গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ
তিন হাজার থেকে তিন কম! বৃহস্পতিবার বঙ্গের স্বাস্থ্য দফতরের বুলেটিন অনুযায়ী, রাজ্যে গত ২৪ ঘণ্টায় ২৯৯৭ জনের দেহে করোনার অস্তিত্ব মিলেছে। এক দিনে মৃত ৫৬। সপ্তাহখানেক আগে ২৯০০-র ঘরে ঢুকেছিল বঙ্গে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা। এর পর এ দিনের পরিসংখ্যানই আক্রান্তের মাপকাঠিতে সর্বোচ্চ।
আক্রান্তের পাশাপাশি এ দিন নমুনা পরীক্ষার ক্ষেত্রেও রেকর্ড। এক ধাক্কায় ২৭ হাজার থেকে বেড়ে তা ৩০ হাজার অতিক্রম করেছে। নমুনা পরীক্ষার মাপকাঠিতে পজ়িটিভিটির হার ৯.৯৭%। বুলেটিন অনুযায়ী, চব্বিশ ঘণ্টায় ৩০,০৩২টি নমুনা পরীক্ষা হয়েছে। এর মধ্যে ১২,৩২০টি নমুনার ফল জানা গিয়েছে র্যাপিড অ্যান্টিজেন টেস্টের মাধ্যমে। আরটি-পিসিআর, ট্রুন্যাট এবং সিবি ন্যাট মিলিয়ে মোট ১৭,৭১২টি নমুনা পরীক্ষা হয়েছে। যদিও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের একাংশের বক্তব্য, করোনা পরীক্ষার ক্ষেত্রে কষ্টিপাথর হিসাবে বিবেচিত আরটি-পিসিআরে নমুনা পরীক্ষার সংখ্যার ক্ষেত্রে খুব একটা বৃদ্ধি ঘটেনি। র্যাপিড অ্যান্টিজেনের বিড়ম্বনা হল উপসর্গযুক্ত ব্যক্তির করোনা পরীক্ষার নেগেটিভ হলে তা নিশ্চিত হওয়ার জন্য আরটি-পিসিআরে পুনরায় পরীক্ষা করতে হবে। স্বাস্থ্য দফতরের এক পদস্থ আধিকারিক জানান, আরটি-পিসিআরে টেস্টের সংখ্যা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে দু’ধরনের প্রতিকূলতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
(গ্রাফের উপর হোভার বা টাচ করলে প্রত্যেক দিনের পরিসংখ্যান দেখতে পাবেন। চলন্ত গড় কী এবং কেন তা লেখার শেষে আলাদা করে বলা হয়েছে।)
ওই আধিকারিক জানান, আরটি-পিসিআর ল্যাবের সংখ্যা বাড়লেও কিটের জোগান নিয়ে এখন ভাবতে হচ্ছে। সংক্রমণের গোড়ায় অগস্টের পর থেকে রাজ্যগুলিকে কিট কিনতে হবে বলে জানিয়েছিল কেন্দ্র। সেই মতো কিট কেনার জন্য দরপত্র ডাকার প্রস্তুতি শুরু হয়েছে বলে খবর। ওই আধিকারিকের কথায়, ‘‘সব ল্যাবে এক ধরনের কিট নেই। ফলে প্রতিটি কিটে সমান সংখ্যক নমুনা পরীক্ষা করার সুযোগ নেই।’’ স্বাস্থ্য দফতরের কোভিড নিয়ন্ত্রণে ল্যাব সংক্রান্ত বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিকদের একাংশ জানান, আরটি-পিসিআর ল্যাবগুলিতে নমুনা পরীক্ষার সংখ্যা কমার আর একটি কারণ এখন এক সঙ্গে অনেকগুলি নমুনা পরীক্ষার (পুল টেস্ট) জন্য বসানো যাচ্ছে না। পুল টেস্টে একটি নমুনা পজ়িটিভ হলে সবক’টি নমুনা পুনরায় পরীক্ষা করতে হয়। এখন যেহেতু পজ়িটিভের সংখ্যা বেশি, তাই পুল টেস্টের সংখ্যা কমেছে।
