Maternal Mortality

করোনায় সব নজর, বাড়ল প্রসূতি-মৃত্যু

২০২০-২১ সালে এখনও পর্যন্ত মাতৃমৃত্যুর হার যা, গত বছরের থেকে সেটা ৫-৭% বেশি। রাজ্যের মাতৃমৃত্যু পর্যালোচনা কমিটির প্রধান বিশ্বরঞ্জন শতপথী বলেন, ‘‘চলতি বছর এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ছ’মাসে সংখ্যাটা দাঁড়িয়েছে ৬০২।

Advertisement

পারিজাত বন্দ্যোপাধ্যায়

কলকাতা শেষ আপডেট: ২০ নভেম্বর ২০২০ ০৪:২৩
Share:

প্রতীকী ছবি।

ছ’-সাত মাস যাবৎ প্রশাসন ও স্বাস্থ্য দফতরের নজর মূলত করোনায় আটকে থাকায় ক্যানসার, ডায়াবিটিস, ডায়ালিসিস, সার্জারির মতো অন্যান্য রোগের চিকিৎসা ধাক্কা খাচ্ছিল। তা নিয়ে প্রবল সমালোচনা হলেও পরিস্থিতি বদলায়নি। পুরোপুরি রাশ টানা যায়নি গুরুতর অসুস্থদের রেফারের প্রবণতায়। তার পরিণতিতে চলতি আর্থিক বছরে মাতৃমৃত্যুর হার বেড়ে গিয়েছে। এই নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়ে গিয়েছে রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতর।

Advertisement

গর্ভাবস্থার ২০ সপ্তাহের পর থেকে প্রসবের ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে প্রসূতির মৃত্যু হলে সেটা মাতৃমৃত্যুর পর্যায়ে পড়ে। আধুনিক চিকিৎসা পরিষেবার ক্ষেত্রে গর্ভবতীর বা শিশুর জন্ম দিতে গিয়ে মাতৃমৃত্যুকে লজ্জাজনক ঘটনা হিসেবে গণ্য করা হয়। ২০১৯-২০ অর্থবর্ষে মাতৃমৃত্যু যথেষ্ট বেশি ছিল। ওই সময়ে রাজ্যে মৃত্যু হয় ১১৫০ জন মায়ের। যদিও রাজ্য সরকারের পোর্টালে তথ্য নথিভুক্ত করার কাজ ঠিক ভাবে না-হওয়ায় মাত্র ৪২০টি মাতৃমৃত্যুর কথা সেখানে তোলা হয়েছে। এর মধ্যে ‘নন-হাইরিস্ক ডেথ’ ছিল ৩৫৩টি।

২০২০-২১ সালে এখনও পর্যন্ত মাতৃমৃত্যুর হার যা, গত বছরের থেকে সেটা ৫-৭% বেশি। রাজ্যের মাতৃমৃত্যু পর্যালোচনা কমিটির প্রধান বিশ্বরঞ্জন শতপথী বলেন, ‘‘চলতি বছর এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ছ’মাসে সংখ্যাটা দাঁড়িয়েছে ৬০২। এই হার অব্যাহত থাকলে বছরের শেষে মৃত্যু ১২০০ ছাড়িয়ে যাবে। অর্থাৎ গত বছরের তুলনায় অনেকটা বেশি হবে।’’ তাঁর ব্যাখ্যা, মূলত কোভিড পরিস্থিতিতে আসন্নপ্রসবাদের পরিষেবা দিতে দেরি হওয়াই মৃত্যুর কারণ। রেফার বেশি হয়েছে। উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্রে অ্যান্টিনেটাল চেকআপ বাদ গিয়েছে অনেক জায়গায় কিংবা সেই কাজ হলেও তার গুণগত মান ঠিক ছিল না। এই সব কিছুরই প্রভাব পড়েছে মাতৃমৃত্যুতে। এমন অনেক মা মারা গিয়েছেন, যাঁদের ‘নন-হাইরিস্ক প্রেগন্যান্সি’ ছিল। অর্থাৎ তাঁদের শারীরিক অবস্থা মোটেই জটিল ছিল না এবং তাঁদের প্রাণহানির কথাই নয়।

Advertisement

আরও পড়ুন: গভীর রাতে ফুটপাতে মিলল তরুণীর বস্তাবন্দি দেহ

আরও পড়ুন: কোভিড সন্দেহে আইসোলেশনে, বিনা চিকিৎসায় মৃত্যুর অভিযোগ

রাজ্যের পরিবার কল্যাণ অফিসার অসীম দাস মালাকার জানান, এপ্রিল থেকে জুনের মধ্যে মাতৃমৃত্যু সব চেয়ে বেড়েছিল। কারণ, কোভিডের জন্য ওই সময় প্রচুর আসন্নপ্রসবাকে রেফার হয়। রাস্তায় অনেকে মারা যান। সেই সঙ্গে বাড়িতে প্রসব বেড়ে গিয়েছিল। তাতেও মৃত্যু বেড়েছে।

‘‘এখনও অনেক রিপোর্ট আসা বাকি। যতটুকু এসেছে তার ভিত্তিতে বলতে পারি, গত বছরের তুলনায় চলতি অর্থবর্ষে এ-পর্যন্ত মাতৃমৃত্যুর হার বেশ কিছুটা বেশি। এবং এর কারণ মূলত কোভিড। এই নিয়ে দফায় দফায় জেলাগুলির সঙ্গে আলোচনা চলছে। মালদহ, মুর্শিদাবাদ বা দক্ষিণ ২৪ পরগনার মতো কিছু জেলার পরিস্থিতি বেশি খারাপ। এটা ঠিক করতেই হবে,’’ বললেন স্বাস্থ্য অধিকর্তা অজয় চক্রবর্তী। চলতি বছরে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত রাজ্যে ৬০২ জন প্রসূতি বা মা মারা গেলেও সরকারি পোর্টালে এখনও পর্যন্ত মাত্র ১০১ জনের মৃত্যু নথিভুক্ত হয়েছে। তাঁদের মধ্যে ৭২ জনের তেমন সমস্যা (‘নন-হাইরিস্ক’) ছিল না। বিশ্বরঞ্জনবাবু ও অজয়বাবু জানান, পোর্টালে তথ্য তুলতে কয়েক বছর ধরে গড়িমসি চলছিল। এখন দ্রুত পোর্টাল আপডেট করার কাজ হচ্ছে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement