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করার পরে জানা যাচ্ছে প্রতিষেধক নেই। কোথাও আবার নাম লিখিয়ে অপেক্ষা করতে হচ্ছে চার-পাঁচ দিন। তবে এ দিন রাজ্যে কোভিশিল্ডের ৪ লক্ষ ডোজ় এসেছে। স্বাস্থ্য দফতর জানিয়েছে এ দিন রাত পর্যন্ত রাজ্যে প্রতিষেধক নেওয়া গ্রাহকের মোট সংখ্যা ১ কোটি ৬ লক্ষ ২১ হাজার ৩৬৯ জন। এ দিন রাজ্যের ১৩৯৬টি কেন্দ্র থেকে ১ লক্ষ ৭৪ হাজার ৬৫৮ জন প্রতিষেধক নিয়েছেন। তাঁদের মধ্যে একজনের মৃদু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছিল। তাঁকে কিছু ক্ষণ পর্যবেক্ষণের পরে বাড়ি পাঠানো হয়েছে। প্রতিষেধক কেন্দ্রগুলিতে আইনশৃঙ্খলার অবনতি যাতে না হয়, তা নিশ্চিত করতে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য কলকাতা ও রাজ্য পুলিশকে চিঠি দিয়েছেন স্বাস্থ্য সচিব।