সাধারণ হাসপাতালে বদলে গেল বাঁকুড়ার কোভিড হাসপাতাল। ফাইল চিত্র।
গত এক মাস ধরে মিলছিল না করোনা রোগী। অগত্যা কোভিড-১৯ আক্রান্তদের চিকিৎসার পরিকাঠামো সাজিয়ে রেখে কার্যত কর্মহীন দিন কাটাচ্ছিলেন বাঁকুড়ার একমাত্র করোনা হাসপাতালের চিকিৎসক থেকে চিকিৎসা কর্মীরা। এ বার সেই কোভিড হাসপাতালকেই সাধারণ অসুখের চিকিৎসার জন্য খুলে দিল স্বাস্থ্য দফতর। আপাতত ওই হাসপাতালে আর কোনও করোনা রোগী ভর্তি করা যাবে না।
জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, আগামী দিনে করোনাভাইরাস সংক্রমণের বাড়বাড়ন্ত হলে মাত্র তিন দিনের মধ্যে যাতে ফের ওই হাসপাতালে চিকিৎসা শুরু করা যায় তার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। হাসপাতাল এবং স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, নিউ নর্মাল পর্যায়ে চলতি বছরের মাঝামাঝি থেকে ভর্তির জন্য এই হাসপাতালে করোনা রোগীর সংখ্যা কমতে শুরু করে। অক্টোবর মাসে পুজোর সময় এক ধাক্কায় ভর্তি থাকা রোগীর সংখ্যা অনেকটাই নেমে যায়। নভেম্বরে সংখ্যা আরও কিছুটা কমে ডিসেম্বরের গোড়ায় তা শূন্যে পৌঁছায়।
এর পর স্বাস্থ্য দফতর ওই বিশাল চিকিৎসা পরিকাঠামো অযথা ফেলে না রেখে কোভিড হাসপাতালকে সাধারণ সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল হিসাবে ব্যবহারের জন্য নির্দেশ দেয়। সেই নির্দেশ মোতাবেক সোমবার থেকে ওন্দা সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে ইনডোর ও আউটডোর দু’টি ক্ষেত্রেই সাধারণ রোগের চিকিৎসা শুরু হয়েছে। ওন্দা সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালের সহকারী সুপার সৌরভ দাস সোমবার বলেন, “ আজ থেকে আউটডোরে সমস্ত বিভাগে চিকিৎসকরা সাধারণ রোগের চিকিৎসা শুরু করেছেন । আজ প্রথম দিন কিছু রোগী হাসপাতালে এসে চিকিৎসা পরিষেবা গ্রহণ করেছেন। আমাদের আশা, দ্রুত এই হাসপাতাল তার নিজস্ব ছন্দে ফিরবে।’’
২০২০ সালের গোড়ায় করোনার বাড়বাড়ন্তে বাঁকুড়া জেলায় করোনা আক্রান্তদের চিকিৎসার জন্য পৃথক একটি হাসপাতালের প্রয়োজন হয়ে পড়ে। ওন্দা সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালের অন্যান্য রোগের চিকিৎসা বন্ধ করে ওই হাসপাতালকে কোভিড হাসপাতাল হিসাবে ঘোষণা করে স্বাস্থ্য দফতর। সে সময় যুদ্ধকালীন তৎপরতায় ওন্দা সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে করোনা চিকিৎসার যাবতীয় পরিকাঠামো গড়ে তোলে স্বাস্থ্য দফতর। করোনাভাইরাসে সংক্রমিতদের চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে সিসিইউ-সহ মোট ২৫০টি বেড বরাদ্দ করা হয়। পরিকাঠামো তৈরির পর ২০২০ সালের মে মাস থেকে ওন্দা কোভিড হাসপাতালে করোনা আক্রান্তদের ভর্তি শুরু হয়।
গত ২০ মাসেরও বেশি সময় ধরে ওই হাসপাতালের নার্স, চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে করোনা আক্রান্তদের চিকিৎসা পরিষেবা দিয়েছেন। হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, এই সময়কালের মধ্যে প্রায় ৫,০০০ করোনা আক্রান্ত এই হাসপাতালে চিকিৎসা পরিষেবা পেয়েছেন। শুধু বাঁকুড়া জেলা নয়া পার্শ্ববর্তী ঝাড়গ্রাম, পুরুলিয়া এবং পশ্চিম মেদিনীপুরের বহু করোনা আক্রান্ত রোগী এই কোভিড হাসপাতালে চিকিৎসা পরিষেবা পেয়েছেন । সেই হাসপাতালই এ বার বদলে গেল সাধারণ হাসপাতালে।