গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ
রাজ্যে নতুন করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ৩ হাজারের বেশি হলেও উদ্বেগজনক ভাবে বাড়েনি। রবিবারও নতুন আক্রান্তের তুলনায় সুস্থ হয়েছেন বেশি মানুষ। ফলে কমেছে সক্রিয় আক্রান্তের সংখ্যা। এই নিয়ে টানা এক সপ্তাহ সক্রিয় আক্রান্তের সংখ্যা কমায় আশার আলো দেখতে পাচ্ছেন রাজ্যের স্বাস্থ্যকর্তা ও প্রশাসনিক আধিকারিকরা। শনিবারের তুলনায় নতুন আক্রান্ত বেড়েছে ৭ জন। কিন্তু আগের দিনের তুলনায় টেস্ট হয়েছে প্রায় ২০০ জন বেশি মানুষের।
রবিবার সন্ধ্যায় রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের প্রকাশিত বুলেটিন অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় রাজ্যে নতুন করে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ৩ হাজার ১৯ জন। শনিবার এই সংখ্যা ছিল ৩ হাজার ১২। এই নিয়ে রাজ্যে মোট কোভিড আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ১ লক্ষ ৫৯ হাজার ৭৮৫। রাজ্যে এই মুহূর্তে সক্রিয় কোভিড আক্রান্তের সংখ্যা ২৫ হাজার ৬৫৭, যা শনিবারের তুলনায় ৩৩৯ জন কম। গত ২৩ অগস্ট থেকে ধারাবাহিক ভাবে নতুন আক্রান্তের চেয়ে সুস্থ হওয়ার সংখ্যা বেশি হচ্ছে। কমছে সক্রিয় কোভিড রোগীর সংখ্যা।
তবে প্রতিদিন মৃতের সংখ্যা এখনও ৫০-এর উপরেই থাকছে, যা নিয়ে কিছুটা হলেও দুশ্চিন্তা রয়েছে। যদিও শনিবারের তুলনায় মৃতের সংখ্যা ৩ জন কম। রবিবারের বুলেটিন অনুযায়ী রাজ্যে গত ২৪ ঘণ্টায় মৃত্যু হয়েছে ৫০ জনের। এর মধ্যে কলকাতায় মৃত্যু হয়েছে ১৯ জনের। উত্তর ২৪ পরগনায় ৭ জন, পূর্ব মেদিনীপুরে ৪ জন মারা গিয়েছেন। শনিবারের বুলেটিনে ২৪ ঘণ্টায় রাজ্যে মৃত্যুর সংখ্যা ছিল ৫৩ জন এবং শুক্রবার ছিল ৫৬। এখনও পর্যন্ত নোভেল করোনায় আক্রান্ত হয়ে ৩ হাজার ১৭৬ জনের মৃত্যু হয়েছে এ রাজ্যে।
(গ্রাফের উপর হোভার বা টাচ করলে প্রত্যেক দিনের পরিসংখ্যান দেখতে পাবেন।)
আরও পড়ুন: কোভিডে রাশ টানাই অগ্রাধিকার, ১ বছরের জন্য পিছতে পারে এনপিআর
নতুন আক্রান্ত ও মৃত্যুর নিরিখে সুস্থতার হারেও করোনার গ্রাফ নিম্নমুখী হওয়ার আশা জাগছে। রবিবারের বুলেটিন অনুযায়ী গত ২৪ ঘণ্টায় ৩ হাজার ৩০৮ জন কোভিড আক্রান্ত হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়েছেন। শনিবার এই সংখ্যা ছিল ৩ হাজার ৩১২। সব মিলিয়ে রাজ্যে এখনও পর্যন্ত ১ লক্ষ ৩০ হাজার ৯৫৯ জন করোনা রোগী চিকিৎসায় সুস্থ হয়ে উঠেছেন। রাজ্যে সুস্থতার হার পৌঁছে গিয়েছে প্রায় ৮২ শতাংশে। এ দিনের বুলেটিনে সুস্থতার হার ৮১.৯৬ শতাংশ। শনিবার এই হার ছিল ৮১.৪২ শতাংশ।
