নিজামউদ্দিন-যোগে কত জন তা চিন্তায় ফেলেছে প্রশাসনকে। ছবি: পিটিআই।
নিজামউদ্দিনের ধর্মীয় সভায় যাঁরা যোগ দিয়েছিলেন, তাঁদের মধ্যে অনেকেই এ রাজ্যে ফিরেছেন। নবান্ন সূত্রে জানানো হয়েছে, তাঁদের প্রায় সকলকেই চিহ্নিত করে পাঠানো হয়েছে কোয়রান্টিনে। শুরু হয়েছে স্বাস্থ্য পরীক্ষা। কিন্তু, রাজ্যে ঢোকার পর থেকে তাঁরা একের পর এক ধর্মীয় জমায়েতে যোগ দিয়েছেন। তাঁদের সংস্পর্শে এসেছেন বহু মানুষ। এ রাজ্যে আসার পর থেকে ওই ধর্মপ্রচারকদের এই ভ্রমণ-সূচি স্বাস্থ্যকর্তাদের চিন্তা বাড়িয়েছে।
বুধবার রাতেই যেমন পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা প্রশাসন খড়্গপুর থেকে নিজামউদ্দিনের জামাতে অংশ নেওয়া ৯ জনকে চিহ্নিত করে নিউটাউনের কোয়রান্টিন সেন্টারে নিয়ে এসেছে। এই ন’জনের মধ্যে ৭ জন মালয়েশিয়ার নাগরিক। বাকি ২ জন ভারতীয় দোভাষী। এঁদের সকলের গত কয়েক দিনের ভ্রমণ বৃত্তান্ত কিন্তু চিন্তায় ফেলেছে স্বাস্থ্য দফতরকে। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা প্রশাসন প্রাথমিক ভাবে জানতে পেরেছে, গত ১১ মার্চ তাঁরা প্রথমে পৌঁছন দিল্লির নিজামউদ্দিনে। ১৫ মার্চ পর্যন্ত ছিলেন সেখানকার বাংলেওয়ালে মরকজে। দু’দিন পর ১৭ মার্চ পূর্বা এক্সপ্রেসে দিল্লি থেকে তাঁরা এসে পৌঁছন এ রাজ্যে। এরপর যান খড়্গপুরে। ওই ৯ জন খড়্গপুরে আসার পর প্রথমে উঠেছিলেন স্থানীয় বায়তুল আমান মসজিদে। সেখানে ছিলেন ১৯ মার্চ পর্যন্ত। এর পর ২২ তারিখ পর্যন্ত ছিলেন খড়্গপুর শহরেরই বিলাল মসজিদে। সেখান থেকে তাঁরা চলে যান ঈদগাহ মসজিদে। ২৬ মার্চ তাঁরা ঈদগাহ মসজিদ থেকে তাঁরা যান সাতকুঁই মসজিদে। বুধবার রাতে সেখান থেকেই তাঁদের পাঠানো হয় নিউটাউনের হজ হাউসের কোয়রান্টিন সেন্টারে।
শুধু এই ৯ জনই নন, মঙ্গলবার থেকে পর্যায়ক্রমে যাঁদেরই চিহ্নিত করে কলকাতায় কোয়রান্টিনে নিয়ে আসা হয়েছে, তাঁদের প্রত্যেকের ভ্রমণ বৃত্তান্ত কম বেশি এ রকমই। মঙ্গলবার রাতে এবং বুধবার কলকাতার বন্দর এলাকা এবং মধ্য কলকাতা থেকে যে জামাতিদের চিহ্নিত করা হয়েছে, তাঁদের মধ্যেও রয়েছেন বাংলাদেশ, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, তাইল্যান্ডের বাসিন্দারা। এঁরা প্রত্যেকেই কলকাতায় এসেছিলেন ধর্মপ্রচারের জন্য এবং বিভিন্ন মসজিদে ঘুরে ঘুরে তাঁরা থেকেছেন। একইসঙ্গে আসানসোলের কয়েকটি মসজিদ থেকেও প্রায় ৩০ জন ধর্মপ্রচারককে পাঠানো হয়েছে সেখানে।
আরও পড়ুন: রাজ্যে সব মৃত্যু করোনায় নয়: মুখ্যমন্ত্রী
নিজামউদ্দিনের ধর্মীয় সভায় যোগ দিয়ে রাজ্যে ফেরা প্রায় সকলকেই চিহ্নিত করে পাঠানো হচ্ছে কোয়রান্টিনে। ছবি: পিটিআই।
বিধাননগর পুলিশ সূত্রে খবর, এখনও পর্যন্ত নিউটাউনের হজহাউসে কোয়রান্টিনে রাখা হয়েছে ২১৫ জনকে। তার মধ্যে নিজামউদ্দিন থেকে আসা ধর্মপ্রচারক এবং সেখানকার অংশগ্রহণকারীরা যেমন রয়েছেন, তেমনই রয়েছেন যাঁরা এই ক’দিনে ওই ধর্মপ্রচারকদের সংস্পর্শে এসেছেন। এখনও কয়েক জনের খোঁজ চলছে উত্তর ২৪ পরগনার দত্তপুকুর, দক্ষিণ ২৪ পরগনার মগরাহাটে। বৃহস্পতিবার এক স্বাস্থ্যকর্তা বলেন, ‘‘এঁদের প্রায় সকলেই এ রাজ্যে এসে পৌঁছন ১৯ বা ২০ মার্চ। তার পর থেকে বিভিন্ন ধর্মীয় সভায় যোগ দিয়েছেন। সেই সভাগুলোতে অনেকেই এই ধর্মপ্রচারকদের খুব কাছাকাছি এসেছেন। ফলে ঠিক কত জন এই ধর্মপ্রচারকদের সংস্পর্শে এসেছেন তা সুনির্দিষ্ট ভাবে বলা অসম্ভব।”
আরও পড়ুন: বাড়িতে নেই জায়গা, নৌকায় ‘হোম কোয়রান্টিন’ বৃদ্ধের
এখনও পর্যন্ত ওই ধর্মপ্রচারকেরা যে সব মসজিদে থেকেছেন, সেখানকার বাসিন্দাদের কোয়রান্টিনে নিয়ে আসা হচ্ছে। বাকিদের চিহ্নিত করা আদতে সম্ভব কি না তা নিয়ে সংশয়ে রয়েছে পুলিশ এবং স্বাস্থ্য দফতর। অন্য দিকে, নিজামউদ্দিনে যোগদানকারীদের খোঁজ করতে গিয়ে জানা গিয়েছে, কালিয়াচক এলাকার ১০ জন প্রৌঢ়-প্রৌঢ়া জামাতে যোগ দিতে দিল্লি গিয়েছিলেন। ১৫ মার্চ পর্যন্ত তাঁরা নিজামউদ্দিন মরকজে ছিলেন। তার পর তাঁরা এ রাজ্যে না ফিরে অন্য রাজ্যে গিয়েছেন ধর্মপ্রচারের কাজে।
এই তথ্য ফের চিন্তায় ফেলেছে রাজ্যের স্বাস্থ্যকর্তাদের। এর অর্থ অন্য রাজ্যের ধর্মপ্রচারকরাও নিজের রাজ্যে না ফিরে এ রাজ্যে এসে থাকতে পারেন। কয়েকটি জেলার পুলিশ সুপাররা জানিয়েছেন, তাঁরা ধর্মীয় নেতা এবং সংগঠনগুলির সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন। নিজামউদ্দিনে কেউ যোগ দিয়ে থাকলে প্রশাসনকে তা জানানোর অনুরোধও করা হচ্ছে।
(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)