গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ
গত চার দিন ধরে ৬-এর ঘরেই আটকে ছিল রাজ্যে করোনা সংক্রমণের হার। মঙ্গলবার তা খানিকটা বেড়ে ৭-এর সামান্য উপরে চলে গেল। এ দিনও রাজ্যে দৈনিক করোনা আক্রান্তের সংখ্যা দৈনিক সুস্থ হয়ে ওঠার সংখ্যার থেকে বেশি। তবে আশার কথা, গত বেশ কয়েক দিন ধরেই রাজ্যে সক্রিয় করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ২৩ হাজারের গণ্ডিতেই আটকে রয়েছে।
দিন দশেক ধরেই রাজ্যে দৈনিক তিন হাজারের বেশি সংক্রমণ ঘটছিল। এ দিনও রাজ্যের করোনা চিত্রে সেই একই প্রবণতা বজায় রইল। এ দিন রাতে রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতরের প্রকাশিত বুলেটিন অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে কোভিড আক্রান্ত হয়েছেন ৩ হাজার ২২৭ জন। রবিবারই রাজ্যে মোট করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ২ লক্ষ পেরিয়ে গিয়েছিল। এ দিনের করোনা আক্রান্তের সংখ্যা মিলিয়ে তা হল ২ লক্ষ ৯ হাজার ১৪৬।
করোনাকে হারিয়ে রাজ্যে এখনও পর্যন্ত মোট ১ লক্ষ ৮১ হাজার ১৪২ জন সুস্থ হয়ে উঠেছেন। তার মধ্যে এ দিনই হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়েছেন ২ হাজার ৯১৯ জন। রাজ্যে এখনও পর্যন্ত সক্রিয় করোনা রোগী রয়েছেন ২৩ হাজার ৯৪২ জন, তা অবশ্য গত কয়েক দিনের তুলনায় বেশি। গত কালের সঙ্গে তুলনা করলে সুস্থতার হার এ দিন সামান্য বেড়ে হয়েছে ৮৬.৬১ শতাংশ। গত কাল শতাংশের হিসাবে যা ছিল ৮৬.৫৫।
(গ্রাফের উপর হোভার বা টাচ করলে প্রত্যেক দিনের পরিসংখ্যান দেখতে পাবেন। চলন্ত গড় কী এবং কেন তা লেখার শেষে আলাদা করে বলা হয়েছে।)
আরও পড়ুন: দৈনিক সংক্রমণ নামল ৮৩ হাজারে, মোট মৃত্যু ৮০ হাজার ছাড়াল
আরও পড়ুন: প্রণব-স্মরণে সভা শুভেন্দুর, মুখেই আনলেন না তৃণমূলের নাম
তবে গত কয়েক দিনের তুলনায় এ দিন সংক্রমণের হার কিছুটা ঊর্ধ্বমুখী। স্বাস্থ্য দফতর জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় নিরিখে সংক্রমণের হার ৭.১৪ শতাংশ। প্রতি দিন যত জনের কোভিড টেস্ট করানো হয় এবং তার মধ্যে প্রতি ১০০ জনে যত সংখ্যকের কোভিড রিপোর্ট পজিটিভ আসে, তাকে ‘পজিটিভিটি রেট’ বা সংক্রমণের হার বলা হয়। এই হার যত কম হবে, ততই তা স্বস্তিদায়ক হবে বলেই মত স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের।
কোভিডে দৈনিক মৃত্যুর ঘটনায় রাশ টানা যাচ্ছে না। গত কালে রাজ্য জুড়ে ৫৮ জন সংক্রমিতের মৃত্যু হয়েছিল। এ দিন প্রাণ হারিয়েছেন ৫৯ জন। এখনও পর্যন্ত রাজ্যে কোভিডে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছে ৪ হাজার ৬২ জনের।
সংক্রমণের নিরিখে শুরুর দিকে এগিয়ে ছিল কলকাতা। তবে ইদানীং কালে সেই প্রবণতায় বদল দেখা গিয়েছে। স্বাস্থ্য দফতরের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, কলকাতার থেকে এক দিনে উত্তর ২৪ পরগনায় বেশি সংক্রমণ ঘটেছে। এ দিন ৫১৬ জনের কোভিড রিপোর্ট পজিটিভ এসেছে। কলকাতায় এ দিন করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ৪৮৭। সেই সঙ্গে উদ্বেগ বাড়িয়েছে, পশ্চিম মেদিনীপুর (২৪২), দক্ষিণ ২৪ পরগনা (২০২), হুগলি (১৯৮), পূর্ব মেদিনীপুর (১৩৭), হাওড়া (১৩৪), নদিয়া (১২৪), দার্জিলিং (১১৯), পুরুলিয়া (১১৪) এবং পশ্চিম বর্ধমান (১০৮) জেলার পরিস্থিতি।
এ দিন উত্তর ২৪ পরগনায় মৃত্যু হয়েছে ১৫ জনের। দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে কলকাতা। মহানগরীতে মৃত্যু হয়েছে ১১ জনের। এ ছাড়া হাওড়ায় ৬ এবং আলিপুরদুয়ারে ৪ জনের প্রাণহানি হয়েছে।
(চলন্ত গড় বা মুভিং অ্যাভারেজ কী: একটি নির্দিষ্ট দিনে পাঁচ দিনের চলন্ত গড় হল— সেই দিনের সংখ্যা, তার আগের দু’দিনের সংখ্যা এবং তার পরের দু’দিনের সংখ্যার গড়। উদাহরণ হিসেবে— দৈনিক নতুন করোনা সংক্রমণের লেখচিত্রে ১৮ মে-র তথ্য দেখা যেতে পারে। সে দিনের মুভিং অ্যাভারেজ ছিল ৪৯৫৬। কিন্তু সে দিন নতুন আক্রান্তের প্রকৃত সংখ্যা ছিল ৫২৬৯। তার আগের দু’দিন ছিল ৩৯৭০ এবং ৪৯৮৭। পরের দুদিনের সংখ্যা ছিল ৪৯৪৩ এবং ৫৬১১। ১৬ থেকে ২০ মে, এই পাঁচ দিনের গড় হল ৪৯৫৬, যা ১৮ মে-র চলন্ত গড়। ঠিক একই ভাবে ১৯ মে-র চলন্ত গড় হল ১৭ থেকে ২১ মে-র আক্রান্তের সংখ্যার গড়। পরিসংখ্যানবিদ্যায় দীর্ঘমেয়াদি গতিপথ সহজ ভাবে বোঝার জন্য এবং স্বল্পমেয়াদি বড় বিচ্যুতি এড়াতে এই পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়)
(জরুরি ঘোষণা: কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের জন্য কয়েকটি বিশেষ হেল্পলাইন চালু করেছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। এই হেল্পলাইন নম্বরগুলিতে ফোন করলে অ্যাম্বুল্যান্স বা টেলিমেডিসিন সংক্রান্ত পরিষেবা নিয়ে সহায়তা মিলবে। পাশাপাশি থাকছে একটি সার্বিক হেল্পলাইন নম্বরও।
• সার্বিক হেল্পলাইন নম্বর: ১৮০০ ৩১৩ ৪৪৪ ২২২
• টেলিমেডিসিন সংক্রান্ত হেল্পলাইন নম্বর: ০৩৩-২৩৫৭৬০০১
• কোভিড-১৯ আক্রান্তদের অ্যাম্বুল্যান্স পরিষেবা সংক্রান্ত হেল্পলাইন নম্বর: ০৩৩-৪০৯০২৯২)