প্রতি দিন যত জন রোগীর কোভিড টেস্ট করা হচ্ছে এবং তার মধ্যে প্রতি ১০০ জনে যত সংখ্যক রোগীর কোভিড রিপোর্ট পজিটিভ আসছে, তাকেই ‘পজিটিভিটি রেট’ বা সংক্রমণের হার বলা হয়। গত ২৪ ঘণ্টায় রাজ্যে ৪৩ হাজার ৪৩৬ জনের কোভিড টেস্ট হয়েছে, যা এখনও পর্যন্ত সর্বাধিক। শনিবার এই সংখ্যা ছিল ৪৩ হাজার ২৩২। এই সংক্রমণের হারও ক্রমাগত নিম্নমুখী। শনিবার সংক্রমণের হার ছিল ৬.৯৭ শতাংশে নেমেছে। রবিবার সেই হার আরও কমে হয়েছে ৬.৯৫। সব মিলিয়ে রাজ্যে এখনও পর্যন্ত ১৮ লক্ষ ৪৫ হাজার ৩৯৬ জনের করোনা পরীক্ষা হয়েছে।
আরও পড়ুন: গালওয়ানের জল গড়াল সমুদ্রেও, দক্ষিণ চিন সাগরে রণতরী পাঠাল ভারত
সংক্রমণের গোড়া থেকেই রাজ্যের মধ্যে প্রতিদিন সবচেয়ে বেশি মানুষ আক্রান্ত হচ্ছিলেন শহর কলকাতায়। তবে বেশ কিছু দিন ধরেই কলকাতাকে ছাপিয়ে গিয়েছে উত্তর ২৪ পরগনা। শনিবার অবশ্য কলকাতাতেই সংক্রমণ বেশি ছিল। রবিবার ফের উত্তর ২৪ পরগনা শীর্ষে উঠে এসেছে। এ দিনের বুলেটিনে গত ২৪ ঘণ্টায় উত্তর ২৪ পরগনায় নতুন করে কোভিড সংক্রমণ নিশ্চিত হয়েছে ৫৯৪ জনের। কলকাতায় আক্রান্ত হয়েছেন ৪২৮ জন। দক্ষিণ ২৪ পরগনায় ২০২ জন, পশ্চিম মেদিনীপুরে ১৯৪ জন, হাওড়ায় ১৬৭ জন, পশ্চিম বর্ধমানে ১৬৬ জন, পূর্ব মেদিনীপুরে ১৪৬ জন, নদিয়ায় ১৪৪ জন নতুন করে সংক্রমিত হয়েছেন।
(চলন্ত গড় বা মুভিং অ্যাভারেজ কী: একটি নির্দিষ্ট দিনে পাঁচ দিনের চলন্ত গড় হল— সেই দিনের সংখ্যা, তার আগের দু’দিনের সংখ্যা এবং তার পরের দু’দিনের সংখ্যার গড়। উদাহরণ হিসেবে— দৈনিক নতুন করোনা সংক্রমণের লেখচিত্রে ১৮ মে-র তথ্য দেখা যেতে পারে। সে দিনের মুভিং অ্যাভারেজ ছিল ৪৯৫৬। কিন্তু সে দিন নতুন আক্রান্তের প্রকৃত সংখ্যা ছিল ৫২৬৯। তার আগের দু’দিন ছিল ৩৯৭০ এবং ৪৯৮৭। পরের দুদিনের সংখ্যা ছিল ৪৯৪৩ এবং ৫৬১১। ১৬ থেকে ২০ মে, এই পাঁচ দিনের গড় হল ৪৯৫৬, যা ১৮ মে-র চলন্ত গড়। ঠিক একই ভাবে ১৯ মে-র চলন্ত গড় হল ১৭ থেকে ২১ মে-র আক্রান্তের সংখ্যার গড়। পরিসংখ্যানবিদ্যায় দীর্ঘমেয়াদি গতিপথ সহজ ভাবে বোঝার জন্য এবং স্বল্পমেয়াদি বড় বিচ্যুতি এড়াতে এই পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়)
(জরুরি ঘোষণা: কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের জন্য কয়েকটি বিশেষ হেল্পলাইন চালু করেছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। এই হেল্পলাইন নম্বরগুলিতে ফোন করলে অ্যাম্বুল্যান্স বা টেলিমেডিসিন সংক্রান্ত পরিষেবা নিয়ে সহায়তা মিলবে। পাশাপাশি থাকছে একটি সার্বিক হেল্পলাইন নম্বরও।
• সার্বিক হেল্পলাইন নম্বর: ১৮০০ ৩১৩ ৪৪৪ ২২২
• টেলিমেডিসিন সংক্রান্ত হেল্পলাইন নম্বর: ০৩৩-২৩৫৭৬০০১
• কোভিড-১৯ আক্রান্তদের অ্যাম্বুল্যান্স পরিষেবা সংক্রান্ত হেল্পলাইন নম্বর: ০৩৩-৪০৯০২৯২৯)