ভিড়াক্কার: লোকাল ট্রেনের যাত্রীদের অনেকেই পরেননি মাস্ক। বারাসত স্টেশনে ট্রেনে ওঠার হুড়োহুড়ি। ছবি: সুদীপ ঘোষ।
রাজ্যে করোনা সংক্রমিতের সংখ্যা ক্রমান্বয়ে বেড়ে চললেও এই মুহূর্তে ট্রেনের সংখ্যা কমানো বা পরিষেবা কাটছাঁট করার কথা ভাবছে না রেল। বরং তাদের বক্তব্য, দূরপাল্লার ট্রেন এবং প্যাসেঞ্জার ট্রেনের সংখ্যা ধাপে ধাপে বাড়িয়ে পরিষেবা স্বাভাবিক করা হবে। একই সঙ্গে যাত্রীরা যাতে কঠোর ভাবে করোনা-বিধি মেনে চলেন, তার জন্য তাঁদের সচেতন করার প্রক্রিয়াও চলবে। পাশাপাশি, মাস্ক না পরার জন্য বিপর্যয় মোকাবিলা আইনে মেট্রোর মতো জরিমানা চালু করা যায় কি না, সে কথাও বিবেচনা করছে পূর্ব রেল।
করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বাড়তে শুরু করার পরে সব ধরনের ট্রেনেই যাত্রী সংখ্যা আবার কমতে শুরু করেছে। তবে, দিনের ব্যস্ত সময়ে বহু লোকাল ট্রেনে দেখা যাচ্ছে লাগামছাড়া ভিড়। অভিযোগ, হাওড়া, শিয়ালদহ ছাড়াও শহরতলির একাধিক ব্যস্ত স্টেশনে দূরত্ব-বিধি মানছেন না যাত্রীরা। অনেকে মাস্কও পরছেন না। নিত্যযাত্রীদের একাংশের আশঙ্কা, এমন বেপরোয়া ভাবে যাতায়াত চলতে থাকলে অচিরেই সংক্রমণে আর রাশ টানা যাবে না। এই পরিপ্রেক্ষিতেই ট্রেনের সংখ্যা না কমানোর পাশাপাশি যাত্রীদের সচেতন করার উপরে জোর দেওয়ার কথা জানিয়েছে পূর্ব এবং দক্ষিণ-পূর্ব রেল। সে জন্য বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্টেশনে রেলরক্ষী বাহিনী এবং সিসি ক্যামেরার মাধ্যমে নজরদারি বাড়ানো হবে বলে জানিয়েছেন রেলের কর্তারা। এক ধাপ এগিয়ে মেট্রোর ধাঁচে বিপর্যয় মোকাবিলা আইনে বিনা মাস্কে থাকা যাত্রীদের জরিমানা করা যায় কি না, তা-ও বিবেচনা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন পূর্ব রেলের জেনারেল ম্যানেজার মনোজ জোশী। তিনি বলেন, ‘‘যাত্রীদের বাধ্যতামূলক ভাবে মাস্ক পরার কথা বলার পাশাপাশি সর্বত্র ভিড় এড়িয়ে চলার পরামর্শ দেওয়া হবে। এ নিয়ে নজরদারিও চলবে। জোর দেওয়া হবে রেক, স্টেশন এবং প্ল্যাটফর্ম পরিচ্ছন্ন রাখার উপরে।’’
প্রাক্-করোনা পরিস্থিতিতে পূর্ব রেলে শহরতলির ট্রেনে দৈনিক প্রায় ৩৪ লক্ষ যাত্রী যাতায়াত করতেন। সেই সংখ্যা এখন খানিকটা কমলেও ২৬ লক্ষের কাছাকাছি। দক্ষিণ-পূর্ব রেলের সহকারী জেনারেল ম্যানেজার অনুপম শর্মা জানিয়েছেন, আগে যেখানে অসংরক্ষিত শ্রেণিতে দৈনিক ৪.১ লক্ষ যাত্রী যাতায়াত করতেন, এখন সেখানে যাত্রী সংখ্যা প্রায় ৩ লক্ষ ৭০ হাজার। দূরপাল্লার এক্সপ্রেস ট্রেনে যেখানে দৈনিক ৭০ হাজার যাত্রী টিকিট সংরক্ষণ করতেন, সেই সংখ্যা এখন ৫৬ হাজারের আশপাশে। পূর্ব রেলে ৯৫ শতাংশ এবং দক্ষিণ-পূর্ব রেলে ১৪৬টি লোকাল ট্রেন চলছে।
সংক্রমণের হার ঊর্ধ্বমুখী হতে শুরু করার পরে ফের ট্রেন বন্ধ হওয়ার আশঙ্কা নিয়ে সম্প্রতি সমাজমাধ্যমে একাধিক ভুয়ো খবর ছড়িয়ে পড়ে। ছড়িয়ে পড়া একাধিক পুরনো ভিডিয়োয় এ-ও দেখা যায়, ট্রেনে জায়গা পেতে হুড়োহুড়ি পড়ে গিয়েছে যাত্রীদের মধ্যে। ওই সব খবরের প্রসঙ্গেই শুক্রবার পূর্ব এবং দক্ষিণ-পূর্ব রেল জানিয়েছে, ট্রেন বন্ধ করা বা পরিষেবা কাটছাঁট করার কোনও পরিকল্পনা আপাতত নেই। রেল মন্ত্রকের তরফেও এমন কোনও নির্দেশ আসেনি। ফলে সব রুটেই আগের মতো পর্যাপ্ত ট্রেন চলবে। দূরপাল্লার মেল ও এক্সপ্রেস ছাড়াও প্যাসেঞ্জার ট্রেনের সংখ্যা ধাপে ধাপে বাড়ানো হবে বলে জানিয়েছে রেল মন্ত্রক।
এ প্রসঙ্গে এক রেলকর্তা বলেন, ‘‘ট্রেনের সংখ্যা কমলে ভিড় আরও বাড়বে। যাত্রীদের মধ্যে অস্থিরতা তৈরি হবে। তাই ট্রেনের সংখ্যা কমানোর কথা ভাবা হচ্ছে না। বরং সামর্থ্য অনুযায়ী ট্রেন বাড়িয়ে পরিষেবা স্বাভাবিক করা হবে। পাশাপাশি, যাত্রীদের করোনা-বিধি মেনে চলতেও সচেতন করা হবে।’’