এরই মধ্যে কেন্দ্রের ‘নজরে’ থাকা রাজ্যের পাঁচ জেলার আক্রান্তের পরিসংখ্যানে খুব একটা হেরফের ঘটেনি। স্বাস্থ্য দফতরের বুলেটিনে এ দিন কলকাতায় আক্রান্তের সংখ্যা ৬৬৬ বলে জানানো হয়েছে। রাজ্যে করোনায় মোট ৫৬ জন মৃতের মধ্যে কলকাতার বাসিন্দা হলেন ১৬ জন। উত্তর ২৪ পরগনায় আক্রান্ত হয়েছেন ৫৮২ জন, মৃত ১২। মৃতের সংখ্যায় হাওড়া এদিন একই সারিতে রয়েছে। সেখানে আক্রান্তের সংখ্যা ২২৯ জন। দক্ষিণ ২৪ পরগনায় আক্রান্ত হয়েছেন ২১৫ জন, মৃত্যু হয়েছে দু’জনের। হুগলি এবং মালদহে আক্রান্তের সংখ্যা যথাক্রমে ১২০ এবং ২০৮ জন।
আরও পড়ুন: নেওয়া হোক শুধু টিউশন ফি, আজ দাবিপত্র মমতাকে
এ দিকে, করোনায় মৃত শ্যামনগরের জনপ্রিয় চিকিৎসক প্রদীপ ভট্টাচার্যের বিলের খরচ কমানোর জন্য স্বাস্থ্য কমিশন-সহ সর্বস্তর থেকে চাপ দেওয়া হয়েছিল। তার পরে সেই বিলে সাড়ে তিন লক্ষ টাকা ছাড় দিয়েছেন মেডিকা কর্তৃপক্ষ।
(চলন্ত গড় বা মুভিং অ্যাভারেজ কী: একটি নির্দিষ্ট দিনে পাঁচ দিনের চলন্ত গড় হল— সেই দিনের সংখ্যা, তার আগের দু’দিনের সংখ্যা এবং তার পরের দু’দিনের সংখ্যার গড়। উদাহরণ হিসেবে— দৈনিক নতুন করোনা সংক্রমণের লেখচিত্রে ১৮ মে-র তথ্য দেখা যেতে পারে। সে দিনের মুভিং অ্যাভারেজ ছিল ৪৯৫৬। কিন্তু সে দিন নতুন আক্রান্তের প্রকৃত সংখ্যা ছিল ৫২৬৯। তার আগের দু’দিন ছিল ৩৯৭০ এবং ৪৯৮৭। পরের দুদিনের সংখ্যা ছিল ৪৯৪৩ এবং ৫৬১১। ১৬ থেকে ২০ মে, এই পাঁচ দিনের গড় হল ৪৯৫৬, যা ১৮ মে-র চলন্ত গড়। ঠিক একই ভাবে ১৯ মে-র চলন্ত গড় হল ১৭ থেকে ২১ মে-র আক্রান্তের সংখ্যার গড়। পরিসংখ্যানবিদ্যায় দীর্ঘমেয়াদি গতিপথ সহজ ভাবে বোঝার জন্য এবং স্বল্পমেয়াদি বড় বিচ্যুতি এড়াতে এই পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়)
(জরুরি ঘোষণা: কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের জন্য কয়েকটি বিশেষ হেল্পলাইন চালু করেছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। এই হেল্পলাইন নম্বরগুলিতে ফোন করলে অ্যাম্বুল্যান্স বা টেলিমেডিসিন সংক্রান্ত পরিষেবা নিয়ে সহায়তা মিলবে। পাশাপাশি থাকছে একটি সার্বিক হেল্পলাইন নম্বরও।
• সার্বিক হেল্পলাইন নম্বর: ১৮০০ ৩১৩ ৪৪৪ ২২২
• টেলিমেডিসিন সংক্রান্ত হেল্পলাইন নম্বর: ০৩৩-২৩৫৭৬০০১
• কোভিড-১৯ আক্রান্তদের অ্যাম্বুল্যান্স পরিষেবা সংক্রান্ত হেল্পলাইন নম্বর: ০৩৩-৪০৯০২৯২৯)